প্রকৃতির টানে দেশে-বিদেশে ঘুরতে যেতে সবারই মন চায়। তবে এ ক্ষেত্রে সময় ও ভ্রমণ খরচ নিয়ে অনেকেই দুশ্চিন্তায় পড়েন। সময় মিলে গেলেও সময় অনুযায়ী আর্থিকভাবে সংগতি রেখে ব্যয় মেটাতে হিমশিম খেতে হয়। আবার ছুটির সময় হাতে অতিরিক্ত খরচ করার মতো টাকাও থাকে না অনেকের কাছে। এসব বিষয় মাথায় রেখে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো চালু করেছে ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ট্রাভেল লোন। যেসব নাগরিকের ঋণ পরিশোধের সক্ষমতা রয়েছে- এমন স্বল্প বেতনের চাকরিজীবী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কথা মাথায় রেখেই ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান এমনকি ট্রাভেল এজেন্সিগুলো ভ্রমণ ঋণের ব্যবস্থা করছে। লোনের প্রক্রিয়া সব ব্যাংকের ক্ষেত্রে প্রায় এক হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে সময় ও শর্ত আলাদা হয়ে থাকে। অনেক ব্যাংক আলাদাভাবে ট্রাভেল লোন প্রদান করে না, তবে অধিকাংশ ব্যাংকেই পার্সোনাল লোনের ব্যবস্থা রয়েছে। কেউ চাইলে পার্সোনাল লোন নিয়ে ট্রাভেল করতে পারেন।
বর্তমানে ব্র্যাক ব্যাংক, দি সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড, আইএফআইসি ব্যাংক, ইস্টার্ন ব্যাংক লিমিটেড, উত্তরা ব্যাংক, গো জায়ান-আইপিডিসি ফাইন্যান্স লিমিটেডসহ অনেক ব্যাংক ও প্রতিষ্ঠান ট্রাভেল লোন দিচ্ছে। জেনে নিন কয়েকটি ব্যাংক থেকে লোন নেওয়ার প্রক্রিয়া-
ব্র্যাক ব্যাংক : ভ্রমণে আগ্রহী ব্যবসায়ী এবং চাকরিজীবী উভয় শ্রেণির জন্য ট্রাভেল ঋণের ব্যবস্থা রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংকে। তবে ঋণ পাওয়ার জন্য প্রত্যেককে আলাদা কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। যেমন- চাকরিজীবীদের জন্য নূ্যনতম মাসিক বেতন হতে হবে ১৫ হাজার টাকা। আবেদনপত্রের সঙ্গে পে-স্লিপ, বিগত ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ভিসা ও পাসপোর্টের ফটোকপি জমা দিতে হবে। ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে মাসিক আয় কমপক্ষে ৩০ হাজার টাকা হলে তিনি ট্রাভেল লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট এবং ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট। সাধারণত ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ট্রাভেল ঋণ দেয় ব্র্যাক ব্যাংক। এ ঋণ শোধ করতে হবে ১২-৩৬ মাসের মধ্যে। এ ছাড়া আরও সহজ কিছু শর্ত পূরণ সাপেক্ষে আগে-পরে লোন পরিশোধের ব্যবস্থা রয়েছে।
দি সিটি ব্যাংক লিমিটেড :দি সিটি ব্যাংকসহ অন্য অনেক ব্যাংক পার্সোনাল লোন দিয়ে থাকে। কেউ আলাদা ভ্রমণের প্রয়োজনে আলাদাভাবে ট্রাভেল লোন নিতে পারেন। বিশেষ ভ্রমণ সার্ভিস না থাকলেও কেউ শর্ত পূরণ সাপেক্ষে পার্সোনাল লোন হিসেবে ট্রাভেল লোন নিয়ে ভ্রমণ করতে পারেন। ঋণের পরিমাণ সর্বনিম্ন ৫০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত। পরিশোধের মেয়াদ ১২-৬০ মাস। সর্বোচ্চ তিন লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ গ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার গ্যারান্টার প্রয়োজন হয় না। চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে বর্তমান চাকরিতে নূ্যনতম ছয় মাসসহ এক বছরের কর্ম অভিজ্ঞতা থাকতে হবে এবং মাসিক আয় নূ্যনতম ১৫ হাজার টাকা। ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে আগের মতো নিয়মকানুন।
উত্তরা ব্যাংক : ভ্রমণে আগ্রহীদের জন্য উত্তরা ব্যাংকে রয়েছে ট্রাভেল ঋণের ব্যবস্থা। তবে ঋণ পাওয়ার জন্য অন্য ব্যাংকের মতোই ঋণগ্রহীতাকে কিছু শর্ত পূরণ করতে হবে। বয়স ২২-৬০ বছরের মধ্যে হতে হবে। স্থায়ী ও নির্দিষ্ট বেতনভুক্তদের ক্ষেত্রে অন্তত তিন বছরের চাকরি ও বর্তমান প্রতিষ্ঠানে এক বছর কর্মরত থাকতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে পে-স্লিপ, বিগত ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট, ভিসা ও পাসপোর্টের ফটোকপি জমা দিতে হবে। আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে ট্রেড লাইসেন্স, টিন সার্টিফিকেট এবং ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্ট। সর্বোচ্চ ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত জামানতবিহীন ট্রাভেল ঋণ পাওয়া যাবে উত্তরা ব্যাংকে। এ ঋণ শোধ করতে হবে ১২-৩৬ মাসের মধ্যে। ব্র্যাক ব্যাংকের মতো আরও সহজ কিছু শর্তপূরণ সাপেক্ষে আগে-পরে লোন পরিশোধের ব্যবস্থা রয়েছে।
প্রাইম ব্যাংক : ৩০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত ট্রাভেল ঋণ প্রদান করে প্রাইম ব্যাংক। এ ব্যাংকের ঋণ পেতে আপনাকে ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে কোথায় যাবেন, কত দিন থাকবেন, বিস্তারিত তথ্য পূর্ণ করে কোটেশন নিয়ে আবেদন করতে হবে। চাকরিজীবীদের আবেদনপত্রের সঙ্গে অফিস আইডি, পাসপোর্টের ফটোকপি, দু'জন গ্যারান্টারের অঙ্গীকারনামা জমা দিতে হবে। ব্যবসায়ীর ক্ষেত্রে নিয়ম ব্র্যাক ব্যাংকের মতোই। ভ্রমণ ঋণের মেয়াদ ১ থেকে ৩ বছর।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক :ট্রাভেল লোনের জন্য স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকে আলাদা কোনো স্কিম না থাকলেও যে কেউ পার্সোনাল লোন নিয়ে ট্রাভেল করতে পারেন এই ব্যাংক থেকে। চাকরিজীবীর ক্ষেত্রে নূ্যনতম বেতন ১৫ হাজার টাকা হলে পার্সোনাল লোনের জন্য আবেদন করা যায়। লোন পাবেন সর্বোচ্চ বেতনের ১৫ গুণ। সর্বনিম্ন এক লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা লোন প্রদান করে থাকে এই ব্যাংক।