অনিদ্রার লক্ষণ
- দীর্ঘ সময় বিছানায় শুয়ে থাকার পরও ঘুম না আসা।
- রাতে অনবরত হাঁটা চলা করা।
- তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে যাওয়া ও পরে ঘুম না আসা।
এই ধরনের সমস্যা যত বেশি দিন থাকবে তত বেশি স্বাস্থ্যগত সমস্যা দেখা দেবে।
অনিদ্রার কারণে সাধারণত নিচের সমস্যাগুলো দেখা যায়
- অমনোযোগ, অস্থিরতা, স্মৃতি হ্রাস।
- শক্তি ও অনুপ্ররণার অভাব।
- অস্বস্তি, হতাশা ও উদ্বেগ।
- মাথা-ব্যথা, শরীরে-ব্যথা, গ্যাসের সমস্যা ইত্যাদি।
যদি ক্লান্তিবোধ করেন ও ঘুমের সমস্যা কাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে অথবা সুসম্পর্কে বজায় রাখতে বাধা সৃষ্টি করে তবে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
অনিদ্রার ধরণ
অনিদ্রার সময়ের ব্যাপ্তির উপর ভিত্তি করে একে দুই ভাগে ভাগ করা যায়
‘অ্যাকিউট’ বা তীব্র অনিদ্রা: কোন বিশেষ কারণে অনিদ্রা দেখা দেয় যেমন- মানসিক চাপ বা উদ্বেগ এবং কয়েকদিন বা সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
ক্রনিক বা দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রা: এটা সাধারণত শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের কারণে হয়ে থাকে এবং তা দীর্ঘদিনের জন্য- প্রতি সপ্তাহে তিনবার করে কমপক্ষে তিন মাস ব্যাপী।
গবেষণায় দেখা গেছে যে, আমেরিকানদের মধ্যে প্রতি বছর ২৫ শতাংশের তীব্র অনিদ্রার সমস্যা দেখা দেয় এবং তার ৭৫ শতাংশই দীর্ঘস্থায়ী অনিদ্রার সমস্যায় পরিণত না হয়ে সমাধান হয়ে যায়।
কারণ
সাধারত, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক এই দুই কারণে অনিদ্রা দেখা দেয়। এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য হল- মাধ্যমিক অনিদ্রা সাধারণত অন্য কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা বা ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে হয়ে থাকে। আর প্রাথমিক অনিদ্রা হল প্রধান অসুস্থতা।
প্রাথমিক অনিদ্রা
এটা কোনো স্বাস্থ্য জনিত সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত না এটা সাধারণত তীব্র অনিদ্রা। এটা মূলত নিম্নোক্ত কারণের জন্য হয়ে থাকে-
মানসিক চাপ: চাকুরির সাক্ষাৎকার, পরীক্ষা এমন কি জীবনের বড় কোনো পরিবর্তন যেমন- কাছের কারও মৃত্যু বা সম্পর্কে বিচ্ছেদ ইত্যাদি নানা কারণে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে।
আরামদায়ক ঘুমের পরিবেশের অভাব: উদাহরণ স্বরূপ, ঘুমানোর সময় বেশি গরম, বা ঠাণ্ডা ইত্যাদি কারণেও ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়।
ঘুমের অনিয়মিত রুটিন: অস্বাস্থ্যকর ঘুমের অভ্যাস যেমন- প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে না যাওয়া। ঘুমের রুটিনের পরিবর্তন এই ধরনের অনিদ্রার কারণ।
এই ধরনের সমস্যা চিকিৎসকের সাহায্য ছাড়াই সমাধান করা সম্ভব।
মাধ্যমিক অনিদ্রা
সাধারণত, স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে এই ধরণের অনিদ্রার সমস্যা দেখা দেয়। এছাড়াও, বিভিন্ন রকম ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ফলস্বরূপ এমনটা দেখা দিতে পারে।
এর ফলে নানা রকমের সমস্যা দেখা দেয়। যেমন-
ঘুমের সমস্যা: গবেষণায় দেখা গেছে, ঘুমের সমস্যা আছে এমন ৩৮ শতাংশ লোকের অনিদ্রা দেখা যায় এবং ৬০ শতাংশের মধ্যে পায়ের অস্বস্তির সমস্যা আছে।
দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা: দীর্ঘস্থায়ী শারীরিক সমস্যা যেমন- শ্বাসকষ্ট, অ্যাসিডিটি, দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা, হরমোন ও থায়রয়েড ও স্নায়বিক সমস্যা যেমন- পারকিনসন ইত্যাদি থেকে ঘুমের সমস্যা দেখা দেয়।
গর্ভাবস্থা: গবেষণা থেকে জানা গেছে, গর্ভাবস্থায় প্রায় ৭৮ শতাংশেরই নিদ্রাহীনতার সমস্যা দেখা দেয়। গর্ভধারণের তিন মাসের মাথায় এই ধরনের সমস্যা হয়। কারণ এই সময় সন্তান বৃদ্ধি পায় এবং শরীরের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়।
মানসিক স্বাস্থ্য: মানসিক চাপ ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে। উদ্বেগ ও হতাশা অনিদ্রার সৃষ্টি করে। এমনটা দেখা দিলে থেরাপি নেওয়ার প্রয়োজন।
অতিরিক্ত ক্যাফেইন, নিকোটিন ও অ্যাল্কোহল ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে। দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি থাকে।
ওষুধ: উদ্বেগ জনিত সমস্যার কারণে দেওয়া ওষুধ, উচ্চ রক্ত চাপের জন্য আলফা, বেটা এবং আর্থ্রাইটিসের কারণে দেওয়া স্টেরয়েডের জন্য অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা
এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। থেরাপি, জীবন যাত্রার পরিবর্তন এমনকি প্রাকৃতিক কিছু কৌশল অনুসরণ করেও অনিদ্রার সমস্যা নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
প্রাকৃতিক উপায়: ঘুমানোর আগে আরামাদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করুন ও মন ভালো রাখে এমন কাজ করুন। রাতে ঘুমানো আগে মোবাইল ব্যবহার না করে আরাম করে এক কাপ ক্যামোমাইল চা পান করুন, আরাম অনুভূত হবে।
নিয়মিত শরীরচর্চা: গবেষণায় দেখা গেছে, সপ্তাহে পাঁচ দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট শরীরচর্চা করা হলে ঘুমের মান উন্নত হয়।
ধ্যান: ধ্যান মানুষের মনকে শান্ত রাখে ও মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। নিয়ম মেনে ধ্যান করা হলে ঘুম ভালো হয়।