দেশের সরকারি-বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবারও বিভিন্ন শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে ডিজিটাল তথা অনলাইন লটারির মাধ্যমে। আজ বুধবার শুরু হচ্ছে ভর্তির আবেদন গ্রহণ। গত সোমবার প্রকাশিত এ সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে লটারি ছাড়া অন্য কোনো পরীক্ষা নেওয়া হবে না।
একজন শিক্ষার্থী পাঁচটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আবেদন করতে পারবে। ভর্তির কাজ শেষ করতে হবে ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে। বস্তুত বিগত দুই শিক্ষাবর্ষে এ প্রক্রিয়াতেই শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়েছে।
এ প্রক্রিয়ায় ভর্তির একটি সুবিধা হলো ভর্তির জন্য শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের আর আগের মতো দুর্ভোগ পোহাতে হবে না। আগে বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের যে ধরনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে হতো, তা রীতিমতো ভর্তিযুদ্ধের পর্যায়ে পড়ত। তাছাড়া এ ভর্তিকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য চালাত অসাধু ব্যক্তিরা। অভিভাবকরা সংগত কারণেই সন্তানদের নামকরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি করানোর জন্য উদগ্রীব থাকেন। মূলত এ সুযোগটিই এতদিন গ্রহণ করেছে ভর্তি বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত অসাধু ব্যক্তিরা।
প্রতিবছর এভাবে অভিভাবকদের পকেট থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অশুভ সংস্কৃতি শিক্ষাঙ্গনকে গ্রাস করতে উদ্যত হয়েছিল। ভর্তি বাণিজ্যে জড়িতদের মধ্যে স্কুলগুলোর গভর্নিং বডির সদস্য ও শিক্ষক-কর্মচারী ছাড়াও অভিভাবক নেতা, রাজনৈতিক নেতা, এমনকি আন্ডারওয়ার্ল্ডের সন্ত্রাসীদের নাম থাকার নজিরও সৃষ্টি হয়েছে। এ রকম একটি অবস্থায় সরকার অনিয়ম-দুর্নীতি রোধসহ শিক্ষার্থীদের অহেতুক হয়রানি থেকে বাঁচাতে যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে গত বছর এ প্রক্রিয়ায় উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। যেমন, আবেদনপত্র গ্রহণের প্রথম দিনই পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী সকাল ৯টায় ভর্তিসংক্রান্ত ওয়েবসাইট উন্মুক্ত করার কথা থাকলেও সেটি খুলে দেওয়া হয় ২ ঘণ্টা পর। বিলম্বে খোলা এ ওয়েবসাইট অপূর্ণাঙ্গ ছিল বলেও অভিযোগ ওঠে। এছাড়া সরকারি বিদ্যালয়ের ক্ষেত্রে সব জেলার তথ্য আপলোড করা হয়নি। উপরন্তু অন্তত ১ হাজার ৩০০ বেসরকারি উচ্চবিদ্যালয় এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত হয়নি, যার মধ্যে রাজধানীর খ্যাতনামা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও ছিল। এবার যেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তির ক্ষেত্রে এ ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে। ‘ভর্তিযুদ্ধ’ নামের হয়রানি থেকে শিক্ষার্থীদের রক্ষা করার জন্য সরকার যে পদক্ষেপ নিয়েছে, তা শতভাগ দুর্ভোগমুক্ত হবে, এটাই কাম্য।