১৯৪৫ সালের ৬ আগস্ট। ঘড়িতে তখন সকাল ৮টা বেজে ১৫ মিনিট। আমেরিকা থেকে উড়ে জাপানের হিরোশিমা শহরে এলো বি-২৯ সুপারফোর্টেস নামের একটি বিমান। বিমানের মধ্যে ছিল খুবই শক্তিশালী একটি বোমা।
বোমাটির নাম লিটল বয়। এটি ছিল একটি আণবিক বা অ্যাটম বোমা। হঠাৎ লিটল বয় হিরোশিমার আকাশে বিস্ফোরিত হলো। মুহূর্তেই গোটা শহরজুড়ে তৈরি হলো নীল, সাদা রঙের আলো। সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুতে আগুন ধরে গেল। বিস্ফোরণের দেড় কিলোমিটারের মধ্যে যা যা ছিল সব পুড়ে কয়লা হয়ে গেল। হাজার হাজার মানুষ পুড়ে মিশে গেল মাটির সঙ্গে।
যারা কিছুটা দূরে ছিল তাদের কষ্ট ছিল আরো বেশি। কারণ কারো শরীরের মাংস উঠে গেল। কারো হাত পা উড়ে গেল। কারো চোখ অন্ধ হয়ে গেল। সবাই মিজু মিজু বা পানি পানি বলে চিৎকার করতে লাগল। কিন্তু কোথাও এতটুকু পানি পেল না। পানি দেওয়ারও কেউ ছিল না সেখানে। বোমার আগুনের তাপে মানুষের শরীর পানিশূন্য হয়ে গেল। ৪৮ হাজার বড় বড় বাড়ি পুড়ে কয়লা হয়ে গেল। মাটির নিচের আলু পর্যন্ত পুড়ে সিদ্ধ হয়ে গেল। হিচিয়ামা নামক নদীর পানি হয়ে গেল গরম। এমনই ভয়াবহ ছিল সেই অ্যাটম বোমা।
এই বোমার আঘাতে মারা গিয়েছিল প্রায় ১ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। আর আহত ২ লাখ মানুষ চিরদিনের জন্য হয়ে গিয়েছিল পঙ্গু। এখন চট করে জেনে নিই লিটল বয় সম্পর্কে।
উল্লেখ্য, হিরোশিমা শহরটির আয়তন ২৫৩ বর্গমাইল বা ৬৫৬ বর্গকিলোমিটার। ওসাকা থেকে এটি ১৭৫ মাইল বা ২৮০ কিলোমিটার পশ্চিমে অবস্থিত। এর দক্ষিণ-পূর্বদিকে রয়েছে জাপানের অন্যতম সুন্দর প্রাকৃতিক পোতাশ্রয় কুরে। বোমায় বিধ্বস্ত হিরোশিমাকে ১৯৫০ সাল থেকে আবার নতুন করে গড়ে তোলা হয়। হিরোশিমা এখন জাপানের অন্যতম প্রধান শিল্পকেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। শুধু তাই নয়, যেস্থানে লিটল বয় বিস্ফোরিত হয়েছিল সেখানে নির্মিত হয়েছে পিস মেমোরিয়াল পার্ক। ১৯৫৫ সাল থেকে এখানে পারমাণবিক অস্ত্রবিরোধী একটি বার্ষিক বিশ্বসম্মেলন নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।