সন্ধির প্রয়োজনীয়তা: সন্ধি ভাষার শ্রুতিমধুরতা আনে, সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। সন্ধির ফলে ভাষা সংক্ষিপ্ত হয়। তা ছাড়া সন্ধির মাধ্যমে নতুন নতুন শব্দ গঠন হয়। ফলে ভাষা নির্মাণে সন্ধির প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য।
অনেকে বাংলা ভাষায় সন্ধির প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করেন না। বাংলা উচ্চারণরীতির সঙ্গে বাংলা সন্ধির নিয়ম জড়িত। সংস্কৃতের অনুসরণে বাংলা ভাষায় সন্ধি এসেছে। সংস্কৃত শব্দের সন্ধি সংস্কৃত নিয়ম অক্ষুণ্ন রেখেই বাংলা ভাষায় প্রচলিত। সাধারণত তৎসম শব্দের সঙ্গে তৎসম শব্দের সন্ধি হয়। বাংলা শব্দের সঙ্গে সংস্কৃত শব্দের সন্ধি হয় না। বাংলা ভাষায় প্রচলিত বিদেশি শব্দের সন্ধি করা বিধেয় নয়। বাংলা ক্রিয়াপদের সঙ্গে অন্য শব্দের সন্ধি হয় না। তা ছাড়া ভাষা যেখানে দুর্বোধ্য ও শ্রুতিকটু হয়ে পড়ে, সেখানে সন্ধি না করাই শ্রেয়।
সন্ধি উচ্চারণের সরলীকরণ করে, ভাষার সহজ ও স্বচ্ছন্দ গতি নিশ্চিত করে। সুতরাং সন্ধির প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
পাশাপাশি দুটি ধ্বনি দ্রুত উচ্চারণকালে সম্পূর্ণ বা আংশিক মিলিত হয় অথবা একটি লোপ পায় কিংবা একটি অপরটির প্রভাবে পরিবর্তিত হয়, এরূপ পরিবর্তন, লোপ বা মিলনকে সন্ধি বলে। যেমন—
বিদ্যা+আলয় = বিদ্যালয়; গৈ+অক = গায়ক; নে+অন = নয়ন; ষট+আনন = ষড়ানন।
সন্ধির প্রভারভেদ: বাংলা ভাষায় সন্ধি তিন প্রকার। যেমন—
স্বরসন্ধি: স্বরধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনির মিলনে স্বরসন্ধি হয়। যেমন—নর+অধম = নরাধম; শুভ+ইচ্ছা = শুভেচ্ছা।
ব্যঞ্জন সন্ধি: ব্যঞ্জন ধ্বনির সঙ্গে স্বরধ্বনি অথবা ব্যঞ্জন ধ্বনির সঙ্গে ব্যঞ্জন ধ্বনির মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে ব্যঞ্জন সন্ধি বলে। যেমন—তৎ+অন্ত = তদন্ত; সৎ+জন = সজ্জন।
বিসর্গ সন্ধি: বিসর্গের সঙ্গে স্বরবর্ণ বা ব্যঞ্জন বর্ণের মিলনে যে সন্ধি হয়, তাকে বিসর্গ সন্ধি বলে। যেমন—মনঃ+যোগ = মনোযোগ; পুনঃ+আয় = পুনরায়।
এ ছাড়া খাঁটি বাংলা সন্ধি আছে। যেমন— দিন+এক = দিনেক, আধা+উলি = আধুলি।