নগরায়ন (বা শহরায়ন) বলতে গ্রামাঞ্চল থেকে শহুরে অঞ্চলে জনসংখ্যার স্থানান্তর, গ্রামের তুলনায় নগর অঞ্চলে বসবাসরত মানুষের অনুপাত ক্রমশ বৃদ্ধি এবং কোনো সমাজ যেভাবে এই পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নেয় তা বোঝায়।
নগরায়নে বাংলাদেশের রয়েছে সুদীর্ঘ ইতিহাস। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় বা চতুর্থ শতাব্দীতেই এখানে পুন্ড্রনগরের মতো নগর গড়ে উঠেছিল। নগরায়নের দীর্ঘ ইতিহাস থাকা সত্তে¡ও মোট জনসংখ্যার তুলনায় সরকারিভাবে সংজ্ঞায়িত নগরকেন্দ্রগুলিতে বসবাসকারী জনগোষ্ঠীর অনুপাত বিবেচনায় বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বের স্বল্পতম নগরায়িত দেশগুলির অন্যতম। এমনকি একবিংশ শতাব্দীর সূচনায় ২০০১ সালেও জাতীয় জনসংখ্যার মাত্র ২৩ শতাংশ নগর ও শহরগুলিতে বাস করছিল। তবে জনসংখ্যার বিশাল আকৃতির কারণে চূড়ান্ত বিবেচনায় ২৩ শতাংশের অর্থ দাঁড়ায় ২৮ মিলিয়নেরও অধিক মানুষ। বিগত শতাব্দীর সূচনালগ্নে ১৯০১ সালে ব্রিটিশ ভারতে অবস্থিত বর্তমান বাংলাদেশ ভূখন্ডে মোট জনসংখ্যার মাত্র ২.৪৩ শতাংশ শহর এলাকায় বাস করতো। বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার প্রায় অপরিবর্তিত ছিল। ১৯৪১ সালে জনসংখ্যার ৪ শতাংশেরও কম শহরে বাস করতো এবং শহরাঞ্চলের জনসংখ্যা ছিল মাত্র ১.৫৪ মিলিয়ন।
১৯৪৭ সালের পর থেকে নগরায়নে গতি সঞ্চারিত হয়। পাকিস্তানের একটি প্রদেশ হিসেবে পূর্ববঙ্গ হয় পূর্ব পাকিস্তান। ১৯৪১-১৯৫১ দশকের তুলনায় ১৯৫১-১৯৬১ সময়কালে শহরাঞ্চলের জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়। শহরাঞ্চলের মোট জনসংখ্যা ১৯৫১ সালের ১.৮ মিলিয়ন থেকে ১৯৬১ সালে ২.৬ মিলিয়নে উন্নীত হয়। এই দ্রæত প্রবৃদ্ধির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল ১৯৪৭ সালের পর ভারত থেকে মুসলমানদের বড় মাপের অভিবাসন, যারা মূলত শহরাঞ্চলেই বসতি স্থাপন করে। ১৯৬১ থেকে ১৯৭৪ সাল মেয়াদে এই প্রবৃদ্ধি ছিল বিস্ময়কর, যার হার ছিল ১৩৭.৬ শতাংশ। এ সময়ে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ঘটে গড়ে ৬.৭ শতাংশ, যা কিনা পূর্ববর্তী দশকে ছিল ৩.৭ শতাংশ। এই দ্রæত নগরায়নকে দুটো কারণ দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায়। প্রথমত, মূলত কর্মসংস্থানের সুযোগের সন্ধানে পল্লী অঞ্চল থেকে দরিদ্রদের শহরে অভিবাসন। একটি হিসাব অনুযায়ী ১৯৭৪ সালে মোট শহুরে জনসংখ্যার ৩৮ শতাংশই গ্রামাঞ্চল থেকে এসেছিল। দ্বিতীয়ত, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর ঘটে যাওয়া সামাজিক-রাজনৈতিক পরিবর্তনগুলিও নগরায়নকে প্রভাবিত করেছিল। স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী হিসেবে ঢাকার নতুন মর্যাদা ছিল একটি বড় আকর্ষণ। বাংলাদেশের মতো একটি ক্ষুদ্র আয়তনের দেশে বিপুল জনসংখ্যা ভবিষ্যতের জন্য উদ্বেগজনক। গত তিন দশকে বাংলাদেশে শহুরে জনসংখ্যার যে দ্রæত প্রবৃদ্ধি ঘটেছে তার পেছনে কয়েকটি কারণ সন্নিবেশিত রয়েছে। এর মধ্যে আছে স্থানীয় শহুরে জনসংখ্যার প্রাকৃতিক প্রবৃদ্ধির উঁচু হার; বিদ্যমান নগর এলাকার ভূখন্ডগত বিস্তার ও এর সংজ্ঞায় পরিবর্তন এবং গ্রামাঞ্চল থেকে শহর এলাকায় অভিবাসন। শহুরে জনসংখ্যার প্রবৃদ্ধিতে অভিবাসনই সর্বাপেক্ষা প্রভাবশালী উপাদান হিসেবে কাজ করেছে, ১৯৭৪-৮১ সময়কালে যার অবদান ছিল ৪০ শতাংশ। ঢাকার মতো বড় নগরীর ক্ষেত্রে এই অবদান আরো বেশি হতে পারে। পল্লী এলাকা থেকে শহরাঞ্চলে উচ্চ হারে অভিবাসনের পেছনে পল্লীর বহির্মুখী চাপ ও শহরের অন্তর্মুখী টান কাজ করেছে। বড় নগর-কেন্দ্রগুলো, বিশেষত ঢাকা থেকে গেছে প্রধানতম আকর্ষণ হিসেবে। গ্রামাঞ্চল থেকে বহির্মুখী অভিবাসনের পেছনে গ্রামীণ দারিদ্র্য ও ভূমিহীনতা ছিল মুখ্য কারণগুলি অন্যতম। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বিশেষত নদীতীরের ভাঙন প্রায়শই তাৎক্ষণিক কারণ হিসেবে কাজ করছে। শহুরে টান-এর মধ্যে আছে কর্মসংস্থানের প্রকৃত ও ধারণাগত সুযোগ এবং আর্থ-সামাজিক সুযোগ-সুবিধা।
বিদ্যমান ভৌগোলিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক শক্তি বা প্রভাবের প্রতিক্রিয়া হিসেবেই একটি দেশে নগরায়নের বিন্যাস ঘটে। যেহেতু এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে এই শক্তির পার্থক্য থাকে, তাই নগরায়নের বিন্যাসেও পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। শহুরে জনসংখ্যার ভিত্তিতে নগরায়নের বিভিন্ন ধাপের বিবেচনায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মধ্যে যথেষ্ট তফাৎ দেখা যায়। বস্তুত, এই পার্থক্য সাতক্ষীরা জেলার ৭.২ শতাংশ থেকে শুরু করে ঢাকা জেলার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। ঢাকা জেলা হলো দেশের সবচেয়ে নগরায়িত এলাকা। ঢাকার বাইরে অন্য তিনটি সর্বোচ্চ নগরায়িত জেলা হলো নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম ও খুলনা। বাংলাদেশে শহুরে জনসংখ্যার অসম বণ্টন পরিলক্ষিত হয়। এর কারণ অনেক, যার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো: নগর ও শহরের আকার, বিভিন্ন ভৌগোলিক কারণ, উন্নয়নের গতি ও বিন্যাস এবং অবকাঠামো ও যোগাযোগ নেটওয়ার্কের উন্নয়ন। বাংলাদেশের আদমশুমারি কমিশন দেশের নগরকেন্দ্রগুলিকে চারটি শ্রেণিতে বিভক্ত করেছে; মহানগরী (মেগাসিটি), পরিসংখ্যানগত মেট্রোপলিটন এলাকা (এসএমএ), পৌরসভা ও অন্যান্য নগরকেন্দ্র। ৫ মিলিয়নের অধিক জনসংখ্যাবিশিষ্ট একটি মহানগরীকে মেগাসিটি বলা হয়ে থাকে। দেশে একটিই মেগাসিটি রয়েছে, আর তা হলো ঢাকা।
চতুর্দিকে নগরকেন্দ্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সত্তে¡ও বাংলাদেশের নগর পরিস্থিতির বৈশিষ্ট্য মূলত প্রাধান্য ও কেন্দ্রিকতার। দেশের প্রায় ৩৮% শহুরে জনগোষ্ঠি নিয়ে দেশের রাজধানী ও বৃহত্তম নগরী ঢাকার রয়েছে একক প্রাধান্য। একটি প্রধান নগরী হিসেবে ঢাকার মর্যাদার ঐতিহাসিক ভিত্তি রয়েছে এবং সম্ভবত ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে। দেশের মোট শহুরে জনসংখ্যার ৫৬% নিয়ে চারটি বৃহত্তম মহানগর এলাকা অর্থাৎ ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা ও রাজশাহীর প্রাধান্য এক্ষেত্রে আরও মজবুত। অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের নিরীখেও নগর কেন্দ্রিকরণে অসমতা দেখা যায়। এ কথাটা বিশেষত ঢাকার জন্য প্রযোজ্য। উদাহরণস্বরূপ, জাতীয় ভোগের ৫০% ঢাকায় ঘটে থাকে। বিভিন্ন শিল্প ও সরকারি বিনিয়োগের একটি বিশাল ও অসমানুপাতিক অংশ এ অঞ্চলে কেন্দ্রিভূত আছে।
সরকার ঘোষিত বিকেন্দ্রীকরণের নীতিমালা সত্তে¡ও ঢাকা মহানগর ও এর আশপাশের এলাকায় স্থাপিত শিল্প-কারখানার ঘনত্ব মাত্রাতিরিক্ত বেশি। উদাহরণস্বরূপ, দেশের ৪,১০৭টি রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক কারখানার ৭৫ শতাংশই ঢাকা মহানগর অঞ্চলে স্থাপন করা হয়েছে। সমাজসেবা খাত, ব্যবসা-বাণিজ্য ও আর্থিক খাতেও এই কেন্দ্রীভূত অবস্থা দেখা যায়। উদাহরণস্বরূপ, বিগত দশকে প্রতিষ্ঠিত দেশের ৬২টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ৪৫টির অবস্থান ঢাকা মহানগরীতে। চিকিৎসা সেবা ও সুযোগের ক্ষেত্রেও অনুরূপ পরিস্থিতি দৃশ্যমান। বন্দর থাকার ফলে শিল্প-কারখানার বহুল উপস্থিতির মাধ্যমে দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামেও এ ধরনের কেন্দ্রিকরণ ঘটেছে।
নগরায়ন বিশ্বের সর্বত্র অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের একটি কার্যকর বাহন হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে। অর্থনীতির ভাষায়, জাতীয় অর্থনীতিতে নগরায়ন তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রাখে। যদিও উন্নয়নশীল বিশ্বে নগরায়নের হার ৪০ শতাংশেরও কম, তাদের নগর খাত থেকে জিডিপির ৬০ শতাংশেরও বেশি অর্জিত হয়। এমনকি বাংলাদেশেও এই খাত জিডিপিতে ৬৫ শতাংশের বেশি অবদান রাখে। এই অবদান ১৯৭২-৭৩ সালের ২৫ শতাংশ থেকে ১৯৯৫-৯৬ সালে ৪৫ শতাংশে উন্নীত হয়। এ থেকে এই সিদ্ধান্তেই উপনীত হওয়া যায় যে নগরায়ন সামষ্টিক পর্যায়ে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনছে। স্বাক্ষরতার উচ্চতর হার, শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শ্রেয়তর স্বাস্থ্য সূচকের মাধ্যমে নগরায়ন সামাজিক উন্নয়নকেও প্রভাবিত করে। বৃহত্তর নগরায়ন সাংস্কৃতিক উন্নয়নেও ইতিবাচক অবদান রাখে।
সা¤প্রতিককালে বাংলাদেশে দ্রæত নগরায়নের একটি সুনির্দিষ্ট ও ইতিবাচক ফল হলো বিশেষত ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরীতে লক্ষ লক্ষ নারী শ্রমিকের আনুষ্ঠানিক শিল্প খাত, বিশেষত তৈরি পোশাক খাতে কর্মসংস্থান। এর বহুমাত্রিক ইতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়, যেমন নারীর ক্ষমতায়ন এবং জনসংখ্যাতাত্তি¡ক কাঠামোয় পরিবর্তনÑ যার মধ্যে আছে নগর এলাকায় লিঙ্গ অনুপাতের ক্ষেত্রে ভারসাম্য অর্জন। বিশেষত মহানগর এলাকায় নগরায়নের বিস্তার এবং রাজধানী ঢাকা মেগাসিটিতে পরিণত হওয়ায় বহির্বিশ্বের সাথে বর্ধিত যোগাযোগের ফলে বুদ্ধিবৃত্তিক, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অঙ্গনে সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে; গুরুত্বপূর্ণ সম্মেলন, সেমিনার ও সিম্পোজিয়াম আয়োজন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনী, সংগীতানুষ্ঠান, কনসার্ট ও ক্রীড়া প্রতিযোগিতার আয়োজনই এর প্রমাণ।
বিগত দশকগুলিতে বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার শেকড় আরো গভীরে প্রোথিত হয়েছে। এটা নগর এলাকার ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য, যার প্রমাণ পাওয়া যায় সা¤প্রতিককালে অনুষ্ঠিত পৌরসভা নির্বাচন থেকে, যাতে নারীদেরকে সংরক্ষিত আসনে প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। সিটি কর্পোরেশনসমূহেও গণতান্ত্রিক নির্বাচনের মাধ্যমে নারীরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছে। বিশ্বের যে কোনো উন্নয়নশীল দেশের জন্য এটা একটি অনন্য অর্জন। তবে পৌর প্রশাসনে অধিকতর অংশগ্রহণের সুযোগ ও স্বচ্ছতার অভাবে এই অর্জন কিছুটা সীমিত হয়ে পড়েছে। তাছাড়া গণতান্ত্রিক কাঠামোর মধ্যে থেকেও নগর পর্যায়ে স্থানীয় সরকারের স্বায়ত্তশাসন ও পরিপূর্ণ ক্ষমতার অভাব রয়েছে। কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ এখনো সর্বাত্মক।
দ্রচত নগরায়নের ফলে নাগরিক ভৌত অবকাঠামোর দ্রæত স¤প্রসারণ ঘটে এবং কৃষি ও বন খাতের আওতাধীন অঞ্চলসমূহ নির্মাণ কাঠামোয় ঢাকা পড়ে যায়। পাশাপাশি বর্ধনশীল জনসংখ্যার চাপে কৃষি-জমি ও বনাঞ্চল এবং জলাধারসমূহ আরো দ্রæত গতিতে বেদখল হয়ে যায়। দ্রæত নগরায়ন বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, স্যানিটেশন, পয়োনিষ্কাশন, বর্জ্য অপসারণ, পরিবহন, টেলিযোগাযোগ, কেবল সংযোগ এবং স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষার মতো নাগরিক সেবা ও উপযোগের উপরও প্রচন্ড চাপ সৃষ্টি করে। এ সকল খাতের প্রতিটিতে সেবার স্বল্পতা বা অপর্যাপ্ততা এবং সাধারণভাবে অব্যবস্থাপনা সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে।
দ্রচত নগরায়নের ফলে নগরের অভ্যন্তরে ব্যাপক ও ভয়ংকর নেতিবাচক ফলাফল নগরের পরিবেশকে বিপর্যস্ত করে তোলে, যা বর্তমানে ঢাকায় দৃশ্যমান। এর বায়ু, পানি ও মাটি এখন বিপজ্জনক মাত্রায় দূষিত হয়ে পড়েছে। ঢাকাকে বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত মেগাসিটি মনে করা হয়। দুঃখজনক হলেও সত্য, আমাদের অনেকগুলি শহর বন্যা, নদী-ভাঙন ও ঘূর্ণিঝড়ের মতো বড় মাপের প্রাকৃতিক দুর্যোগের হুমকির মধ্যে থাকে। গ্রামীণ দরিদ্রদের অভিবাসনের ফলে শহরাঞ্চলের জনসংখ্যা অতি দ্রæত বৃদ্ধি পাওয়ায় দারিদ্র্য বিমোচনের কাজটিও কঠিন হয়ে পড়েছে। যদিও স্বাধীনতার পর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি পদক্ষেপের ফলে নগরাঞ্চলে দারিদ্র্যের হার তাৎপর্যপূর্ণভাবে কমে এসেছে। সংখ্যার দিক দিয়ে বর্তমানে ১৩.২০ মিলিয়ন নগরবাসী দরিদ্র রয়েছে। এদের অধিকাংশই নিজেদের জন্য বসবাসের উপযোগী গৃহ বা অন্যান্য আর্থ-সামাজিক সেবা নিশ্চিত করতে অক্ষম। এর তাৎক্ষণিক পরিণতি হলো বস্তি এবং অননুমোদিত বসতির দ্রæত স¤প্রসারণ।
যেহেতু একবিংশ শতাব্দীকে একটি বিশ্বায়ন ও মুক্ত বাজার অর্থনীতির কাল হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাই বাংলাদেশের শহর ও গ্রাম উভয় অঙ্গনে এর ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রভাব পরিলক্ষিত হয়। বাংলাদেশের নগর অঞ্চলগুলি এখন উন্নত বিশ্বের মেট্রোপলিটন কেন্দ্র বা বৈশ্বিক নগরীর প্রান্তিক বলয় হিসেবে কাজ করছে। আমাদের শহরগুলিতে শিল্প স্থাপন করা হয়, যাতে করে উন্নত বিশ্বে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি করা যায়। কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি এবং জাতীয় আয় বৃদ্ধিতে এটা ইতিবাচক অবদান রাখে। তবে একই সঙ্গে নগরের ভেতরে ও চারিদিকে এর পরিবশেগত প্রভাবও দৃশ্যমান। তাছাড়া শহুরে সমাজে এর নেতিবাচক সামাজিক প্রভাবও থাকে। একটি দ্রæত বর্ধনশীল শহুরে ধনিক শ্রেণির কারণে ঢাকা শহরের চারদিকের জলাধার অথবা চট্টগ্রাম ও সিলেটের পাহাড়ের উপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ পড়ে; অন্যদিকে স্বল্প আয় উপার্জনকারী শিল্প শ্রমিক অথবা অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মী তাদের বসবাসের জন্য অত্যন্ত নিম্নমানের বস্তি নির্মাণ করতে বাধ্য হয়।