অ্যালঝেইমার ডিজিজ হলো ডিমেনশিয়ার একটি সাধারন রূপ। এই সমস্যা তীব্র অবস্থায় চলে গেলে এটি রোগীকে তার দৈনন্দিন কাজ করতে, বন্ধু-বান্ধব, আত্নীয়-স্বজনকে চিনতে এবং কোনো কথা বুঝতে বাধা দেয়। এটি একটি মারাত্নক রোগ যা সময়ের সাথে সাথে আরও খারাপ অবস্থার সৃষ্টি করে । আলঝেইমারস ব্রেনের ক্ষয়জনিত রোগ, এটা কোন মানসিক রোগ নয়। মানসিক রোগ সেটাকেই বলা হয় যেখানে ব্রেন স্ট্রাকচার স্বাভাবিক কিন্তু আচরন অস্বাভাবিক থাকে। এই রোগে আক্রান্ত ব্যাক্তির বুদ্ধি, স্মৃতি ও ব্যক্তিত্ব ক্রমান্বয়ে লোপ পায় । সাধারণত, প্রবীণদের ক্ষেত্রে এ রোগ বেশি দেখা যায় এবং হঠাৎ করে অনেক কিছুই মনে করতে পারেন না। ফলে তার আচরণে কিছুটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়। বয়সের সাথে অস্বাভাবিক মাত্রার ভুলপ্রবনতা দৈনন্দিন ব্যক্তিগত
আলঝেইমারস রোগ হলো ডিমেনশিয়ার একটি সাধারণ রূপ। এই সমস্যা তীব্র অবস্থায় চলে গেলে এটি রোগীকে তার দৈনন্দিন কাজ করতে, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজনকে চিনতে এবং কোনো কথা বুঝতে বাধা দেয়। এটি একটি মারাত্মক রোগ, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আরও খারাপ অবস্থার সৃষ্টি করে।
আলঝেইমারস মস্তিষ্কের ক্ষয়জনিত রোগ, এটা কোনো মানসিক রোগ নয়। মানসিক রোগ সেটাকেই বলা হয় যেখানে মস্তিষ্কের কাঠামো (ব্রেন স্ট্রাকচার) স্বাভাবিক কিন্তু আচরণ অস্বাভাবিক থাকে। আলঝেইমারস রোগে আক্রান্ত মানুষের বুদ্ধি, স্মৃতি ও ব্যক্তিত্ব ক্রমান্বয়ে লোপ পায়। সাধারণত, প্রবীণদের ক্ষেত্রে এ রোগ বেশি দেখা যায় এবং হঠাৎ করে অনেক কিছুই মনে করতে পারেন না। ফলে তাঁর আচরণে কিছুটা অস্বাভাবিকতা পরিলক্ষিত হয়। বয়সের সঙ্গে অস্বাভাবিক মাত্রার ভুল প্রবণতা দৈনন্দিন ব্যক্তিগত জীবনকে অচল ও পরমুখাপেক্ষী করে তোলে।
রোগের ইতিহাস
ডা. এলইস আলঝেইমার ১৯০৬ সালে প্রথম এই রোগের বর্ণনা দেন। আগস্তি দেতার নামে এক ব্যক্তি অলীক দর্শন ও ভাবনা, স্মৃতিগত দুর্বলতা, কথা বলতে কষ্ট হওয়া, সঠিক শব্দটি স্মরণ করতে না পারা, খিটখিটে মেজাজ, রাগ, অসহিষ্ণুতা, সন্দেহপ্রবণতা ইত্যাদি সমস্যায় ভুগছিলেন। মৃত্যুপরবর্তী পরীক্ষায় দেখা গেল, তাঁর মস্তিষ্ক ছিল চুপসে যাওয়া ছোট আকারের। স্নায়ুতন্তুগুলো এমাইলয়েড প্ল্যাক দ্বারা মারাত্মকভাবে আক্রান্ত আর অবশিষ্ট নিউরনগুলো নিউরোফিব্রিলারি ট্যাঙ্গেলে ভরপুর। পরবর্তীকালে এজাতীয় রোগের নামকরণ করা হয় আলঝেইমারস রোগ।
৬০ বছর বয়সের পর থেকে প্রতি ৫ বছরের মধ্যে আলঝেইমার হওয়ার আশঙ্কা দ্বিগুণ হতে থাকে। গড় আয়ু বাড়ার পাশাপাশি আলঝেইমারসের প্রকোপ উন্নয়নশীল বিশ্বে বাড়ছে। দ্রুত বুড়িয়ে যাওয়া যেকোনো রোগ, ডায়াবেটিসে আক্রান্ত এবং নারীদের মধ্যে এর প্রকোপ বেশি।
কী কারণে হয়
চিকিৎসাবিজ্ঞানের মতে, বংশ ও জিনগত, জীবনযাপনের ধরন এবং পরিবেশগত কারণে এই রোগ হতে পারে। এই রোগে একটি বিশেষ ধরনের প্রোটিন মস্তিষ্কের কোষে জমা হয়ে ক্ষতি সাধন করে এবং তা নষ্ট করে ফেলে। এসবের মূলে রয়েছে নন-এনজাইমেটিক গ্লাইকেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অ্যাডভান্সড গ্লাইকেশন অ্যান্ড প্রডাক্ট জমা হওয়া। এগুলো নিউরন এবং সেগুলোর আন্তসংযোগ নষ্ট করে দেয়। গ্লুকোজের পরিমাণ স্বাভাবিক থাকলে ধীরগতিতে এবং বেশি থাকলে দ্রুতগতিতে এসব পরিবর্তন ঘটতে থাকে।
নির্ণয় যেভাবে
আলঝেইমারসের জন্য বিশেষ কোনো পরীক্ষা নেই। আলঝেইমারস রোগ মূলত লক্ষণ সমষ্টি দেখে ডায়াগনসিস করা হয়। প্রাথমিক অবস্থায় লক্ষণ প্রকট থাকে না এবং ধীরে ধীরে সেটা প্রকট হতে থাকে। রুটিন পরীক্ষার ফলাফল সাধারণত স্বাভাবিক থাকে। কিছু পরীক্ষায় মস্তিষ্কের বয়সজনিত ক্ষয়, কার্যক্ষমতার হ্রাস ধরা পড়তে পারে। তবে ডিমেনশিয়ার অন্যান্য কারণও খুঁজতে হবে। ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, হাইপারটেনশন ইত্যাদি এক বা একাধিক রোগ এর সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে।
চিকিৎসা
কিছু ওষুধ রোগীর স্মৃতিশক্তি অল্প কিছুদিন ধরে রাখতে সাহায্য করে বটে, তবে সময়ের সঙ্গে কার্যকারিতা হ্রাস পায়। নানা রকম জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি একই সঙ্গে আলঝেইমারস রোগেও ভুগতে পারেন। সব রোগের সঙ্গে আলঝেইমারসের আশঙ্কা বিবেচনায় রেখে বয়স্ক রোগীদের চিকিৎসা করা প্রয়োজন।
কীভাবে পরিচর্যা করতে হবে
ওষুধের পাশাপাশি সেবা ও পরিচর্যা, ভালোবাসা, পারিবারিক, সামাজিক ও সাংগঠনিক সাহায্য প্রয়োজন হয়। এসব রোগীর মস্তিষ্ক স্মৃতিশক্তি হারালেও অনুধাবনের শক্তি, ইগো, সম্মানবোধ এবং ব্যক্তিত্ব হারান না। তিনি কোনো অবহেলা, অযত্ন বা দুর্ব্যবহার আশা করেন না। নিজের অক্ষমতার জন্য তিনি উৎকণ্ঠিত, উদ্বিগ্ন থাকেন এবং অসহায় বোধ করেন। তিনি একজন বিশ্বস্ত সাহায্যকারী সঙ্গী আশা করেন। প্রিয়জন থেকে দূরে থাকতে ও অপরিচিতকে ভয় পান। আর নাতি–নাতনিদের ভূমিকা খুব গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। কারণ, তাদের সেবাকে দাদা-দাদি খুবই পছন্দ করেন, বন্ধু হিসেবে মনে করেন, বিশ্বাস করেন এবং ভালোবাসেন।
কাছের আত্মীয়দের পরামর্শ
ডিজেনেরাটিভ স্নায়ুরোগের ব্যাপারে রোগী, আত্মীয়স্বজন ও পরিচর্যাকারীদের যথাযথ ব্যাখ্যা, পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ দানের দরকার হয়। নিয়মিত পুনর্মূল্যায়ন, চিকিৎসার সাফল্য পর্যালোচনা এবং নব উদ্ভূত লক্ষণ ও সমস্যার ক্ষেত্রে নতুন ব্যবস্থাপনা দরকার হয়। বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করতে হবে। রোগীর পারিবারিক ঝামেলার বিষয়গুলো রোগীর স্মৃতিশক্তি যথেষ্ট বর্তমান থাকার সময়েই সম্পাদন করতে হবে। বিপজ্জনক বিষয় এড়িয়ে শান্ত ও বন্ধুসুলভ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
রোগীর রোগ ভালো হবে না, ক্রমশ খারাপ হবে, প্রিয়জন বা পরিচর্যাকারীকে চিনতে পারবেন না, তাদের সঙ্গে বিনা কারণে দুর্ব্যবহার করবেন, অর্থনৈতিক দিক থেকে তা হবে বিপর্যয়কর, সামাজিক দিক থেকে অবমাননাকর, অথচ সবকিছু সহ্য করে মৃত্যু পর্যন্ত তার সেবা করে যেতে হবে। প্রিয়জন ও পরিচর্যাকারীকে বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে। এ ধরনের রোগীর সেবা করতে গিয়ে পরিচর্যাকারী নিজের জীবন সম্পর্কেও নিরাশ হয়ে পড়েন। তাই তাদের জন্যও যথাযথ প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতার প্রয়োজন।