বাঁশিতে সুরের মূর্ছনা। যেন সবার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। সবুজ ছায়ায় ঘেরা গ্রামীণ জনপদের আড্ডা বা অনুষ্ঠানে বাঁশিতে সুর তোলেন উজ্জ্বল কুমার সরকার। ২৫ বছর বয়সী এ তরুণ একজন বাঁশিপ্রেমিক। শখের বসে শিখেছেন বাঁশি বাজানো। আর বর্তমানে বাঁশির সুরেই তাঁর জীবন চলে।
বাঁশিপ্রেমিক উজ্জ্বলের বাড়ি বগুড়া জেলার শেরপুর উপজেলার চৌবাড়িয়া গ্রামে। বাবা সুভাষ সরকার একজন দরিদ্র কৃষক। পরিবারের আর্থিক অসংগতিতে অভাব মাথায় নিয়েই যেন জন্ম নিয়েছেন উজ্জ্বল। দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়ার সুযোগ হয়নি তাঁর। পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতার জন্য কৈশোর থেকেই বিভিন্ন কাজে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। কিন্তু পরিবারের দারিদ্র্য ঘোচেনি।
ছোট থেকেই বাঁশির প্রতি দুর্বলতা উজ্জ্বল কুমারের। কেউ বাঁশি বাজালে মনোযোগ দিয়ে শুনতেন। প্রতিটি ক্ষণে যেন তাঁর হৃদয়ে বেজে ওঠে বাঁশি। বেড়ে ওঠার পর থেকেই বাঁশি বাজানোর চেষ্টা চালান তিনি। একপর্যায়ে গ্রামের ওস্তাদ আমিন আলীর কাছে বাঁশি বাজানো শেখেন উজ্জ্বল।
শখের বসে শেখা বাঁশি ঘিরেই এখন তাঁর জীবন। পাড়ার আড্ডায়, চায়ের দোকানে, বিয়ে বাড়ি বা যেকোনো অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজান উজ্জ্বল কুমার। এতে খুশি হয়ে অনেকেই তাঁকে আর্থিক সহযোগিতা করেন। বগুড়া জেলার শেরপুর, ধুনটসহ বিভিন্ন উপজেলায় বাঁশি বাজান তিনি। বিশেষ করে গ্রামীণ অনুষ্ঠানগুলোতে চোখে পড়ে তাঁকে। এ ছাড়া পাড়ার সংগীত দলের হয়েও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বাঁশি বাজান তিনি। এ জন্য কিছু পারিশ্রমিক মেলে।
অন্য পেশায় জীবিকা নির্বাহ করতে গেলে বংশীবাদক হিসেবে কদর থাকে না। এ জন্য বাঁশিকেই বেছে নেন জীবিকা হিসেবে। বাঁশি বাজানোর পাশাপাশি এক বছর ধরে উজ্জ্বল কুমার গ্রামীণ মেলা ও হাটবাজারে বাঁশি বিক্রি করেন। ১৫, ২৫ ও ৩০ টাকা দামের তিন ধরনের বাঁশি মেলে তাঁর ভ্রাম্যমাণ দোকানে। সম্প্রতি ধুনট পৌর এলাকার সরকারপাড়া এলাকার বউমেলায় কথা হয় উজ্জ্বল কুমারের সঙ্গে। কথায় কথায় জিজ্ঞেস করি, বাঁশি বিক্রি করে মাসে আপনার রোজগার কত? উজ্জ্বল বলেন, ‘তিন-চার হাজার টাকা রোজগার হয়।’ এই টাকাতেই মা-বাবা ও স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে চলছে উজ্জ্বলের সংসার।
উজ্জ্বলের ভ্রাম্যমাণ বাঁশির দোকানে ভিড় করেন ক্রেতারা। বাঁশিতে সুর তোলার চেষ্টা করেন তাঁরা। কসহযোগিতা করেন উজ্জ্বল। আবার ক্রেতাশূন্য দোকানে বসে বাঁশিতে ঠোঁট রাখেন তিনি। ক্রেতা টানতে বাঁশিতে সুর তোলেন। তাঁর বাঁশির সুর বাতাসে ভেসে মুখরিত করে চারপাশ।