ডিজিটাল শিক্ষাব্যবস্থার সাহায্য শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত না থেকে ও শিক্ষকের লেকচার শুনতে পারবে ।
অনেকেই ক্লাসরুমে শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন দিয়ে কয়েক মিনিটের জন্য ২-৩ জনের সঙ্গে আলোচনা করতে বলেন। আলোচনা শেষে সবাই তাদের আলোচনার সারাংশ সবার সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেন। এ ব্যাপারটা অনলাইনে কী করে সম্ভব? জুম বলে একটা সফটওয়্যার আছে (বিনা মূল্যে নামিয়ে নেওয়া যাবে এই ওয়েবসাইট থেকে: zoom.***), এখানে বিনা মূল্যে ১০০ জন শিক্ষার্থীদের নিয়ে অনলাইনে ক্লাস করা সম্ভব। সফটওয়্যারের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ‘ব্রেকআউট রুম’। ব্রেকআউট রুম ব্যবহার করে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের ছোট ছোট রুমে ভাগ করে দিতে পারবেন। তারপর নিজে এক রুম থেকে আরেক রুমে ঢুকে দেখতে পারবেন, কী হচ্ছে। নির্দিষ্ট সময়ের পর সবাইকে আবার ভার্চ্যুয়াল ক্লাসরুমে ফেরত নিয়ে আসতে পারবেন। জুমে আরও আছে ‘লাইভ পোলিং’–এর ব্যবস্থা। ধরুন, একটি বিষয় পড়ানোর পরে আপনি প্রশ্ন করে ঝালাই করে দেখতে চান অধিকাংশ শিক্ষার্থীরা বুঝল কি না। এ কাজটি করতে পারবেন মাত্র কয়েকটা মাউস ক্লিকে। চিন্তায় আছেন, শিক্ষার্থীরা কম্পিউটার অন করে ক্লাসের বাইরে অন্য কিছুতে মনোযোগ দেবে কি না? জুমের আরেকটা ফিচার হলো, ভার্চ্যুয়াল ক্লাসরুমে কেউ যদি মনিটরের দিকে না তাকিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে থাকে, তাহলে শিক্ষক সঙ্গে সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীদের নাম পেতে পারেন।
পরীক্ষা কীভাবে নেব?
এখানে দরকার একটি অভিনব ভাবনার। পরীক্ষার মূল লক্ষ্য হচ্ছে শিক্ষার্থীরা মৌলিক ব্যাপারটা বুঝল কি না, সেটা যাচাই করা। অনেকেই মনে করেন, যেসব প্রশ্নের উত্তর বই ঘেঁটে খুব সহজেই বের করা সম্ভব, সে প্রশ্ন শিক্ষার্থীদের প্রকৃত জ্ঞান যাচাই করতে সক্ষম নয়। শিক্ষক হিসেবে এখন সময় এসেছে চিন্তা করার—পরীক্ষায় কী প্রশ্ন করা যায়, যা একটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বই ঘেঁটেও বের করা সম্ভব নয়। প্রশ্নের পাতাগুলো শিক্ষার্থীদের কাছে পৌঁছাবেন কী করে? অনেক প্রশ্ন এখন গুগল ফরমের মাধ্যমেই করা সম্ভব। তাতে প্রশ্ন প্রিন্ট করার ঝামেলা আর থাকে না।
লোডশেডিং হলে কী হবে?
জুমে ক্লাস নিতে নিতে যদি লোডশেডিং হয়? চিন্তা নেই। শিক্ষার্থীরা তখন একটি নির্দিষ্ট নম্বরে ফোন করে পুনরায় ক্লাসে ফেরত আসতে পারবেন, ফোনে লেকচার শুনতে পারবেন। শিক্ষকও তার পুরো ভিডিওটি সরাসরি ধারণ করে পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে শেয়ার করতে পারবেন।
জুমের ‘ফ্রি ভার্সন’–এ মাত্র ৪০ মিনিট লেকচার দেওয়া যায়, তারপরে কী হবে?
করোনাভাইরাসের জন্য এই সময়সীমা এখন তুলে নেওয়া হয়েছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চাইলে প্রতিষ্ঠানের সবার জন্য লাইসেন্স কিনতে পারেন। উত্তর আমেরিকার অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অনলাইন লার্নিং এখন জুমের মাধ্যমে চলছে।
আমি ক্লাসরুমে বোর্ড ব্যবহার করি, অনলাইনে কী করব?
জুম সফটওয়্যার ব্যবহার করে আপনি আপনার কম্পিউটার স্ক্রিন শেয়ার করতে পারবেন। জুমে ‘হোয়াইটবোর্ড’–এর ব্যবস্থা আছে। ভার্চ্যুয়াল ‘হোয়াইটবোর্ড’ ব্যবহার করে আপনি মাউস এবং কি-বোর্ড দিয়ে সমীকরণ লেখা থেকে শুরু করে যা ইচ্ছে লিখতে পারবেন।
এখন গবেষণা চলছে যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে অনলাইন লার্নিংয়ের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের আবেগ বোঝা সম্ভব কি না। তাতে শিক্ষক–শিক্ষার্থীদের মতামত বা ফিডব্যাক পেতে পারেন—কোন বিষয়টা পড়ানোর সময়ে শিক্ষার্থীরা মজা পেয়েছিল, বা কোনটা পড়ানোর সময়ে শিক্ষার্থীরা বিভ্রান্তিতে পড়েছিল। এ ধরনের তথ্য অবশ্যই একজন শিক্ষককে সচেতন করে তুলবে। বাংলাদেশে যেহেতু এখন কম্পিউটার সাক্ষরতা এবং ব্রডব্যান্ডের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে কম, অনলাইন লার্নিং ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করার আগে বাংলাদেশের আর্থসামাজিক দিকগুলোর সঠিক পর্যালোচনা প্রয়োজন।