উচ্চতা বাড়ার সাথে সাথে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণও কমতে থাকে এবং একটা পর্যায়ে গিয়ে তা শরীরের অভিযোজনের, আরো নির্দিষ্ট করে বললে সহনশীলতার বাইরে চলে যায়।
এভারেস্টে কি হয়?
এভারেস্ট টেকনিক্যালি পৃথিবীর সবচেয়ে কঠিন , দুর্গম এমনকি সবচেয়ে সুন্দর পর্বতও নয়। পর্বতের গোড়া থেকে শীর্ষ পর্যন্ত হিসেব করলে সবচেয়ে লম্বা পর্বতও এটি নয়। এভারেস্ট কেবল পৃথিবীর অন্যসব উচ্চ বিন্দুকে এক তুড়িতে পেছনে ফেলে দেয়া এক রাজাধিরাজ সর্বোচ্চ স্থান। শুধু এভারেস্টের বেসক্যাম্পই পৃথিবীর অধিকাংশ পর্বতের চেয়ে উঁচু – এটাই এভারেস্টের শ্রেষ্ঠত্ব বোঝানোর জন্য যথেস্ট। ওই উচ্চতায় মানুষের ফুসফুস সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০% অক্সিজেন কম পায়। এবং ব্যাপারটিকে হালকাভাবে নেয়ার কোন সুযোগ নেই কারণ তেল ছাড়া যেমন গাড়ি চলেনা, তেমনি অক্সিজেন ছাড়া আমাদের শরীরও ঠিকভাবে কাজ করতে পারেনা। তাই ওই উচ্চতায় নিচু হয়ে জুতার ফিতা বাঁধার মতো কাজকেও অনেক পরিশ্রমের মনে হয়!
এ তো গেলো বেস ক্যাম্পের কথা। ২৯,০৩৫ হাজার ফিট উঁচু এভারেস্ট শীর্ষে সেই অক্সিজেন এর পরিমাণ আরো কম, মাত্র ৩৩%! একবার চিন্তা করুন এই লেখাটা যখন পড়ছেন তখন আপনার রুমের অক্সিজেন লেভেল যদি ওই মাত্রায় নেমে আসে তবে আপনার অবস্থা কি হবে!
অধিক উচ্চতায় আরেকটি বড় সমস্যা বাতাসের চাপ। সমুদ্র পৃষ্ঠে অবস্থানরত আমাদের শরীরে প্রতি বর্গ ইঞ্চিতে ১৫ পাউন্ড বা সাত কেজি চাপ পড়ে। তাই পুরা শরীরে হিসাব করলে এই চাপের পরিমান হয় টন টন। কিন্তু অধিক উচ্চতায় সেই একই শরীরে বাতাসের চাপ কমে আসে অস্বাভাবিক হারে। ফলে স্বাভাবিক শারীরিক কার্যকলাপ ব্যাহত হয় মারাত্মকভাবে। তাই সোজা কথায় বলতে গেলে এভারেস্ট আরোহণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যা হল এর উচ্চতা , বাতাসের চাপ , প্রচণ্ড অক্সিজেন স্বল্পতা ও চরম অনিশ্চিত আবহাওয়া।
এভারেস্ট আরোহণের অভিযান শুরুর সময় থেকেই এর একটাই সমাধান ছিল পর্বতারোহীদের কাছে – অতিরিক্ত অক্সিজেন।
অতিরিক্ত অক্সিজেন মূলত কমপ্রেসড অবস্থায় একটি সিলিন্ডারে থাকে যা একটি রেগুলেটর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে টিউবের মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয় এবং একটি বিশেষ মুখোশের মধ্যে দিয়ে পর্বতারোহীর মুখে পৌঁছে।