মেনিনজাইটিস হল এক ধরনের ভয়াবহ সংক্রমণ যা মূলত ব্রেন ও স্পাইনাল কর্ডের চারিদিকে যে সুরক্ষামূলক আস্তরণ থাকে, তাকে আক্রমণ করে 2,5। এই রোগের কারণ মূলত ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাক2। মেনিনগোকক্কাল মেনিনজাইটিস রোগের কারণ হল নেইসেরিয়া মেনিনজিডিটিস নামক ব্যাক্টেরিয়া, যার মধ্যে মারণ রোগ হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে মহামারী তৈরি করার মতো ক্ষমতা রয়েছে#। এই রোগ এক ব্যক্তি থেকে অন্যের মধ্যে খুব সহজেই কফ বা হাঁচি-কাশির সাথে শ্বাসযন্ত্র থেকে বেরিয়ে আসা কণার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে6,7।
এই রোগে আক্রান্তরা খুব দ্রুত মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যায়, এমনকী রোগের উপসর্গ দেখা দেওয়ার ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে রোগীর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটে থাকে2। যাঁরা এই রোগের কবল থেকে বেঁচে ফিরেছেন, তেমন ৫ জনের মধ্যে প্রতি ১ জন জীবনভর বধিরতা, ব্রেন ড্যামেজ, মানসিক অক্ষমতা বা অঙ্গহানির মতো জটিলতা নিয়ে বেঁচে থাকেন।8
যদিও মেনিনগোকক্কাল রোগের সংক্রমণ যে কোনও বয়সে হতে পারে, কিন্তু পর্যবেক্ষণ করে দেখা গিয়েছে যে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই রোগে আক্রান্ত হয় ৫ বছরের কম বয়সি শিশু, কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তি, কিশোর-কিশোরী এবং তরুণ-তরুণীরা।9
এই রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার জন্য অনেক আধুনিক ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে। এমনই একটি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা হল টীকাকরণ এবং এটি বহু প্রাণ বাঁচাতে ও জটিলতা কমাতে পারে।6তাছাড়াও, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার সুঅভ্যাস এবং এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে শিশুদের সামাজিক দূরত্ববিধি বজায় রাখার অভ্যাসও অত্যন্ত জরুরি এই রোগ প্রতিরোধ করার জন্য।6,10এখানে মেনিনগোকক্কাল রোগ সম্পর্কিত কিছু সাধারণ জিজ্ঞাস্য উল্লেখ করা হল, তার পাশাপাশি জানানো হল কোন লক্ষণগুলি দেখে এই রোগ চিহ্নিত করতে পারবেন এবং এর চিকিৎসা কী Youtube Video
মেনিনগোকক্কাল মেনিনজাইটিস কীভাবে ছড়ায় এবং এর উপসর্গগুলি কী কী?
হাঁচি-কাশি থেকে শুরু করে খাবার-পানীয় ভাগ করে খাওয়া এবং ছোট বাড়িতে থাকা, প্রতিদিনের এমনই নানা আচরণের ফলে মেনিনগোকক্কাল মেনিনজাইটিস ছড়িয়ে পড়তে পারে।6,7 এই ব্যাক্টেরিয়া মূলত রোগীর নাকে ও গলায় বাসা বাঁধে, এবং সামাজিক দূরত্ববিধি মেনে না চললে সহজেই আক্রান্ত ব্যক্তির থেকে অন্য কারও মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।6,7
এই রোগের উপসর্গ প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে, মেনিনজাইটিস রোগের প্রাথমিক লক্ষণ সাধারণ ঠান্ডা লাগা এবং ফ্লু-এর মতো। এর পরেই খুব বেশি জ্বর বা কাঁপুনি, খিঁচুনি, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, পেশীতে অসহ্য যন্ত্রণা, গাঢ় বেগুনী রঙের গুঁটি, আলো সহ্য করতে না পারা এবং ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়ার মতো লক্ষণ দেখা যেতে পারে।2
মেনিনজাইটিস থেকে রক্ষার উপায়
আপনার সন্তানকে মেনিনগোকক্কাল রোগের হাত থেকে বাঁচানোর সবচেয়ে কার্যকরী উপায় হল টীকাকরণ।10
বিভিন্ন প্রকার মেনিনগোকক্কাল রোগের জন্য বিভিন্ন ধরনের টীকা উপলব্ধ রয়েছে। ভারতে উপলব্ধ রয়েছে মেনিনগোকক্কাল ACWY টীকা, এটি চার প্রকার মূল মেনিনগোকক্কাল রোগের হাত থেকে সুরক্ষা প্রদান করতে সাহায্য করে।11
মেনিনগোকক্কাল হল একটি কঠিন রোগ এবং এর ফলে একাধিক সমস্যা তৈরি হতে পারে, কিন্তু শিশুদের সঠিক সময়ে টীকা প্রদান করলে, তাদের এই রোগের প্রকোপ থেকে রক্ষা করা সম্ভব। যদি এর আগে আপনি আপনার শিশুকে এই টীকা প্রদান না করে থাকেন, তাহলে শীঘ্রই আরও তথ্য জানার জন্য আপনার চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করুন। হাতে হাত মিলিয়ে, আমরা মেনিনজাইটিস রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করব এবং সেই যুদ্ধে জয়লাভও করব।