প্রথম মানব ও প্রথম নবী বাবা আদম (আ.) থেকে সর্বশেষ নবী ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসুল হজরত মুহাম্মাদ (সা.) পর্যন্ত সব নবী ও রাসুলের মূল দাওয়াত ছিল ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ (আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই)। যথা: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আদামু সফিউল্লাহ’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু নূহুন নাজিয়ুল্লাহ’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইবরাহিমু খলিলুল্লাহ’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ইসমাইল জাবিহুল্লাহ’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুসা কালিমুল্লাহ’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু দাউদু খলিফাতুল্লাহ’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ঈসা রুহুল্লাহ’, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসুলুল্লাহ’। কালেমা শাহাদাতে এ ঘোষণাই দেওয়া হয়, আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু, ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু, অর্থাৎ ‘আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে এক আল্লাহ ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই, আমি আরও সাক্ষ্য দিচ্ছি যে নিশ্চয়ই হজরত মুহাম্মাদ (সা.) আল্লাহ তাআলার প্রিয় বান্দা ও তাঁর প্রেরিত রাসুল।’
ইহসান ও প্রত্যক্ষ সাক্ষ্য
সাক্ষ্য দেওয়ার পূর্বশর্ত হলো প্রত্যক্ষ করা বা স্বচক্ষে অবলোকন করা বা দেখা। মহান আল্লাহ তাআলা এমনই পরম সত্য, যা দৃশ্যমান হওয়া দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট; তাই এটি প্রত্যক্ষ করার অপেক্ষা রাখে না। প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর সততা ও সত্যবাদিতা জগৎখ্যাত ও প্রশ্নাতীত। যারা তাঁর জানের দুশমন ছিল, তারাও তাঁর সত্তা ও বিশ্বস্ততার প্রতি দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছে। এ বিষয়ে দুটি উদ্ধৃতি হয়েছে এভাবে, ‘এক আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মাবুদ নাই, তিনি শাসক অধিপতি, তিনিই সুস্পষ্ট ও পরম সত্য; হজরত মুহাম্মাদ (সা.) মহান আল্লাহর প্রেরিত রাসুল, চরম সত্যবাদী, অঙ্গীকার রক্ষাকারী এবং পরম বিশ্বস্ত ও অতি বিশ্বাসী। (আল মুফরাদাত, বুখারি)। সব নবী ও রাসুল সত্যবাদী ছিলেন। আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমে বলেন, ‘আপনি এই গ্রন্থে হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামের বিষয় আলোচনা করুন, নিশ্চয় তিনি ছিলেন সত্যবাদী নবী।’ (সুরা-১৯ [৪৪] মারিয়াম)।
হাদিসে জিবরিল নামে খ্যাত বিখ্যাত হাদিস শরিফে রয়েছে, জিবরাইল (আ.) বললেন, হে প্রিয় নবী! (সা.) ‘ইহসান’ কী? তিনি (সা.) বললেন, ইহসান হলো ‘এভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তুমি তাঁকে দেখছ; যদি তা না হয়, তবে নিশ্চয় তিনি তোমাকে দেখছেন।’ (বুখারি শরিফ, ইমান অধ্যায়, হাদিস: ৪৮)। ‘ইহসান’ হলো ইসলামি শরিয়তের চূড়ান্ত লক্ষ্য ও পরম আরাধ্য বিষয়।
আল্লাহর কুদরতের সাক্ষ্য
আল্লাহর কুদরত ও সৃষ্টি রহস্য অনুধাবন করে তাঁর প্রতি সাক্ষ্য দেওয়া যায়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা কি উটের প্রতি দৃষ্টিপাত করে না? কীভাবে তা সৃষ্টি করা হয়েছে! তারা কি আকাশের প্রতি তাকায় না? কীভাবে তা উন্নীত করা হলো! তারা কি পর্বতমালার প্রতি দৃষ্টিপাত করে না? কীভাবে তা সুদৃঢ় করা হলো! তারা কি জমিনের প্রতি লক্ষ করে না? কিরূপে তা বিস্তৃত করা হলো!’ (সুরা-৮৮ গাশিয়া, আয়াত: ১৭)। যারা আল্লাহর সৃষ্টি রহস্য অনুধাবন করে না, তাদের ব্যাপারে কোরআনের ঘোষণা, ‘যারা এ জগতে অন্ধ থাকবে, তারা আখিরাতেও অন্ধ হবে।’ (সুরা-১৭ ইসরা)।
পরকালে সাক্ষ্য
হাশরের ময়দানে বিচারের সময় মানুষ নিজের প্রতি সাক্ষ্য দেবে। যারা ইহজগতে মিথ্যা বলে অভ্যস্ত, তারা পরকালেও মিথ্যা বলবে; তারা নিষ্পাপ ফেরেশতাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ তুলবে। তখন মহান আল্লাহ তাআলা তাদের জবান বন্ধ করে দিয়ে তাদের পাপ সম্পাদনকারী অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সাক্ষ্য নেবেন। ‘আজ আমি তাদের মুখে সিলমোহর করে দেব; তাদের হস্তসমূহ আমার সঙ্গে কথা বলবে এবং তাদের পাগুলো সাক্ষ্য দেবে, যা তারা (মিথ্যা-পাপ) অর্জন করেছিল। (সূরা-৩৬ ইয়া ছীন,)। এমতাবস্থায় গত্যন্তর না দেখে কিছু লোক সত্য স্বীকার করবে (যদিও সেদিন তা কোনো কাজে আসবে না)। তারা বলবে, আমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রদান করছি, দুনিয়ার জীবন তাদের প্রবঞ্চিত করেছে; তারা তাদের নিজেদের বিপক্ষে সাক্ষ্য দেবে, নিশ্চয়ই তারা ছিল অকৃতজ্ঞ অবিশ্বাসী কাফির।’ (সুরা-৬ আনআম)। ‘হে নবী! (সা.) আমি আপনাকে সাক্ষী, সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে প্রেরণ করেছি।’ (সুরা-৩৩ আহযাব, সুরা-৪৮ ফাত্হ, সূরা-৭৩ মুযযাম্মিল,৫)। ‘এভাবে আমি তোমাদের মধ্যবর্তী উম্মত বানিয়েছি, যাতে তোমরা মানুষের জন্য সাক্ষী হতে পারো; এবং রাসুল (সা.) হবেন তোমাদের প্রতি সাক্ষী।’ (সুরা-২ বাকারা)। ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য সাক্ষী আনয়ন করব, আর আপনাকে তাদের প্রতি সাক্ষী হিসেবে নিয়ে আসব।’ (সুরা-৪ নিসা)।