যে প্রক্রিয়া বা ব্যবস্থার মাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট নিয়ম কানুন মেনে কয়েকটি নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে মানুষ সংঘবদ্ধ বসবাস করে এক বা অধিক গোত্র বা সম্প্রদায় সৃষ্টি করে, সেই ব্যবস্থা বা প্রক্রিয়াকে সমাজ বলে।
বিশ্বের বিখ্যাত একজন গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টোটল বলেছিলেন, “স্বভাবের দিক থেকে সব মানুষই হলো সামাজিক প্রাণী।”
সমাজবিজ্ঞানীগণ মানব সমাজকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করেছেন, যেমন:
১. Hunting and gathering society বা শিকার ও সমাবেশকেন্দ্রিক সমাজ: এটি হচ্ছে মানব সমাজের আদি রুপ, এই সমাজের মানুষের জীবিকা নির্বাহের উপকরণ ছিলো বন্য প্রাণী শিকার ও বন্য ফলমুল সংগ্রহ করা। এই সমাজে প্রযুক্তির বিকাশ তেমন হয়নি, এই সমাজের মানুষ হাত অথবা গাছ পালার ডালকে শিকারের জন্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতো । এই সমাজে ব্যক্তিগত সম্পদ বলে কিছু ছিলো না যার ফলে সামাজিক শ্রেণীবিন্যাসও ছিল না, সে কারণে সমাজবিজ্ঞানী কার্ল মার্ক্স এই সমাজকে বলেছেন Primitive communism বা আদি সাম্যবাদী সমাজ ।
২. Horticultural society বা উদ্যান কেন্দ্রিক সমাজ: এই সমাজ ব্যবস্থায় মানুষ প্রযূক্তিগত দিক থেকে Hunting and gathering society থেকে এগিয়ে যায়, এবং খাদ্য সংগ্রহের পরিবর্তে উৎপাদনের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে। কৃষি ভিত্তিক সমাজের ধারণাই শুরু হয় Horticultural society থেকে। এখানে মানুষ বীজ থেকে নয় গাছের ডালপালা থেকে নতুন গাছ উৎপাদন করতো।
৩. Harding society বা পশু প্রতিপালন কেন্দ্রিক সমাজ: এই সমাজ ব্যবস্থায় মানুষ পশু পালন করে জীবিকা নির্বাহ করতো। পশু স্বীকারের এক পর্যায়ে মানুষ লক্ষ্য করলো, পশু স্বীকার বেশ কষ্টসাধ্য আবার সব সময় স্বীকার পাওয়াও যায় না। এই সমস্যার সমাধান কল্পে মানুষ জ্যান্ত পশু স্বীকার শুরু করলো, এবং এক পর্যায়ে লক্ষ্য করলো এই পশুগুলো পোষ মানছে। আর এভাবেই মানুষ পশু শিকার থেকে পশু পালনের দিকে ধাবিত হয়।
৪. Agrarian society বা কৃষিভিত্তিক সমাজ: কৃষি ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থা চালু হয় লাঙ্গল আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে। লাঙ্গল আবিষ্কারের পর কৃষির বিকাশ লাভ করতে থাকে, এবং এর ফলে প্রথম বারের মত মানুষ স্থায়ী আবাসন গড়ে তোলে, ইতিপূর্বে মানুষ nomadic বা যাযাবর জীবন যাপন করতো। কৃষি ভিত্তিক সমাজ ব্যবস্থায় মানুষের এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ঘুরে বেরানোর অবসান ঘটে এবং মানুষ fixed settlement বা স্থায়ী আবাসনের দিকে ধাবিত হয়।
৫. Industrial society বা শিল্পনির্ভর সমাজ: বৈজ্ঞানিক বিপ্লবের ফলে মানব সভ্যতা প্রযূক্তিগত ভাবে অনেক বেশি অগ্রসরমান হয়ে যায়। প্রযূক্তিগত উন্নয়নের প্রভাবেই ১৭৬০ খ্রিষ্টাব্দে ইউরোপে(ইংল্যান্ডে) শিল্প বিপ্লবের সূচনা ঘটে।
শিল্প বিপ্লবের ফলে গোটা ইউরোপ জুড়ে ধীরে ধীরে ফিউডালিজম বা সামন্তবাদের সমাপ্তি ঘটে এবং কৃষি ভিত্তিক সমাজ কাঠামোর পরিবর্তে শিল্পোন্নত সমাজ কাঠামো প্রতিষ্ঠা লাভ করে। শিল্পোন্নত সমাজ বা Industrial society তে ব্যাক্তিস্বাতন্ত্রতা, গণতন্ত্র, ধর্মনিরপেক্ষতা প্রভৃতি মতবাদ জনপ্রিয়তা লাভ করে যার ফলে সমাজে ধর্মের প্রভাব খর্ব হয়, পূর্বের সামন্ততান্ত্রিক সমাজের সকল রীতিনীতি ভেঙে পরে এবং নতুন সমাজ ব্যবস্থা প্রচলিত হয়।
শিল্পোন্নত সমাজে প্রযুক্তি চরম উৎকর্ষতায় পৌঁছে যায়, মানুষের গড় আয়ু বৃদ্ধি সহ জনসংখ্যার ব্যাপক বিস্ফোরণ ঘটে। এর ফলে সামাজিক কাঠামো এবং মানুষের জীবনধারা পূর্বের চেয়ে উন্নত এবং জটিল আকার ধারণ করে।