স্বামী-স্ত্রীর প্রেম !!
. .
লেখাঃ মাসুম রিয়াদ ।
.
.
পার্ট ১
.
এখন রাত ১২ টা বেজে ৫ মিনিট …......
.
জারিনের মনটা আজকে খুবই খারাপ খুবই খারাপ কারণ একটু আগে তার ২য় জন্ম দিনটা পার হয়ে গেছে ( বিয়ের পড়ের ২য় জন্ম দিন ) অথচ এই দিনটা তার স্বামী সৌরভ ভুলে গেছে।প্রথম বারের টা মনে রেখেছিল বাইরে ঘুরতে নিয়া গেছে সারাদিন অনেক মজা করেছিল।কিন্তু বছর ঘুরতে না ঘুরতেই এই দিনটা ভুলে গেল তার স্বামী।
.
জারিন প্রথম মনে করেছিল সৌরভের ঠিকই মনে আছে কিন্তু কিছু বলছে না হয়ত তার জন্য কোন সারপ্রাইজ আছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে সৌরভের প্রতিদিনের মত অফিসে চলে গেছে। জারিন মনে করেছে অফিস থেকেই হয়ত তাকে ফোন করে তাকে তার অফিসে যেতে বলবে বা রেডি হয়ে থাকতে বলবে কিন্তু সারাদিন গড়িয়ে যখন বিকাল হল তখন মনে করেছে অফিস থেকে আজকে তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে ।। জারিন মনে মনে চাচ্ছে সৌরভ কে কেউ মনে করিয়ে দিক তার জন্ম দিনের কথাটা কিন্তু তাদের এমন পরিচিত কেউ নেই যে এই সব জন্ম দিন, বিবাহ বার্ষিকী নিয়ে মাথা ঘামায়।
.
এই নিয়ে জারিনের দুঃখনেই যেইখানে তার স্বামীরই মনে নেই তার জন্ম দিনের কথা সেই জায়গায় অন্য কে দোষ দিয়ে লাভ কি ? অন্যদিন সৌরভ দিনে কয়েক বার ফোন দিয়ে জারিনের খবর নেয় আজকে সে একবার মাত্র ফোন দিয়েছে তাও ২০ সেকেন্ড কথা বলছে যে কিছু লাগবে কি না।জারিন ও রাগ করে আর ফোন করেন নাই এটা রাগ নাকি অভিমান মিনা নিজেও জানে না। মানুষের মন বড়ই অদ্ভুত।
.
সৌরভ ফিরল রাত ৯ টা বাজে জারিন আশা করেছিল তার হাতে কোন প্যাকেট থাকবে কিন্তু তার ধারণা ভুল হাতে কিছু নেই খালি।জারিনের খুব কান্না পাচ্ছে তার মানে তার স্বামীর আসলেই মনে নেই।জারিন অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিল এখনও তার মনে একটু ক্ষীণ আশা সে অনেক সুন্দর করে শাড়ি পড়েছে সেজেছে সৌরভ এইটা দেখে যদি কিছু অনুমান করতে পারে । সৌরভ শুধু বলল তোমাকে খুব সুন্দর লাগছে ব্যাস এইটুকুই। জারিন আজেক অনেক কিছু রান্না করেছে এত রান্না সাধারণত কোন বিশেষ দিন বা মেহমান ছাড়া করা হয় না।খেতে বসেও সৌরভ কিছু বলল না চুপচাপ খেয়ে গেল।ও তো এত চুপচাপ থাকে না আজ বেছে বেছে এই দিনটাই কেন এত চুপচাপ।
.
জারিনের খুবই অবাক লাগছে এত সুন্দর করে সাজার পরও সৌরভ আজকে একটু আগেই শুয়ে পরল জারিন কে কাছেও টানল না কোন কথাও বলল না।জারিনের খুবি কান্না পাচ্ছে কিন্তু শব্দ করে কাঁদতে পারছে না যদি সৌরভ শুনে ফেলে তাহলে ও খুবই কষ্ট পাবে কারণ সে জানে ও সব সহ্য করতে পারলেও সে জারিনের কান্না সহ্য করতে পারে না আর জারিন চায় না ওর জন্য ওর স্বামী বিন্দু পরিমাণ কষ্ট পাক।
.
.
পার্ট ২
.
সৌরভ আজেক একটু আগেই অফিসের জন্য রওয়ানা হয়েছেল কারণ আজকে জারিনের জন্মদিন তার ইচ্ছা ১১ টার ভিতর কাজ সেরে বাসায় চলে আসবে।তাঁর পর জারিন কে নিয়ে বাইরে ঘুরতে যাবে দুপুরে বাইরে খাবে সারা বিকেল ঘুরবে রাতে ও বাইরে খেয়ে পড়ে বাসায় আসবে।
.
কিন্তু অফিসে যাওয়ার আগেই তাঁর বন্ধু জামালের ফোন কান্না কান্না কণ্ঠে ( পাশে চিৎকার করে কান্নার শব্দ )
.
-- দোস্ত তুই কই তারা তারি আয়।
-- কেন কই হইছে বল ?
-- মা আর নাইরে।
.
সৌরভের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ে এই গত সপ্তাহেও সে জামালের মার সাথে দেখা করেছে মোটামুটি সুস্থ ছিল।সৌরভ আর ভাবতে পারে না।
.
সৌরভ আর জামাল ছিল কলেজ লাইফের বন্ধু।সৌরভের বাবা-মা কেউ ছিল না।ওরা একই সাথে হোস্টেলে থেকে পড়ত। জামাল ছুটি পেলেই বাড়ি চলে যেত আর সৌরভ হোস্টেলেই থেকে যেত তাঁর যাওয়ার মত তেমন কোন পরিচিত জায়গা ছিল না । জামাল ব্যাপারটা খেয়াল করল একবার।পড়ের বার ছুটিতে জামাল ওকে কে ছাড়া বাড়িতেই যাবে না অনেকটা বাধ্য হয়েই জামালের সাথে ওর যেতে হল । সৌরভ ঐ বাড়িতে গিয়ে প্রথম প্রথম খুব লজ্জায় থাকত । হটাৎ একটা অপরিচিত বাড়িতে কি রকম জানি লাগত। ঐ বাড়ির লোক গুলা ছি অনেক অদ্ভুত ঐ বাড়িতে যে নতুন একটা লোক গেছে তাতে তাদের কোন মাথা ব্যাথা নেই যেন ও এই বাড়ির একটা ছেলে যে ঢাকা থেকে অনেক দিন পড়ে এই বাড়িতে আসছে।
.
ঐ বাড়ির লোক বলতে ২ জন শুধু জামালের মা আর ওর একটা ছোট ভাই ক্লাস এইটে পড়ে।ওর বাবা অনেক আগেই মারা গিয়েছে তবে ওদের পারিবারিক অবস্থা ভাল।পাকা বাড়ি, বাড়ির সামনে বিশাল পুকুর।পুকুর পারে বিশাল বিশাল নারিকেল গাছ ।অনেক জমি জমা আছে ।।
.
জামালের মার আচরণ দেখে আরও অবাক হয়েছে সৌরভের যেন এই বাড়িতে নতুন না যেন ঢাকা থেকে তাঁর ২ ছেলে একসাথে এসেছে। মাত্র ২ দিনেই ঐ বাড়ির সবাই খুব আপন মনে হয়েছে । প্রথম দিনেই জামালের মা বলে দিয়েছে যে আমাকে অ্যান্টি ডাকবে না হয় মা ডাকবে হয় আম্মা বলে ডাকবে। ও কে জামালের মা কিছুই জিজ্ঞেস করে নাই কোথা থেকে আসছে কই থাকে বাবা-মা কই করে এই সব কিছু না।
.
সেই থেকে আর সৌরভের নিজেকে নিজের কাছে কোন দিন অসহায় মনে হয়নি সেই থেকে ও ছুটির আশায় থাকত কবে ছুটি দিবে আর কবে ওর আম্মার কাছে যাবে।
.
সৌরভের মা মারা গেছে কবে ওর মনে নেই কিন্তু আজকে সে বুঝতে পারছে মা হারানোর ব্যথা।জামাল কে ধরে অনেক কেদেছে ও। ৭ টার দিকে মাটি দিয়ে বাসায় রওয়ানা হয়েছে ও।খুব স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করছে ও কারণ জারিন যদি কোন ভাবে জানতে পারে ওর মন খারাপ তাহলে জারিন অনেক কষ্ট পাবে তাই সে কিছুতেই জারিন কে বুঝতে দিতে চায় না যে ওর মন খারাপ । তাই ক্ষুধা না থাকার পরও জারিন কে খুশি কারার জন্য খেয়েছে ।। ওর সাথে বেশি কথা বলে নাই কারণ সৌরভ জানানে বেশি কথা বললে সৌরভের কান্না চলে আসবে।অনেক কষ্টে ও তার কান্না চেপে রেখেছে সে কিছুতেই তার চোখের জল জারিন কে দেখাতে চায় না । কারণ ও খুব ভাল করেন জানে ওর চোখে পানি দেখলে জারিনের পৃথিবী বলতে কিছু থাকবে না।
.
.
সৌরভের ইচ্ছা করছে কথা গুলো জারিনের সাথে শেয়ার করতে এতে করে তার কষ্টটা কিছুটা হলেও কমত কিন্তু এতে জারিন কষ্ট পেত আর সৌরভ জারিন কে কষ্ট দিতে চায় না কোন দিন না ।।
.
জারিন এখন যেই কারণে অভিমান করে আছে সেটা ভাঙ্গাতে গেলে ওকে সব বলতে হবে আর এতে করে জারিন এখন যেই কষ্ট পাচ্ছে তার তিন গুন বেশি কষ্ট পাবে সব শুনলে ।। পাবে আর সৌরভের পক্ষে সেটা সম্ভব না কোন দিন না।