জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থা (এফএও) চলতি মাসের ৯ জুলাই বনবিষয়ক এক প্রতিবেদনে (দ্য স্টেট অব গ্লোবাল ফরেস্ট-২০১৮) বলেছে, বাংলাদেশের মোট ভূখণ্ডের সাড়ে ১৩ শতাংশ বনভূমি। তবে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এই তথ্য মানতে নারাজ। মন্ত্রণালয়ের দাবি, দেশের মোট আয়তনের ১৭ শতাংশ বনভূমি (বন ও বৃক্ষ আচ্ছাদিত এলাকা)।
প্রধান বন সংরক্ষক মোহাম্মদ সফিউল আলম চৌধুরীর দাবি, দেশে বনভূমি কমার কোনো কারণ নেই।
বনভূমি পর্যবেক্ষণকারী আন্তর্জাতিক সংস্থা গ্লোবাল ফরেস্ট ওয়াচ (জিএফও) ও ওয়ার্ল্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট (ডব্লিউআরআই) গত ২৭ জুন প্রকাশ করা এক প্রতিবেদনে বলছে, গত সাত বছরে বাংলাদেশে ৩ লাখ ৩২ হাজার একর বনভূমি উজাড় হয়েছে। প্রতিবেদনটির শিরোনামেও রয়েছে বাংলাদেশের নাম। এতে বলা হয়েছে, প্রতিবছর বিশ্বে বাংলাদেশের সমপরিমাণ বনভূমি উজাড় হয়ে যাচ্ছে।
জিএফও এবং ডব্লিউআরআইয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বনভূমি উজাড় হওয়ার দিক থেকে সবচেয়ে এগিয়ে চট্টগ্রাম অঞ্চল। ২০১০ সালে দেশের মোট বৃক্ষসম্পদের ৬০ শতাংশ ছিল এই এলাকায়। গত সাত বছরে তা কমে প্রায় ১০ শতাংশ হয়েছে।
দুটি আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিবেদনে তুলে ধরা তথ্য সঠিক বলে মনে করেন সাবেক প্রধান সংরক্ষক ইউনুস আলী। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, বিভিন্ন সরকারি সংস্থার নামেই প্রায় দুই লাখ হেক্টর বনভূমি বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। যার বেশির ভাগ চট্টগ্রাম বিভাগে। তাঁর দাবি, চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন জেলায় যেসব জেলা প্রশাসক দায়িত্ব পালন করেছেন, তাঁরা বন সংরক্ষণের বিষয়টি সঠিকভাবে অনুধাবন করেননি। ফলে তাঁরা আবাসন থেকে শুরু করে নানা প্রকল্পে বনের জমি বেশি করে বরাদ্দ দিয়েছেন। এ ছাড়া পার্বত্য চুক্তির পর সেখানে সরকারি কোনো একক সংস্থা বন ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে নেই। ফলে পার্বত্য অঞ্চলেও দ্রুত বনভূমি কমছে।
দেশে বনভূমির পরিমাণ কমে যাওয়া এবং বনভূমির পরিমাণ প্রকাশ করা আন্তর্জাতিক দুটি সংস্থার তথ্য নিয়ে সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে প্রথম আলো। বন বিভাগ এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের দাবি, দেশে বনভূমি কমে যাওয়ার হিসাব সঠিক নয়। আর দেশে বনভূমির পরিমাণও মোট ভূখণ্ডের সাড়ে ১৩ নয়, ১৭ শতাংশের বেশি।