‘হাওর-বাওর-মইষের শিং, এই তিন লইয়া মৈমনসিং।
ময়মনসিংহে উর্বর জমি নিয়ে সহজ-সরল মানুষের ভূমি ময়মনসিংহ লোকজ শিল্প-সাহিত্যের জন্য প্রসিদ্ধ। ময়মনসিংহের মানুষ তুলনামূলক কিছুটা অলস এবং রসপ্রিয় ভোজন রসিক। ময়মনসিংহের রয়েছে ঐতিহ্যবাহী কিছু খাবার।
ঢেঁকিতে ধান ভানার পর যে চালগুলো ভেঙে যায় সেই ভাঙা চালগুলোকে বলা হয় খুদি বা খুদ। বৃষ্টির দিনে বিকালে যখন কাজকর্ম থাকে না কারো। তখন কৃষাণবৌ বেশি বেশি পেঁয়াজ-মরিচ দিয়ে তৈরি করে খুদির পিঠা। প্রথমে খুদি, পেঁয়াজ, মরিচ, লবণ আর সামান্য জিরাগুঁড়া দিয়ে মাখিয়ে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখা হয়। তারপর একটা চুলার উপর মাটির পাত্রে কলাপাতা বিছিয়ে তাতে মেশানো উপকরণগুলো ঢেলে দিয়ে আর একটা কলাপাতা উপরে দিয়ে ঢাকনা দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় পাত্রটির মুখ আর মৃদু আঁচে দেয়া হয় চুলার তাপ। কিছুক্ষণ পর হয়ে আসে খুদির পিঠা। পিঠা ভেঙ্গে ভেঙ্গে দেয়া হয় বাড়ির সকলের হাতে হাতে।
গৌরিপুরের কাবক এক অসাধারণ স্বাদের খাবার। যারা খেয়েছেন তাদের জিভে জল চলে আসার কথা। কাবকের জন্য প্রয়োজন দেশি মোরগ, প্রয়োজন মতো আদা, পিঁয়াজ, কাঁচামরিচ, লবণ ও সরিষার তেল। মোরগ জবাই দিয়ে ভালোভাবে শরীর থেকে চামড়া ও লোম ছড়িয়ে নিয়ে মোরগের শরীরের বিভিন্ন অংশ লোহার শিকের ভিতর ঢুকিয়ে আগুনে পোড়াতে হয়। তারপর ঢেঁকিঘরে গিয়ে ঢেঁকিতে কুটতে হয় মোরগ, কাঁচামরিচ, আদা ও পিঁয়াজ। এইভাবে মন্ড তৈরি করে সরিষার তেল মাখতে হয়। এইভাবে তৈরি হয় মজাদার কাবক বা মোরগ ভর্তা। কবাক সাধারণত উঠানে চুলার আগুনে পুড়ানো চৈ-পিঠার সাথে খাওয়া হয়। চৈত্রসংক্রান্তিতে বা মেহমানের জন্য এই আয়োজন করা হয়। বাইশ্যা বা ভুইত্তা কলার পিঠা এবং নকশি পিঠাও এ অঞ্চলে খুবই জনপ্রিয় ।
ময়মনসিংহে গারোদের জীবন প্রক্রিয়ায় চু-এর প্রভাব ব্যাপক। জন্ম-মৃত্যু-উৎসব যে কোন অনুষ্ঠানে চু ঐতিহ্যবাহী পানীয়। শিশুর জন্ম উপলক্ষ্যে একপ্রকার চু তৈরি করে থাকে যার নাম চু জাঙ্গি। যে কোন সামাজিক অনুষ্ঠানে খাবার-দাবারের পর চু পানের রীতি ময়মনসিংহে গারো সমাজে প্রচলন রয়েছে। সামাজিক ভাবে স্বীকৃত বলে এটিকে তথাকথিত মদের সাথে তুলনা করা চলে না। আতপ বা বিন্নি ধানের চাল থেকে উৎকৃষ্ট চু তৈরি করা হয়। প্রথমে ভাত রান্না করে ঠান্ডা করে নেয়া হয়। তারপর সেই ভাতের সাথে বিভিন্ন প্রকার ওষধি দিয়ে তৈরি চুমান্থি মিশিয়ে রেখে দিতে হয়। একেক জনের তৈরি পদ্ধতি ও ওষধি একেক রকম। এর সাথে পবিত্রতার সম্পর্ক জড়িয়ে রয়েছে এবং সচরাচর চু তৈরির প্রক্রিয়াটি থাকে গোপন।
তবে, গারোদের মদ বা চু সাধারণত তাদের বিভিন্ন সামাজিক আনুষ্ঠানে খাওয়া হয়। অনেক আগে থেকেই চাচ্চি আসলে চু দিয়ে আপ্যায়ন করা হতো এখনো হয়।এটি এক ধরনের বাব দাদাদের রেখে যাওয়া কালচারও বলতে পারেন। কিন্তু এই চু বর্তমানে কতিপয় আসাধু গারোরা বানিজ্যিকভাবে বিক্রয় করে।যার কারনে অনেক সময়, ভিন্ন জাতিদের কাছে বিভিন্ন কথা শুনতে হয়। যে সব স্থানে চু বিক্রি হয়, সে স্থানগুলো হলো, ময়মনসিংহের রসুলপুর মধুপুরের পঁচিশ মাইলসহ গারো সম্প্রদায় বসবাসস্থল প্রায় প্রত্যেক গ্রামেই চু কোম্পানি রয়েছে,যেখানে অহরহ চু পাওয়া যায়। যা আমাদের গারো সমাজের জন্য হুমকিস্বরূপ।