একজন ভালো মানুষ সহজেই অন্যদের সঙ্গে মিশতে পারে। সে সবার প্রতি দয়াশীল এবং ভদ্র স্বভাবের হয়। অন্যরা তাকে নিয়ে কী ভাবছে সেই বিষয়ে সে সতর্ক। সে নিজের আবেগ অনুভূতিকে সবার কাছে প্রকাশ না করে লুকিয়ে রাখতে বেশি পছন্দ করে।
সে অতি সহজে সবাইকে বিশ্বাস করে। নতুন যেকোনো কাজের প্রতি তার অনেক কৌতূহল। সে যদি মনে মনে ঠিক করে যে কোনো একটি কাজ সফলভাবে করবে তাহলে সে ঠিক তা করে। সে একজন স্বাধীন মনের বুদ্ধিমান মানুষ। সে কখনো কারোর খারাপ চিন্তা করে না এবং তার সব কাজেরই উদ্দেশ্য ভালো থাকে।
সবাই ভাবে যে সে দুর্বল তবে বাস্তবে এটি সত্য নয়। সে কারোর সাহায্য ছাড়াই নিজের যেকোনো সমস্যা মোকাবেলা করতে পারে। সে অনেক সৎ এবং সে কারোর সঙ্গেই খারাপ সম্পর্ক রাখতে চায় না। তাই পরিচিত সবাই তার কাছে পরামর্শ চায় এবং কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করে। কারণ তারা জানে সে বিশ্বস্ত।
সে নিজেকে কেয়ার করে, পছন্দ করে, ভালোবাসে। সে কারণে সে তার পরিবার এবং দেশকেও ভালোবাসে। বিশেষ করে দেশটির সর্বাঙ্গ যখন সংকটময় ঠিক তখনই সে এগিয়ে আসতে চায়। এটা হওয়া উচিত তাই খুবই স্বাভাবিক সে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কাজ করে।
যদিও সে ছোটবেলায় শুনেছে এবং সিনেমায়ও দেখেছে যে মা-বাবা সীমাহীন কষ্ট করে ছেলেকে বড় করেছে, লেখাপড়া শিখিয়েছে, নিজেরা না খাইয়ে ছেলেকে খাইয়েছে। ছেলে সবশেষে মস্ত বড় অফিসার হয়েছে, বিয়ে করেছে বড় ঘরে।
কোনো এক সময় মা-বাবাকে ছেড়ে হারিয়ে গেছে নতুন বিলাসবহুল জীবনে। ভুলে গেছে অতীত আর ভুলে গেছে অতীতের স্মৃতিগুলো। আবার শুনেছে কেউ কেউ সম্পূর্ণ উল্টো হয়েছে। সারাজীবন কঠোর পরিশ্রম করে পরিবারের জন্য নিজের সর্বস্ব তাগ করেছে। এসব ঘটনা এখনও সমাজে ঘটে।
চুরি, ডাকাতি, দুর্নীতি, ঘুষ আগেও ছিল এখনও আছে। তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ালো কী? আমরা আগের মতই আছি। ভালো কাজের সঙ্গে খারাপ কাজ এখনও ঠিক আগের মতই করে চলেছি। একটি বিষয় ভালো লাগছে তা হলো আর যাই হোক অন্যরা এখন আর আমাদের সম্পদ লুটপাট করছে না।
যেমন অতীতে ব্রিটিশ, পরে পাকিস্তান আমাদের সব কিছু লুটে নিয়েছে। কিন্তু এখন অন্যরা নয়, আমাদের নিজেদের লোকেরাই আমাদেরকে দিব্বি ঠকিয়ে, ফাঁকি দিয়ে, অন্যায় অত্যাচার করে লুটেপুটে সব কিছু ভোগ দখল করছে। এসব দেখে কিছুটা ভালো লাগছে।
এক্ষেত্রে দেশ স্বাধীন করে আমরা কিন্তু ভালো করেছি। এমনটি ধারণা নিয়ে মনকে সান্ত্বনা দিয়ে দিনগুলো পার করে আসছি। হঠাৎ সেদিন বিদেশি এক রিপোর্টে জানতে পারলাম বাংলাদেশ থেকে প্রচুর অর্থ পাচার হয় সিঙ্গাপুর, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, সুইজারল্যান্ডসহ আরও অনেক দেশে।
এটা জানার পর বাংলাদেশের সম্পর্কে আমার ধারণা সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে। বিশ্বের যেসব দেশ টাকা পাচার করে বিদেশের ব্যাংকগুলোতে রাখে, বর্তমানে বাংলাদেশ তার মধ্যে অন্যতম। দেশের টাকা লুটপাট করে বিদেশে পাচার করা, এরা রাজাকার বা বেঈমানদের চেয়েও অধম।
কারণ প্রথমে দুর্নীতি এবং পরে এর মাধ্যমে অর্জিত অর্থ বিদেশে পাচার করে দেশটিকে ধ্বংস করা। এতবড় ক্রিমিনাল আমাদের দেশের মানুষ হতে পারে জানার পর মনটা ক্ষতবিক্ষত হয়ে গেছে। তারপরও আমি বিশ্বাস হারাইনি আমার দেশের মানুষের প্রতি এবং দেশের প্রতি।
কারণ কী জানেন? তারা দুর্নীতি করতে করতে কোনো এক সময় খারাপের শেষ প্রান্তে গিয়ে পৌঁছবে। তখন আর অন্য কোনো পথ খোলা থাকবে না। এই সব পথভ্রষ্ট মানুষ নামের দানবেরা তখন আর্তনাদ করবে বাঁচাও বাঁচাও বলে। তখন আমরা তাদের সব কিছু ক্ষমা করে সোনার বাংলায় ঠাঁই দেবো।
আল্লাহ ক্ষমাশীলদের পছন্দ করেন, আমরা তো তারই বান্দা। এখন প্রশ্ন কীভাবে আমরা ভালো মানুষ হতে পারি? আমাদের মতামত ভিন্ন হতেই পারে তাতে কোনো সমস্যা নেই। তবে দেশটিকে রসাতলে দিতে আমরা কেউই চাইবো না।
তাহলে যারা এটা করছে তারা কি জেনে শুনে এটার সঙ্গে জড়িত? তারা কি জানে না যে দেশের অর্থ বাইরে পাচার করা ঠিক না? বাংলাদেশের উন্নতি মানেই কিন্তু আমাদের উন্নতি, এটা ভুলে গেলে চলবে না। আসুন সবাই মিলে আমরা যার যার জায়গা থেকে নিজেকে চেনার চেষ্টা করি।
যেমন আমরা ইনভেন্টরি করি আমাদের বিষয় সম্পদের ঠিক তেমনি করে আমাদের চরিত্রের ওপর ইনভেন্টরি করতে পারি। আমরা কেমন, কী পছন্দ করি বা কী পছন্দ করি না ইত্যাদি। দেখবেন কিছুক্ষণ বর্ণনা করার পর হাত কাঁপতে থাকবে যদি সত্য কথা মন থেকে লিখা সম্ভব না হয়। চেষ্টা করে দেখুন প্লিজ।
প্রাচীনকালের সেই মহামানব সক্রেটিস বলেছেন “নো দ্যাইসেলফ” এই কথাটি জীবন চলার চাবিকাঠি। বিষয়টি নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে কী বলতে চেয়েছিলেন সক্রেটিস তার এই কথাটিতে! কেন যেন মনে হচ্ছে একজন ভালো মানুষ হতে হলে প্রথমেই নিজেকে জানতে হবে। আর নিজেকে জানার চেষ্টা করলেই সত্য আমাদের ডাকে সাড়া দিবে।