ক্যাপসিকাম চাষ করার জন্য বাজার থেকে কেনা ক্যাপসিকাম থেকেই বীজ সংগ্রহ করতে পারেন। আবার বাজারে বীজ কিনতেও পাওয়া যায়। ক্যাপসিকাম থেকে বীজ সংগ্রহ করতে চাইলে পরিপক্ক ক্যাপসিকাম থেকে বীজ সংগ্রহ করতে হবে। এরপর মাটি দিয়ে একটি পাত্র পূর্ণ করুন এবং বীজগুলি বপন করুন। আপনি যে কোন পাত্রে এই উদ্ভিদ লাগাতে পারেন, তবে গভীরতা কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ ইঞ্চি হতে হবে। উদ্ভিদ লাগানোর পরে, আর্দ্রতা বজায় রাখার জন্য নিয়মিত জল দিন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যে এর থেকে বীজ অঙ্কুরিত হবে।
আর বীজ দিয়ে চাষ করতে চাইলে বীজ থেকে প্রথমে চারা তৈরি করে নিতে হয়। প্রতি শতকের জন্য ১ গ্রাম বীজ দরকার হয়। বীজগুলোকে ১২ ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে আগে থেকে তৈরি করে রাখা বীজতলায় ১০ সেন্টিমিটার দূরে দূরে লাইন করে বীজ বুনতে হবে। বীজতলায় প্রয়োজনানুসারে ঝাঝরি দিয়ে হালকাভাবে সেচ দিতে হবে। বীজ গজাতে ৩-৪ দিন সময় লাগে। বীজ বপনের ৭-১০দিন পর চারা ৩-৪ পাতা বিশিষ্ট হলে ৯-১২ সে.মি. আকারের পলি ব্যাগে স্থানান্তর করতে হবে। পটিং মিডিয়াতে ৩:১:১ অনুপাতে যথাক্রমে মাটি, কম্পোস্ট এবং বালি মিশাতে হবে। পরে পলিব্যাগ ছায়াযুক্ত স্থানে স্থানান্তর করতে হবে, যাতে প্রখর সূর্যালোকে এবং ঝড় বৃষ্টি আঘাত হানতে না পারে।
গাছের পরিচর্যা
অঙ্কুরোদগমের আগে গাছটি যেন কম সূর্যালোকে থাকে, এই সময়ে আপনি সেটিকে বাড়ির ভিতরে রাখতে পারেন। অঙ্কুরোদগম হওয়ার পরে, আপনি টবটিকে বারান্দায় সূর্যালোকে রাখতে পারেন।
তবে এই গাছটি প্রখর সূর্যের আলো যেন না পায়, সেদিকে নজর রাখতে হবে। যে টবে বা পাত্রে আপনি এই গাছটি রোপণ করেছেন, তার মাটিতে যেন ভাল পরিমাণে আর্দ্রতা বজায় থাকে সেদিকে নজর রাখতে হবে। চারা পড়ন্ত বিকেলে রোপণ করা উত্তম । চারা রোপণের পর গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে।ক্যাপসিকামের গাছ বৃদ্ধি পেতে প্রায় ৪৫ থেকে ৬০ দিন সময় লাগে।
আর জমিতে চাষ করলে মনে রাখতে হবে মিষ্টি মরিচ খরা ও জলাবদ্ধাতা কোনোটিই সহ্য করতে পারে না। মাঠে চারা লাগানোর জন্য বেড তৈরি করতে হবে। প্রতিটি বেড প্রস্থে ৭৫ সে. মি. হতে হবে এবং লম্বায় দুটি সারিতে ২০টি চারা সংকোলনের জন্য ৯ মিটার বেড হবে। দু’টি সারির মাঝখানে ৩০ সে. মি. ড্রেন করতে হবে। জমিতে প্রয়োজন মতো সেচ দিতে হবে। আবার অতিরিক্ত সেচ দিলে ঢলে পড়া রোগ দেখা দিতে পারে। অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি না হয় সে জন্য সুষ্ঠু নিকাশ ব্যবস্থা করতে হবে। কোনো কোনো জাতে ফল ধরা অবস্থায় খুঁটি দিতে হয় যাতে গাছ ফলের ভারে হেলে না পড়ে। আগাছানাশক বা হাত দিয়ে অথবা নিড়ানি দিয়ে প্রয়োজনীয় আগাছা দমন করতে হবে।
কীটপতঙ্গ এবং পোকামাকড় নিয়ন্ত্রণ
ক্যাপসিকাম বা মিষ্টি মরিচে কিছু পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ হয়ে থাকে। এগুলোর মধ্যে আছে জাবপোকা. থ্রিপস পোকা, লালমাকড়, এ্যানথ্রাকনোজ রোগ, ব্লাইট রোগ ইত্যাদি। কোনও রোগ বা পোকার আক্রমণ হলে টক্সিন মুক্ত দ্রবণ ব্যবহার করাই শ্রেয়। এক চামচ সাবান গুঁড়া এবং নিম তেল এক টেবিল চামচ নিন, উভয় এক লিটার পানিতে মিশ্রিত করুন। প্রতি সপ্তাহে এই দ্রবণ একবার স্প্রে করুন।
সার ব্যবহার
সারের জন্য শাকসব্জী এবং ফলের খোসা পচা জল, পাতা পচা ইত্যাদি মাটিতে প্রয়োগ করতে পারেন। এগুলি মাটির গুণমানকে উন্নত করে এবং উদ্ভিদকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে।
আর যদি জমিতে চাষ করা হয় তাহলে মিষ্টি মরিচ চাষে প্রতি শতাংশে গোবর ৪০ কেজি, ইউরিয়া ১ কেজি, টিএসপি ১.৪ কেজি, এমপি ১ কেজি, জিপসাম ৪৫০ গ্রাম এবং জিংক অক্সাইড ২০ গ্রাম প্রয়োগ করতে হবে। জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর, টিএসপি, জিংক অক্সাইড, জিপসাম, ১/৩ ভাগ এমপি এবং ১/৩ ভাগ ইউরিয়া চারা রোপণের গর্তে প্রয়োগ করতে হবে। বাকি ২/৩ ভাগ ইউরিয়া এবং এমপি পরবর্তীতে দুই ভাগ করে চারা লাগানোর যথাক্রমে ২৫ এবং ৫০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে।
ফসল সংগ্রহ
মিষ্টি মরিচ সাধারণত পরিপক্ক সবুজ অবস্থায় লালচে হওয়ার আগেই মাঠ থেকে উঠানো যায়। সাধারণত সপ্তাহে একবার গাছ থেকে ফল সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। বেশিরভাগ গাছে একবারে প্রায় ৪ থেকে ৫ টি ক্যাপসিকাম আসে। একবার গাছ ভালো করে বিকশিত হয়ে গেলে প্রথম যখন ফল আসবে তখন তা সংগ্রহ না করাই ভালো। এতে গাছ দৃঢ় হয়। দ্বিতীয়বার থেকে ফল সংগ্রহ করাই ভালো। ফল সংগ্রহের পর ঠান্ডা অথচ ছায়াযুক্ত স্থানে বাজারজাতকরণেল পূর্ব পর্যন্ত সংরক্ষণ করতে হয়। তবে ফল সংগ্রহের সময় প্রতিটি ফলে সামান্য পরিমাণে বোটা রেখে দিতে হবে।