বাংলাদেশে তৈরি প্রথম যাত্রীবাহী স্টিমার বা জাহাজের নাম এম ভি বাঙালি.
দেশে তৈরি প্রথম যাত্রীবাহী জাহাজ 'এমভি বাঙালি'র উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাত্রীদের উন্নত সেবা প্রদানের লক্ষ্যে আগামী জুনে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশনের (বিআইডবি্লউটিসি) নৌবহরে আরও একটি জাহাজ 'এমভি মধুমতী' যুক্ত হবে। নদীই বাংলাদেশের প্রাণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার সরকার নৌ-যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও উন্নত করতে দেশের নদী ড্রেজিংয়ের উদ্যোগ নিয়েছে।
'এমভি বাঙালি'র ডেকে আয়োজিত এ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ঢাকা-বরিশাল-খুলনা রুটের জন্য আরও দুটি যাত্রীবাহী জাহাজ নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করেছে। এগুলো
নির্মিত হলে এ অঞ্চলের যাত্রীসেবার মান আরও উন্নত হবে। তিনি বলেন, ৭৫ বছর পর ঢাকা-বরিশাল ভায়া চাঁদপুর রুটে আবার বিআইডবি্লউটিসির স্টিমার সার্ভিস চালু হয়েছে।
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন নৌপরিবহন সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম ও বিআইডবি্লউটিসির চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিআইডবি্লউটিসির ফেরি সেক্টরকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে তার সরকার নয়টি ফেরি ও সাতটি পন্টুন নির্মাণ করেছে। এ বছর আরও ছয়টি ফেরি ও একটি পন্টুন এবং ২০১৫ সালের মধ্যে আরও দুটি ফেরির নির্মাণকাজ শেষ হবে।
এ ছাড়া সরকার মাওয়ায় কনটেইনার ট্রেইলর ও ভারী যানবাহন পারাপারের জন্য আরও স্পেশাল ফেরি ও পন্টুন এবং উপকূলীয় এলাকায় যানবাহন পারাপারের জন্য উপকূলীয় ফেরি নির্মাণের পরিকল্পনা নিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, নৌপথে যাত্রী পরিবহনে বিআইডবি্লউটিসির দীর্ঘ ঐতিহ্য রয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিনেও নতুন যাত্রীবাহী জাহাজ সংযোজিত হয়নি। অন্যদিকে পুরনো জাহাজগুলো কালের গহ্বরে ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে।
চট্টগ্রামের ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপবিল্ডার্স লিমিটেড 'এমভি বাঙালি' জাহাজটি নির্মাণ করেছে। এতে ব্যয় হয়েছে ২৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। জাহাজটির দৈর্ঘ্য ৭৫.৫০ মিটার, প্রস্থ ১২.৫০ মিটার এবং এটি ৭৫০ জন যাত্রী বহনে সক্ষম।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিআইডবি্লউটিসির কার্যক্রম ডিজিটালাইজড করা হয়েছে। শিগগিরই পাটুরিয়া, দৌলতদিয়া ও কাজীরহাট ফেরিঘাটে ই-টিকিট চালু করা হবে। বিআইডবি্লউটিসির ফেরি ও যাত্রীবাহী জাহাজে যানবাহন ট্র্যাকিং সিস্টেম (ভিটিএস) স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে জলযান মনিটরিং সহজ হয়েছে। যাত্রাপথ নিরাপদ হয়েছে। সেবার মানও বেড়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার চাঁদপুর-শরীয়তপুর রুটে ফেরি সার্ভিস চালু করে। এ ছাড়া উপকূলীয় এলাকা দ্বীপাঞ্চল দৌলতখান-আলেকজান্ডার, আলেকজান্ডার-মির্জাকালু, কালাইয়া-নাজিরপুর, চরচেঙ্গা, চরবাটা ও বরিশাল-মজুচৌধুরীহাট রুটে সি-ট্র্যাক সার্ভিস এবং শীত মৌসুমে টেকনাফ-সেন্টমার্টিন ও মংলা-হিরণ পয়েন্ট রুটে পর্যটক সার্ভিস চালু করা হয়।
তিনি বলেন, 'প্রতিবেশী দেশগুলো যাতে সহজে আমাদের বন্দর ব্যবহার করতে পারে, সে জন্য তার সরকার সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে।'
নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, বিআইডবি্লউটিসি বরিশাল থেকে চট্টগ্রামের মধ্যে নৌ-যোগাযোগের জন্য দুটি বিশেষ ফেরি সার্ভিস চালু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী সদরঘাট থেকে চাঁদপুর নৌ যাত্রাপথে নদীর দূষণ, অবৈধ ভূমিদস্যুদের দখলদারিত্ব এবং বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা ও মেঘনা নদীর ড্রেজিং দেখেন। তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী ও এমপিদের কাছে বুড়িগঙ্গা রক্ষায় অবৈধ ভূমিদস্যুদের উচ্ছেদ ও দূষণ রোধে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপ সম্পর্কে জানতে চান। নদী দূষণের উৎস বন্ধ করার জন্য কী পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়, তা-ও তিনি তাদের কাছে জানতে চান।