ম্যাগনেসিয়াম একটি রাসায়নিক মৌল যার রাসায়নিক চিহ্ন Mg এবং এর পারমাণবিক সংখ্যা ১২। এটি একটি চকচকে ধূসর বর্ণের ধাতু যা পর্যায় সারণির দ্বিতীয় শ্রেণীর বাকি ৫ টি ( গ্রুপ ২, বা মৃৎক্ষার ধাতু) মৌলের সাথে বাহ্যিক সামঞ্জস্যপূর্ণ। ২য় শ্রেণীর সকল মৌলগুলোর শেষ পরমাণু কক্ষে একই রকম ইলেক্ট্রনীয় বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান এবং মৌলগুলি অনুরূপ স্ফটিক গঠন করে।
মহাজগতে মৌলের প্রাচুর্যের দিক বিচারে ম্যাগনেসিয়াম নবম স্থানে রয়েছে। এটা উৎপন্ন হয় বিশাল এবং পুরানো তারকায় ২টি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস ও একটি কার্বন নিউক্লিয়াসের সাথে অনুক্রমিকভাবে যুক্ত হয়ে। যখন এসব তারকা অতিনবতারা বা সুপারনোভা হিসেবে বিষ্ফোরিত হয়, এতে বিপুল পরিমানে ম্যাগনেসিয়াম মহাশূন্যে ছড়িয়ে পড়ে যা পরবর্তীতে পুনরায় নতুন তারকা সৃষ্টিতে ব্যবহৃত হতে পারে। পৃথিবীর ভূত্বকের উপাদানের প্রাচুর্যের দিক থেকে অষ্টম মৌল এবং লোহা, অক্সিজেন এবং সিলিকনের পর এটা চতুর্থতম সুলভ উপাদান যা পৃথিবীর ১৩% ভর এবং আবরনের বিশাল অংশ সৃষ্টি করে। সোডিয়াম এবং ক্লোরিনের পর সমুদ্রজলে সবচেয়ে বেশি দ্রবীভূত উপাদানের মধ্যে এটি তৃতীয়।
ম্যাগনেসিয়াম স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য উপাদানের সাথে মিলিত হয়, যেখানে এটি অনির্দিষ্টভাবে একটি +2 অক্সিডেশন অবস্থায় থাকে।এই মুক্ত মৌলটি(ধাতু) কৃত্রিমভাবে তৈরী করা যায় এবং এটি খুব বেশি সক্রিয়(যদিও বায়ুমন্ডলের উপস্থিতিতে এর ওপর অক্সাইডের একটি পাতলা আবরন তৈরী হয় যা ধাতুটির সক্রিয়তা হ্রাস করে)। ধাতুটি খুব উজ্জ্বল সাদা অলো উৎপন্ন করে পুড়ে। এটি এখন মূখ্যভাবে সমুদ্রজলে উপস্থিত থাকা ম্যাগনেসিয়াম লবণ এর তড়িৎ বিশ্লেষনের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয় এবং অ্যালুমিনিয়াম-ম্যাগনেসিয়াম সংকর ধাতুর(ম্যাগনেলিয়াম বা ম্যাগনালিয়াম) একটি উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
মানবদেহে ভরের দিক থেকে সবচেয়ে বেশি পাওয়া যায় এরকম উপাদানের মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম এগারোতম উপাদান এবং এটি দেহের প্রত্যেকটি কোষ এবং ৩০০ টি এনজাইমের[২] জন্য প্রয়োজনীয়।ম্যাগনেসিয়াম আয়ন এটিপি, ডিএনএ এবং আরএনএ হিসাবে পলিফসফেট যৌগের সাথে ক্রিয়া করে। এনজাইমের শত শত কাজ করতে ম্যাগনেসিয়াম আয়ন প্রয়োজন। ম্যাগনেসিয়াম যৌগগুলি সাধারণ ল্যাক্সটিভস, অ্যান্টাকিডস (যেমন, ম্যাগনেসিয়া দুধ), এবং অ্যাক্ল্যাম্প্সিয়ার মতো অস্বাভাবিক নার্ভ উত্তেজক বা রক্তবাহী নালী স্থিতিশীল করতে ব্যবহৃত হয়।