অঁতোয়ান-লোরঁ দ্য লাভোয়াজিয়ে; ২৬ আগস্ট ১৭৪৩ – ৮ মে ১৭৯৪;)বা অ্যান্তনি ল্যাভয়সিয়ে ছিলেন একজন ফরাসি অভিজাত এবং রসায়নবিদ। তিনি আঠারো শতকের রসায়ন বিপ্লবের একজন কেন্দ্রীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের ইতিহাসে তার বড়ো প্রভাব আছে। তাকে প্রায়ই "আধুনিক রসায়নের জনক" হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়।
রসায়নে অবদান
এটা সাধারণভাবে স্বীকৃত যে রসায়নবিদ্যায় লাভোয়াজিয়ের শ্রেষ্ঠ অবদানগুলির পেছনে মূল কারণ হচ্ছে তিনি রসায়নকে একটি গুণগত (qualitative) বিজ্ঞান থেকে পরিমাণগত (quantitative) বিজ্ঞানে রূপান্তরিত করেন। লাভোয়াজিয়ে যে আবিষ্কারটির জন্য সবচেয়ে বেশি বিখ্যাত, সেটি হলো দহন বিক্রিয়ায় অক্সিজেনের ভূমিকা নির্ধারণ। তিনিই অক্সিজেন (১৭৭৮) এবং হাইড্রোজেন (১৭৮৩) শনাক্ত ও নামকরণ করেন এবং ফ্লজিস্টন তত্ত্বের বিরোধিতা করেন। তিনি পরিমাপের মেট্রিক পদ্ধতি সৃষ্টিতে সহায়তা করেন। তিনিই সর্বপ্রথম মৌলসমূহের একটি বিস্তৃত পর্যায় সারণি নির্মাণ করেন। এছাড়া তিনি রাসায়নিক পদার্থের নামকরণের নীতিগুলির সংস্কার সাধনে সাহায্য করেন। ১৭৮৭ সালে তিনি সিলিকনের অস্তিত্ব নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করেন। তিনিই প্রথম গন্ধক (সালফারকে) যৌগ নয়, বরং একটি মৌলিক পদার্থ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আবিষ্কার করেন যে, যদিও পদার্থ তার আকৃতি বা গঠন পরিবর্তন করতে পারে, কিন্তু তার ভর সবসময় একই থাকে।
অভিজাত হিসেবে ভূমিকা
লাভোয়াজিয়ে ফ্রান্সের বেশ কিছু অভিজাত পরিষদের ক্ষমতাধর সদস্য ছিলেন। তিনি "ফের্ম জেনেরাল" নামক সংস্থার প্রশাসক ছিলেন, কিন্তু এ সংস্থাটি "অঁসিয়াঁ রেজিম" বা ফ্রান্সের তৎকালীন রাজতন্ত্রের সবচেয়ে ঘৃণ্য একটি অংশ ছিল, কেননা এটি সরকার থেকে অনেক বেশি লাভ নিত। এর চুক্তিগুলি ছিল অত্যন্ত গোপন এবং এর অস্ত্রধারী দালালরা খুবই জোরজবরদস্তি চালাত। এই সমস্ত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড লাভোয়াজিয়ের বৈজ্ঞানিক গবেষণার অর্থসংস্থানে সাহায্য করত। ফরাসি বিপ্লবের চরম পর্যায়ে জঁ-পল মারা তাকে ভেজাল তামাক বিক্রির দায়ে অভিযুক্ত করেন, এবং মারা-র মারা যাবার এক বছর পরেই লাভোয়াজিয়েকে বিচার করে গিলোটিনের মাধ্যমে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।