গ্রীষ্মকালে গরম পড়বে—এটাই স্বাভাবিক আর শীতকালে শীত। তবে এই দুই ঋতুতেই একটা মিল রয়েছে; সেটা হলো, এই দুই সময়েই ‘ঠান্ডা’ লাগার প্রকোপ কিছুটা বেড়ে যায়। যদিও এই দুই ধরনের ঠান্ডা দুই রকম, কিন্তু ঠান্ডা তো আসলে ঠান্ডাই।
গ্রীষ্মকালে আমাদের দেশে গরমের সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতাও একটা বড় ভূমিকা রাখে ঠান্ডা লাগার জন্য। গরমে আমাদের শরীরে যে ঘাম হয়, বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকার কারণে সেই ঘাম দেরিতে শুকায়। যদি সেই ঘাম আমাদের শরীরেই বারবার শুকায় বা ঘামে ভেজা জামাকাপড় বেশিক্ষণ গায়ে থাকে, তাহলেই ঠান্ডা লেগে যাওয়ার ভয় থাকে।
গরমে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার হাত থেকে বাঁচার জন্য কিছু পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:
•অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম না করা (বিশেষ করে দুপুরবেলা)।
•শরীর থেকে বেরিয়ে যাওয়া পানি এবং লবণের ঘাটতি পূরণের জন্য বেশি বেশি পানি এবং পানীয় পান করা।
•সরাসরি সূর্যালোক পরিহার করা।
•ঢিলেঢালা পোশাক পরা।
•ভারী খাবার (যেমন—বিরিয়ানি) এড়িয়ে চলা।
•ফল বা ফলের রস পান করা (যেমন—লেবুর শরবত)।
এরপরও যদি ঠান্ডা লেগেই যায়, তবে প্রথমেই বুঝতে হবে এটি কি অ্যালার্জি-জাতীয়, না জীবাণুঘটিত (যেমন—ভাইরাস)।
রোগ হিসেবে ‘ঠান্ডা’ জটিল কিছু না হলেও খুবই বিরক্তিকর। বারবার নাক মোছা, মিটিংয়ে সবার সামনে হাঁচি-কাশি দেওয়া, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মনঃসংযোগে ব্যাঘাত ঘটা ইত্যাদি অন্যদের কাছে তো বটেই, নিজের কাছেও অস্বস্তিকর।
‘ঠান্ডা’ কত দিন থাকবে বা তার তীব্রতা কত হবে, তা নির্ভর করে প্রত্যেক মানুষের রোগ প্রতিরোধক্ষমতার ওপর। শিশুদের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা আর পূর্ণ বয়স্ক মানুষের ক্ষমতা এক নয়। সাধারণত শিশু, বয়স্ক এবং অসুস্থ ব্যক্তিরা ঝুঁকিতে থাকে বেশি।
দ্রুত আরোগ্য এবং স্বস্তি লাভের জন্য নিম্নোক্ত পদক্ষেপগুলো নিতে পারেন:
•নিয়মিত হাত ধোয়া—হাতের মাধ্যমেই রোগজীবাণু ছড়ায় বেশি। তাই হাত নিয়মিত সাবান-পানি দিয়ে ধোয়া জরুরি।
পানি এবং পানীয় পান করা—প্রচুর পরিমাণে পানির পাশাপাশি কমলা বা মাল্টার রস, ডাবের পানি, লেবুর শরবত ইত্যাদি খেলে শরীরে পানির সঙ্গে সঙ্গে লবণের ঘাটতিও পূরণ হয়।
•বিশ্রাম নেওয়া—পরিমিত বিশ্রাম শুধু ঠান্ডা নয়, শরীর সুস্থ রাখতেও জরুরি।
ক্ষতিকর অভ্যাস পরিত্যাগ—ধূমপান, গুল, জর্দা, মদ্যপান ইত্যাদি অভ্যাস বাদ দিতে হবে।
•উপসর্গসমূহের চিকিৎসা—ঠান্ডার কোনো কোনো উপসর্গের জন্য কিছু ওষুধ আমরা অবশ্য নিজেরাই অনেক সময় ব্যবহার করে থাকি। যেমন, প্যারাসিটামল, নাকের সাধারণ ড্রপ ইত্যাদি। এদের বলে ‘ওটিসি’ অর্থাৎ যে ওষুধ চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র ছাড়াই কেনা যায়। এ ছাড়া কাশির জন্য কফ সিরাপ বা লজেন্স উপকারী। তবে যেকোনো ওষুধ ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। কারণ, একই ওষুধ ব্যক্তির বয়স এবং শারীরিক অবস্থাভেদে ভিন্ন ভিন্ন পরিমাণের (ডোজ) হতে পারে। সুতরাং ওষুধের ক্ষতিকর প্রভাবের হাত থেকে বাঁচতে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা অনুচিত।
অ্যান্টিবায়োটিক—যে ধরনের ঠান্ডাই আপনার লাগুক, কোনো ক্ষেত্রেই কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিকের কোনো কার্যকর ভূমিকা নেই। তবে চিকিৎসকেরা মাঝে মাঝে দ্বিতীয় কোনো সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য অ্যান্টিবায়োটিক দিতেও পারেন। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে আপনার রোগ ও তার চিকিৎসাব্যবস্থা সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে নিন।
মনে রাখবেন, আপনার শরীর জীবাণু বা অ্যালার্জির বিরুদ্ধে নিজেই যুদ্ধ করবে, তবে তাকে পর্যাপ্ত বিশ্রাম, উপসর্গ অনুযায়ী ব্যবস্থাপত্র এবং কিছুটা সময় দিতে হবে।