গ্রিক আমলের আরেকজন বিজ্ঞানী ছিলেন ইরাতোস্থিনিস, জিনি সেই সময়ে সঠিকভাবে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বের করেছিলেন।
পৃথিবীর ব্যাসার্ধ হল পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে তার উপরিভাগে একটি বিন্দু পর্যন্ত দূরত্ব। এর মানের তারতম্য নিরক্ষরেখায় ৬,৩৭৮ কিমি (৩,৯৬৩মাইল) থেকে মেরু অঞ্চলে ৬৩৫৭ কিমি (৩৯৫০ মাইল) পর্যন্ত হয়ে থাকে। পৃথিবীর ব্যাসার্ধ জ্যোতির্বিজ্ঞান ও ভূপ্রকৃতিবিদ্যায় একটি শিল্প-পদের এবং উভয়ক্ষেত্রেই একটি পরিমাপের একক। এটি জ্যোতির্বিজ্ঞানে R⊕ দ্বারা প্রকাশ করা হয়। অনান্য প্রেক্ষিতে একে R E {\displaystyle R_{E}} {\displaystyle R_{E}} বা R e E N {\displaystyle {\mathcal {R}}_{\mathrm {eE} }^{\mathrm {N} }} {\displaystyle {\mathcal {R}}_{\mathrm {eE} }^{\mathrm {N} }} দ্বারাও প্রকাশ করা হয়।
পৃথিবীর ব্যাসার্ধ বিভিন্ন উপায়ে সংজ্ঞায়িত করা যেতে পারে যেহেতু পৃথিবী নিখুঁত গোলক নয়। সাধারণত যে পৃষ্ঠে কোনো ব্যাসার্ধ এসে প্রসারিত হয় তাকে পৃথিবীর আকৃতি প্রতিনিধিত্বকারী একটি উপবৃত্ত হিসেবে ধরা হয়। পৃষ্ঠের মতো, পৃথিবীর কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত বিন্দুর ভিত্তিতেও সংজ্ঞা প্রদান করা যায় এবং তাই পৃথিবীর ব্যাসার্ধ নির্ধারণের বিভিন্ন উপায়ে অবদান রাখে।
যখন শুধুমাত্র একটি ব্যাসার্ধের উল্লেখ থাকে, ইন্টারন্যাশনাল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল ইউনিয়ন মতে এতে নিরক্ষীয় ব্যাসার্ধ ব্যবহার করা উচিত।[১] আন্তর্জাতিক ভূগণিত ও ভূপদার্থবিজ্ঞান জোট (আইইউজিজি) তিনটি গ্লোবাল গড় ব্যাসার্ধ নির্ধারিণ করে: উপবৃত্তের ব্যাসার্ধের গাণিতিক গড় (R1); প্রকল্পিত ব্যাসার্ধ, যা উপভৃত্তের পৃষ্ঠের সমান ক্ষেত্রফ্অল বিশিষ্ট পৃষ্ঠের একটি গোলকের ব্যাসার্ধ (R2); এবং আয়তনিক ব্যাসার্ধ, যা উপভৃত্তের আয়তনের সমান আয়তন বিশিষ্ট একটি গোলকের ব্যাসার্ধ (R3)।[২] এই তিনটি ব্যাসার্ধই প্রায় ৬,৩৭১ কিলোমিটার (৩,৯৫৯ মাইল)।
পৃথিবীর ব্যাসার্ধ সংজ্ঞায়িত করার অন্যান্য অনেক উপায় বর্ণিত হয়েছে। এদের কিছু নিচে দেখানো হয়েছে। কয়েকটি সংজ্ঞা মেরু ব্যাসার্ধ এবং নিরক্ষীয় ব্যাসার্ধের মধ্যের পরিসরের বাইরের মান উৎপাদন করে কারণ তারা স্থানীয় বা জিওডাল টপোলজির অন্তর্ভুক্ত বা বিমূর্ত জ্যামিতিক বিবেচনার উপর নির্ভর করে।
পৃথিবীর আহ্নিক গতি, অভ্যন্তরিন ঘনত্বের তারতম্য এবং বহিরাগত জোয়ার শক্তি এটির আকৃতি একটি নিখুঁত গোলক থেকে প্রতিসম বিচ্যুতির কারণ। স্থানীয় টপোগ্রফি এই বৈচিত্রকে বাড়িয়ে তোলে, যার ফলে পৃষ্ঠের জটিলতা বৃদ্ধি পায়। সহজবোদ্ধতার জন্য, পৃথিবীর পৃষ্ঠার বিবরণ বাস্তবতা থেকে সহজ হবে। তাই, পৃথিবীর পৃষ্ঠের বৈশিষ্ট্যগুলির আনুমানিক নানা মডেল তৈরি করা হয়েছে, সাধারণত প্রয়োজন অনুসারে সবচেয়ে সহজ মডেলের উপর নির্ভর করা হয়।
সাধারণ ব্যবহারের প্রতিটি মডেলে জ্যামিতিক ব্যাসার্ধের কিছু ধারণা জড়িত। যদিও গোলকই একমাত্র ঘনবস্তু যার ব্যাসার্ধ আছে, কিন্তু ব্যাসার্ধ শব্দটির বৃহত্তর ব্যবহারগুলি অনেক ক্ষেত্রেই সাধারণ, বিশেষত পৃথিবীর বিভিন্ন মডেলের ক্ষেত্রে তা আরও প্রযোজ্য। নিম্নলিখিত তালিকা পৃথিবীর পৃষ্ঠের মডেলগুলির আংশিক তালিকা, যা সূক্ষ্ম থেকে আরো আনুমানিক নির্দেশ করে:
পৃথিবী আসল পৃষ্ঠ।
প্রকৃত পৃষ্ঠতলের প্রতিটি বিন্দুর গড় সমুদ্র স্তর দ্বারা সংজ্ঞায়িত জিওড।
একটি চ্যাপ্টা উপগোলক বা ঘূর্ণনের উপগোলক, পুরো পৃথিবীর মডেলের ভূগাণিতিক উপাত্ত।
একটি গোলক।
উপগোলকের ক্ষেত্রে, মডেলের নির্দিষ্ট বিন্দু থেকে নির্দেশিত কেন্দ্র পর্যন্ত দূরত্বকে বলা হয় "পৃথিবীর ব্যাসার্ধ" বা "যে বিন্দুতে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ"। গোলকাকার মডেলের যেকোনো ব্যাসার্ধকেও "পৃথিবীর ব্যাসার্ধ" হিসাবে উল্লেখ করা সাধারণ। অন্যদিকে, পৃথিবীর আসল পৃষ্ঠ বিবেচনা করার সময়, সাধারণত "ব্যাসার্ধ" ব্যবহার অপ্রয়োজনীও, বরং সমুদ্র স্তর থেকে উচ্চতা বেশি দরকারী। বিভিন্ন মডেল স্বত্ত্বেও, কোনও ব্যাসার্ধ মেরুতে সর্বনিম্ন প্রায় ৬৩৫৭ কিমি এবং নিরক্ষীয় অঞ্চলে সর্বাধিক প্রায় ৬৩৭৮ কিমি (৩৯৫০ থেকে ৩৯৬৩ মাইল)। সুতরাং, পৃথিবী একটি নিখুঁত গোলক থেকে মাত্র এক তৃতীয়াংশ দ্বারা বিভক্ত, যেটি অনেক প্রসঙ্গে গোলকাকার মডেলকে এবং "পৃথিবীর ব্যাসার্ধ" শব্দটিকে সমর্থন করে। মান ভিন্ন হলেও, এই প্রবন্ধের ধারণাগুলি যেকোনো প্রধান গ্রহের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।