একদিন ঘুম থেকে জেগে দেখলেন হঠাৎ মুখের এক দিক বেঁকে গেছে। কথা বলতে গিয়ে বা হাসতে গেলে ঠোঁটটা বিশ্রীভাবে একদিকে ঝুলে পড়ছে, মুখের এক দিক আর নাড়তে পারছেন না। এমন অবস্থাকে সবাই বলে থাকেন যে ‘মাইল্ড স্ট্রোক’ হয়েছে।
আসলে স্ট্রোক বা পক্ষাঘাতেও মুখ বেঁকে যেতে পারে বইকি, যখন দেহের একটি দিক পুরোপুরি পক্ষাঘাতগ্রস্ত বা প্যারালাইসিস হয়ে যায় তখন এর সঙ্গে মুখও আক্রান্ত হয়। কিন্তু পক্ষাঘাত ছাড়াও এমন ঘটনার কারণ স্নায়ুগত সমস্যা। চিকিৎসাবিজ্ঞানে এর নাম বেলস পালসি।
কী হয় বেলস পালসিতে?
ফেশিয়াল নার্ভ বা মুখমণ্ডলের স্নায়ু আমাদের মুখের পেশিগুলোতে নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো কারণে এই স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হলে মুখের পেশি শক্তি হারায় ও মুখ বেঁকে যায়। এর সবচেয়ে বড় কারণ হলো হারপিস ভাইরাস সংক্রমণ। এ ছাড়া ডায়াবেটিস, স্ট্রোক ইত্যাদি কারণেও ফেশিয়াল নার্ভ অকার্যকর হতে পারে। তবে বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কোনো কারণ নির্ণয় করা যায় না। তখনই একে বলা হয় বেলস পালসি। বেলস পালসি হলে মুখের এক দিকটা ঝুলে পড়ে, পেশি নাড়ানো যায় না, চোখ খুলতে ও বন্ধ করতে সমস্যা হয়। অনেক সময় চোখ খুলেই থাকে। খেতে গিয়ে মুখের এক দিক দিয়ে সব পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়। চেষ্টা করেও কপাল কোঁচকানো যায় না। কখনো কানের ভেতর বা পেছনে ব্যথা হয়, কানে বেশি শোনা যায়। জিবের স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
চিকিৎসা কী?
যত দ্রুত চিকিৎসকের শরণাপন্ন হবেন, ততই ভালো। কেননা, স্টেরয়েড বা অ্যান্টিভাইরাল চিকিৎসা ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শুরু করলেই সবচেয়ে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া চিকিৎসক বিশেষ ধরনের ব্যায়াম শিখিয়ে দেবেন, যা দিনে কয়েকবার করতে হবে। এই সময় চোখ ও মুখের যত্ন নিতে হবে। যেহেতু চোখ সহজে বন্ধ হয় না, তাই তা শুষ্ক হয়ে যায়। চোখের ড্রপ ব্যবহার ছাড়াও বিশেষ প্যাচ ব্যবহার করে চোখ বন্ধ রাখা হয়। খাবার খেতে সমস্যা হলে ধীরে ধীরে তরল বা আধা তরল খাবার খেতে হবে। বেশির ভাগ বেলস পালসি কয়েক দিন বা কয়েক মাসের মধ্যেই সেরে যায়। কিছু ক্ষেত্রে সমস্যাটা দীর্ঘমেয়াদিও হতে পারে। বেলস পালসি গুরুতর গোছের কোনো রোগ নয়, তবে এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়াটাই উত্তম