উভয় গোলার্ধে উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে যে বায়ু সারা বছর ধরে নিয়মিতভাবে নির্দিষ্ট পথে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের দিকে প্রবাহিত হয়, সেই বায়ুকে বলে আয়ন বায়ু।
শ্রেণীবিভাগঃ গতিপথ অনুযায়ী আয়ন বায়ু দুই প্রকার । যথা –
১. উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু (North East Trade Winds): নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলে উষ্ণ ও হালকা বায়ু উপরে উঠে গেলে চাপের সমতা রক্ষার জন্য উত্তর গোলার্ধের কর্কটীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে একটি বায়ুপ্রবাহ সারাছর নিয়মিতভাবে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় অঞ্চলের নিম্নচাপের দিকে প্রবাহিত হয় । উত্তর গোলার্ধের এই নিয়মিত আয়ন বায়ুপ্রবাহটি উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু (North East Trade Winds) নামে পরিচিত ।
বিস্তারঃ নিরক্ষরেখা থেকে প্রায় ২৫° উত্তর অক্ষাংশের মধ্যে উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয় ।
বৈশিষ্ট্যঃ উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু – র বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ –
ক) এইপ্রকার বায়ুপ্রবাহ ঘন্টায় প্রায় ১৬ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হয় ।
খ) এইপ্রকার বায়ু উচ্চ অক্ষাংশ থেকে নিম্ন অক্ষাংশে প্রবাহিত হয় বলে এর জলীয় বাষ্প ধারণ করার শক্তি বেড়ে যায় ।
গ) এইপ্রকার বায়ুপ্রবাহ নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে আসার সময় ফেরেলের সূত্রানুসারে ডানদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় ।
২. দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু (South East Trade Winds): নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলে উষ্ণ ও হালকা বায়ু উপরে উঠে গেলে চাপের সমতা রক্ষার জন্য দক্ষিণ গোলার্ধের মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে একটি বায়ুপ্রবাহ সারাছর নিয়মিতভাবে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের নিম্নচাপের দিকে প্রবাহিত হয় । দক্ষিণ গোলার্ধের এই নিয়মিত আয়ন বায়ুপ্রবাহটি দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু (South East Trade Winds) নামে পরিচিত ।
বিস্তারঃ নিরক্ষরেখা থেকে প্রায় ৩৫° দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয় ।
বৈশিষ্ট্যঃ দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু – র বৈশিষ্ট্যগুলি হল নিম্নরূপ –
ক) এইপ্রকার বায়ুপ্রবাহ ঘন্টায় প্রায় ২২ কিলোমিটার বেগে প্রবাহিত হয় ।
খ) এইপ্রকার বায়ুপ্রবাহ নিরক্ষীয় অঞ্চলের দিকে আসার সময় ফেরেলের সূত্র অনুসারে বামদিকে বেঁকে প্রবাহিত হয় ।
প্রভাবঃ আয়ন বায়ুর প্রভাবগুলি হলো নিম্নরূপ –
ক) উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রবাহিত হওয়ার সময় প্রচুর জলীয় বাষ্প ধারণ করে, যার ফলে মহাদেশগুলির পুর্বদিকে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে । ফলে সেখানে প্রচুর কৃষিজ ফসল জন্মায় । উদা- দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব আফ্রিকা, ফ্লোরিডা, দক্ষিণ-পূর্ব ব্রাজিলের বিভিন্ন স্থান কৃষিকার্যে বিশেষ উন্নতিলাভ করেছে ।
খ) পরবর্তীতে এই উত্তর-পূর্ব আয়ন বায়ু যখন মহাদেশের পশ্চিমদিকে অগ্রসর হয়, তখন ঐ বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ক্রমশ কমতে থাকে । ফলে মহাদেশের পশ্চিমভাগে বৃষ্টিপাতের অভাবে মরুভূমির সৃষ্টি হয়েছে । যেমন – কালাহারি মরুভূমি, সাহারা মরুভূমি, আটাকামা মরুভূমি, সোনেরান মরুভূমি প্রভৃতি । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এইসকল মরুভূমি অঞ্চলগুলিতে বছরের পর বছর বৃষ্টিপাতের অভাবে ক্রমশ মরুভূমির প্রসার ঘটছে ।
গ) উত্তর গোলার্ধে আয়ন বায়ু প্রবাহিত অঞ্চল থেকে দক্ষিণ গোলার্ধে আয়ন বায়ু প্রবাহিত অঞ্চল অনেকটা আরামদায়ক থাকে ।