কোনাে সার্ভার বা ওয়ার্কস্টেশনের জন্য নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড নির্বাচনের সময় তিনটি বিষয়ে নজর দেয়া দরকার:
- আপনি কোন ধরনের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করবেন তার উপর নির্ভর করে নেটওয়ার্ক এডাপ্টার নির্বাচন করতে হবে। ইথারনেট ব্যবহার করতে চাইলে ইথারনেট এডাপ্টার আর টোকেন -রিং নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে চাইলে টোকেন -রিং নেটওয়ার্ক এডাপ্টার নিতে হবে। ইথারনেট নেটওয়ার্ক এডাপ্টার টোকেন রিং নেটওয়ার্কের কিংবা টোকেন রিং নেটওয়ার্ক অ্যাডাপ্টার ইথারনেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করতে পারবেন না।
- আপনি নেটওয়ার্কে যেধরনের মিডিয়া ব্যবহার করতে চান তার উপযুক্ত কানেক্টর নেটওয়ার্ক এডাপ্টারে থাকতে হবে। কোনো কোনাে ইথারনেট এডাপ্টার একই সাথে একাধিক ধরনের কানেক্টর থাকে। এরকম এডাপ্টার হলে আপনি কয়েক ধরনের মিডিয়া ব্যবহারের সুযােগ পাবেন। তবে মনে রাখা দরকার, সেই এডাপ্টারকে একসাথে কেবল একটি মিডিয়ার সাথেই যুক্ত করতে পারবেন। কোএক্সিয়াল ক্যাবলের জন্য BNC কানেক্টর, ট্যুইস্টেড পেয়ার ক্যাবলের জন্য RJ-45 কানেক্টর ও ফাইবার অপটিকের জন্য SC কিংবা ST কানেক্টর থাকা দরকার।
- নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড কি আপনার কম্পিউটারের মাদারবোর্ডে বসাতে হবে। মাদারবোর্ডের কোন ধরনের সুট খালি আছে সেদিকেও নজর দিতে হবে। কেননা PCI এবং ISA এ দুধরনের সুটের জন্য নেটওয়ার্ক এডাপ্টার ভিন্ন। যদি PCI স্লট ফাঁকা থাকে তাহলে PCI নেটওয়ার্ক ইন্টারফেস কার্ড ব্যবহার করাই উত্তম।(বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ডিভাইস)
-
নেটওয়ার্ক বর্ধিত করা
আপনি যখন কোনাে একটি নেটওয়ার্ক গড়ছেন তখন এতে বেশ কিছু কম্পিউটার, কিছু প্রিন্টার ও অন্যান্য রিসাের্স থাকতে পারে। এটি হলাে একটি খুবই সহজ নেটওয়ার্ক বেশিরভাগ লােকাল এরিয়া নেটওয়ার্কই এ রকম হয়। কিন্তু এ নেটওয়ার্কে কম্পিউটার ও অন্যান্য ডিভাইসের সংখ্যা বাড়তে থাকলে কী হবে? সেক্ষেত্রে আপনার নেটওয়ার্ককে বাড়ানাের ব্যবস্থা করতে হবে। এমন কিছু ডিভাইস আছে যার সাহায্যে একটি লােকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক কে বর্ধিত করা যেতে পারে। এরকম ডিভাইসের মধ্যে অন্যতম হলো রিপিটার, হাব, ব্রিজ, রাউটার, ব্রাউটার, ইত্যাদি। এসব ডিভাইস একেকটি একেক ধরনের কাজ করে। কোনােটি কাজ করে নেটওয়ার্ক লেয়ারে আবার কোনােটি বা কাজ করে ডাটালিঙ্ক কিংবা ফিজিক্যাল লেয়ারে।
নেটওয়ার্ক সেগমেন্ট
বাস্তবে আমরা একই নেটওয়ার্ক কয়েকটি ভাগে ভাগ করলে সেটিকে বলে থাকি নেটওয়ার্ক সেগমেন্ট। বিভিন্ন কারণে নেটওয়ার্ক সেগমেন্ট তৈরির দরকার পড়ে। এর প্রধান কারণ হলাে নেটওয়ার্ক ট্রাফিককে একটি গন্ডির মধ্যে রাখা। এই সেগমেন্ট তৈরি করার জন্য বেশ কিছু কানেক্ট ডিভাইস ব্যবহৃত হয়। কোন নেটওয়ার্কে কোন ডিভাইস যােগ করলে কিংবা নেটওয়ার্ক কে বর্ধিত করলে নেটওয়ার্কের পারফরম্যান্স কমে যেতে পারে। যেমন কোএক্সিয়াল ক্যাবল ব্যবহার করে বাস টপোলজি গড়ে তােলা হলে বাসের দৈর্ঘ্য হতে পারে ১৮৫ মিটার। একে আরাে বর্ধিত করতে চাইলে এর সঙ্গে বিশেষ ডিভাইস ব্যবহার করতে হবে যা সিগন্যাল বুস্ট বা এমপ্লিফাই করতে পারে। নেটওয়ার্ক বেশি করেন ডিভাইস যােগ করার অর্থই হলাে নেটওয়ার্ক ট্রাফিক বাড়ানাে। নেটওয়ার্ক ট্রাফিক বাড়লে তাতে সংঘর্ষ বা কলিশন বাড়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যায়। সংঘর্ষ বাড়া মানে নেটওয়ার্কের পারফরম্যান্স কমে যাওয়া। এই সংঘর্ষ যাতে কম হয় সেজন্য আমরা বিভিন্ন ওয়ার্কস্টেশনের ট্রাফিককে কিছু নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যে সীমাবদ্ধ করে নিতে পারি। রাস্তায় জট লাগার হাত থেকে বাঁচার জন্য ট্রাফিক পুলিশ যেমন রিকশা ও যান্ত্রিক যানের রাস্তা ভিন্ন করে দেয়ার চেষ্টা করছেন তেমনি আমরা নেটওয়ার্কে বিভিন্ন ওয়ার্কস্টেশনের ট্রাফিক কোনটি কোন পথে যেতে পারবে তা নির্ধারণ করে দিতে পারি। বিশেষ কিছু ডিভাইস ব্যবহার করে। কোনাে নেটওয়ার্ককে কয় ভাগে ভাগ করতে হবে কিংবা আদৌ বিভক্ত করার দরকার হবে কি না তা নির্ধারিত হয় দুটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে: ব্রডকাস্ট ডোমেইন (broadcast domain) এবং কলিশন ডোমেইন (collision domain)।
প্রথমেই আমরা জানব ব্রডকাস্ট ডােমেইন সম্পর্কে। ব্রডকাস্ট বলতে আমরা বুঝি এমন সিগন্যাল যা ওই নেটওয়ার্কের সবকটি ডিভাইসের নিকট পৌছে। ব্রডকাস্টকে আমরা তুলনা করতে পারি চিৎকারের সাথে। ক্লাশের কোন ছাত্রের নাম রহিম তা জানার জন্য শিক্ষক মাঝে মাঝে চিৎকার করেন এবং সবাই সেই কথা শােনে কিন্তু। উত্তর দেয় কেবল সেজনই যার নাম রহিম। তেমনি নেটওয়ার্কে ব্রডকাস্টের ব্যবহারও হয়ে থাকে এধরনের কোনাে ক্লায়েন্টের নামের বিপরীতে তার আইপি এড্রেস ও লজিক্যাল এড্রেস পাওয়ার জন্য। কোনাে নেটওয়ার্কে একটি ব্রডকাস্ট যেসব ডিভাইসের নিকট পৌছে তাদেরকে নিয়ে যে গ্রুপ তাকেই বলা হয় ব্রডকাস্ট ডােমেইন। প্রায় সবধরনের নেটওয়ার্কেই কিছু কিছু কাজের জন্য ব্রডকাস্ট ব্যবহৃত হয়। ব্রডকাস্টের বড় অসুবিধা হলাে এই যে এটি নেটওয়ার্কে অযথা ট্রাফিক তৈরি করে। যে মেসেজ একজনকে জানানাের দরকার সেটি অযথা অনেকের নিকট পৌছে। ব্রডকাস্ট ব্যবহৃত হয় এমন নেটওয়ার্কে নােডের সংখ্যা বাড়ার সাথে সাথে ব্রডকাস্টের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। কোন ক্লাসের সকল ছাত্র একজন আরেকজনের নাম জানার জন্য যদি চিৎকার শুরু করে তাহলে অবস্থাটি কী দাঁড়াবে চিন্তা করুন। তেমনি যদি নেটওয়ার্কের সব স্টেশনই ব্রডকাস্ট শুরু করে তাহলে ব্রডকাস্ট ট্রাফিকেই পুরাে নেটওয়ার্ক প্লাবিত হবে। সেকারণে নেটওয়ার্ক ডিজাইনে ব্রডকাস্টকে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করা হয়। এটি করা হয়ে থাকে বড় নেটওয়ার্ককে বেশ কটি ছােট ছােট ব্রডকাস্ট ডডামেইনে বিভক্ত করে। এটি করার বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে জানব পরবর্তীতে।(বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ডিভাইস)
নেটওয়ার্ক সেগমেন্ট করার জন্য আরেকটি নিয়ামক হলাে কলিশন ডােমেইন। আমরা জানি একই সময়ে দুটি ডিভাইস একই মিডিয়ার মাধ্যমে সিগন্যাল ট্রান্সমিট করতে চাইলে দুই সিগন্যালে সংঘর্ষ বা কলিশন ঘটে। কোনাে নেটওয়ার্কে কলিশন ঘটলে ওই নেটওয়ার্কের সকল ডিভাইস সেই কলিশন অস্তিত্ব টের পায় এবং তারা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপেক্ষা করে কোনাে সিগন্যাল না পাঠিয়ে। কলিশনের কারণে এভাবে নেটওয়ার্কের পারফরম্যান্স কমে যায়। একটি কলিশন ঘটলে যেসব ডিভাইস সেই কলিশনের অস্তিত্ত্ব টের পায় তাদের নিয়ে গড়ে উঠে একটি কলিশন ডোমেইন। সাধারণত ইথারনেট নেটওয়ার্ক ব্রডকাস্ট ডোমেইন এবং কলিশন ডােমেইন একই হয়ে থাকে। কিন্তু কিছু নেটওয়ার্ক ডিভাইস, যেমন ব্রিজ, সুইচ, ইত্যাদি ব্যবহার করে কলিশন ডােমেইন ও ব্রডকাস্ট ডোমেইন ভিন্ন করে দেয়া যায়।(বিভিন্ন নেটওয়ার্ক ডিভাইস)
একটি নেটওয়ার্ককে দু’ভাবে সম্প্রসারণ করা যেতে পারে:
- একই নেটওয়ার্কের মধ্যে নূতন ডিভাইস বা নােড যােগ করে তাকে বর্ধিত করা। একে বলা হয় নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি।
- এক নেটওয়ার্কের সাথে অন্য নেটওয়ার্ক যুক্ত করা। একে বলা হয় ইন্টারনেটওয়ার্কিং বা ইন্টার নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি।
- আমরা প্রথমে নেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি ও পরে ইন্টারনেটওয়ার্ক কানেক্টিভিটি ডিভাইস সম্পর্কে জানব।
লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক বিভক্তিকরণ
কোনাে LAN-কে একাধিক অংশে বিভক্ত করার জন্য বেশ কিছু ডিভাইস যেমন- সুইচ, ব্রিজ ও রাউটার ব্যবহার করা যায়। এসব ডিভাইস এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যাতে কলিশন সিগন্যাল এসব ডিভাইসের মধ্য দিয়ে অন্য অংশে যেতে না পারে। কিন্তু কিছু কিছু ডিভাইস যেমন রিপিটার ও হাব কলিশনকে প্রতিটি সেগমেন্টে যেতে দেয় কোনাে বাধা ছাড়াই। এসব ডিভাইস ব্যবহার করার সময় নজর রাখতে হবে যাতে একই কলিশন ডােমেইনে নােডের সংখ্যা বেশি না হয়। তাত্ত্বিকভাবে একটি কলিশন ডােমেইনে ১০২৪টি নােড থাকতে পারে, আসলে তা বাস্তবে করা যাবে না। একটি কলিশন ডোমেইন ৩০টি নোড ব্যবহার করলেই সেখানে সেগমেন্ট তৈরি করা হবে বুদ্ধিমানের কাজ।