১৯৪৫ এর শুরু দিকে টাইফাস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে। এতে প্রায় ১৭০০০ বন্দি মারা যায়। এছাড়া টাইফয়েডও ছড়িয়ে পড়েছিল। এই বিশৃঙ্খল অবস্থায় আনা ফ্রাঙ্কের মৃত্যুর আসল কারণ নির্ণয় সম্ভব নয়। তবে এতটুকু প্রমাণ আছে যে সে মহামারীতে মারা যায়। বার্গেন-বেলসেন ক্যাম্পের একজন বেঁচে যাওয়া বন্দি, গিনা টার্গেল, আনাকে চিনতেন। ২০১৫ সালে গিনা ব্রিটিশ পত্রিকা দি সান'কে বলেছেন: " তার বিছানা আমার কাছেই এক কোণায় ছিল। সে প্রায় উন্মাদ ও ভয়ঙ্কর হয়ে গিয়েছিল।" তিনি আরো বলেন যে তিনি ফ্রাঙ্ককে পরিষ্কার হওয়ার পানি এনে দিতেন। গিনা ক্যাম্পের হাসপাতালে কাজ করতেন। তিনি জানান যে মহামারী অসংখ্য বন্দির প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল। " শত শত মানুষ পোকা-মাকড়ের মত মারা যাচ্ছিল। রিপোর্ট আসতো ৫০০ লোক মারা গেছে। ৩০০ লোক মারা গেলে আমরা বলতাম স্রষ্টাকে ধন্যবাদ।মাত্র তিন শত।
প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্যমতে মার্গট তার বিছানা থেকে পড়ে যান এবং এর আঘাতে মারা যান। আনা ও মার্গটের মৃত্যুর সঠিক তারিখ রেকর্ডে নেই। অনেকদিন যাবত ভাবা হতো যে ১৯৪৫ সালের ১৫ এপ্রিলে ব্রিটিশ সৈন্যরা এই ক্যাম্পটি মুক্ত করে দেওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগে তারা মারা যায়। কিন্তু ২০১৫ সালের গবেষণায় দেখা যায় তারা ফেব্রুয়ারিতে মারা গিয়েছিলেন।অন্যান্য প্রমাণের সাথে প্রত্যক্ষদর্শীদের তথ্য বলে যে আনা ফ্রাঙ্কের মধ্যে ৭ ফেব্রুয়ারিতেই টাইফাসের লক্ষণ দেখা যায়।ডাচ স্বাস্থ্য কতৃপক্ষের তথ্যমতে অধিকাংশ টাইফাস আক্রান্ত মানুষ চিকিৎসাহীন অবস্থায় ১২ দিনের মধ্যে মারা গিয়েছিল। উপরন্তু গসলার বলেন তার বাবা হ্যান্স গসলার তাদের ১ম সাক্ষাতের এক বা দুই সপ্তাহ পর মারা গিয়েছিলেন। হ্যান্স মারি যান ২৫ ফেব্রুয়ারি, ১৯৪৫।
যুদ্ধের পর হিসাব করে দেখা যায় ১৯৪২-৪৪ এর মধ্যে নেদারল্যান্ড থেকে স্থানান্তর করা ১০,৭০০০ মানুষের মধ্যে মাত্র ৫০০০ হাজার মানুষ বেঁচে ছিল। প্রায় ৩০,০০০ ইহুদী নেদারল্যান্ডেই ডাচদের সহযোগিতায় লুকিয়ে ছিল। তাদের মধ্যে দুই তৃতীয়াংশ যুদ্ধের পরও বেঁচে ছিল।
অটো ফ্রাঙ্ক অসউইজের বন্দিদশায় বেঁচে ছিলেন। যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর তিনি আমস্টারডামে ফিরে আসেন। সেখানে তিনি জ্যান ও মাইয়েপ গিয়েসের আশ্রয়ে থেকে তার পরিবারকে খোঁজার চেষ্টা করেন। তিনি অসউইজে তার স্ত্রী এডিথের মৃত্যু হয়েছে বলে জানতে পেরেছিলেন। তিনি আশা করেছিলেন হয়তো তার মেয়েরা বেঁচে আছে। কয়েক সপ্তাহ পর তিনি জানতে পারেন যে মার্গট আর আনাও মারা গেছে। তিনি তাঁর মেয়েদের বন্ধুদের খোঁজার চেষ্টা করে জানতে পারলেন যে এদের অনেককেই মেরে ফেলা হয়েছে। আনার ডায়েরিতে প্রায়শঃ উল্লেখিত সেন লিডারম্যানকে তার মাতাপিতা সহ গ্যাস চেম্বারে মারা হয়েছিল। তার বোন বারবার- যে মার্গটের বন্ধু ছিল- বেঁচে গিয়েছিল। ফ্রাঙ্কদের কয়েকজন স্কুল বন্ধু বেঁচে ছিল। অটো ফ্রাঙ্ক ও এডিথ ফ্রাঙ্কের পরিবারের অনেকে বেঁচে গিয়েছিল কারণ তারা ১৯৩০ এর দশকেই জার্মানি ত্যাগ করেছিল। তাদের কেউ সুইজারল্যান্ড, কেউ যুক্তরাজ্য আর কেউ যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস শুরু করে।