বাংলাদেশ বৈশ্বিকভাবে শীর্ষ তৈরি পোশাক রফতানিকারকের একটি এবং দেশটিতে অন্য খাতগুলোও এগিয়ে যাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, বাংলাদেশের ওষুধ শিল্প বেশ সম্ভাবনাময়। এ শিল্পের ৩০০ কোম্পানি (এর মধ্যে কয়েকটি গবেষণাও পরিচালনা করে) এখন ৯৭ শতাংশ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাচ্ছে এবং বৈশ্বিকভাবে রফতানিও শুরু করছে।
সত্য হলো, বাংলাদেশে দারিদ্র্য, আর্থিক অসচ্ছলতা, ঊর্ধ্বমুখী অসমতা ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের শঙ্কা এখনো যায়নি। জলবায়ু পরিবর্তন ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি অব্যাহত তাত্পর্যপূর্ণ বিপদ সৃষ্টি করতে পারে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা আবারো ফিরে আসতে পারে এবং অর্থনৈতিক অগ্রগতি ব্যাহত করতে পারে। এসব ঝুঁকি-শঙ্কা সত্ত্বেও বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য অর্থনৈতিক রূপান্তর (বিশ্বব্যাংকের শ্রেণীকরণে দেশটি এখন নিম্নমধ্যম আয়ের অর্থনীতি) অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে এবং আজকের নিম্ন আয়ের দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হিসেবে কাজ করতে পারে।
বলা চলে, বাংলাদেশের উত্থান ইচ্ছাকৃত হস্তক্ষেপ ও আকস্মিক সুযোগেরই গল্প। দেশটির সাফল্যের বড় অংশের পেছনে ফজলে হাসান আবেদের ব্র্যাক এবং মুহাম্মদ ইউনূসের গ্রামীণ ব্যাংকের মতো এনজিগুলোর অবদান রয়েছে। সুনির্দিষ্টভাবে একটি হস্তক্ষেপ প্রত্যাশার চেয়ে বড় অবদান রেখেছিল। আর তা হলো, পরিবারের জ্যেষ্ঠ নারী সদস্যদের কাছে ক্ষুদ্রঋণ দেয়ার গ্রামীণ ব্যাংকের প্রথমদিককার সিদ্ধান্ত। আমি সবখানেই বলেছি, এটি ঘরে নারীদের কথা বলার অধিকার সংহত করেছিল, পালাক্রমে শিশুকল্যাণে পারিবারিক ব্যয় প্রবাহিত করায় ভূমিকা রেখেছিল। এটি অন্যতম প্রধান কারণ গড় আয়ু, সাক্ষরতা ও অপুষ্টি মোকাবেলায় বাংলাদেশ কেন এত উন্নতি করেছে।
বাংলাদেশে বিশ্বের অন্যতম বড় ক্ষুদ্রঋণ খাত আছে, যা ঋণ ফাঁদ থেকে পরিবারগুলোকে বেরিয়ে আনতে এবং নিজস্ব ক্ষুদ্র ব্যবসা শুরু করতে সাহায্য করেছে। একটি কম্পিউটেবল জেনারেল ইকুলিব্রিয়াম মডেল ব্যবহার করে সেলিম রায়হান, এস.আর. ওসমানী এবং বাকী খলিলী দেখিয়েছেন ক্ষুদ্রঋণ নিছকই অর্থগ্রহণের চেয়ে বেশি মাত্রায় পরিবারগুলোকে সাহায্য করেছে। আর্থিক-রাজস্ব ও মুদ্রানীতিতে পৃষ্ঠপোষকতা জুগিয়ে এটি (পড়ুন ক্ষুদ্রঋণ) দেশটির জিডিপি ৯-১২ শতাংশ চাঙ্গা করেছে। তবে ভাগ্যগুণেও বাংলাদেশের অনেকটা সাফল্য এসেছে। ভারত উপমহাদেশে জটিল শ্রম আইন বিদ্যমান। বিশেষ করে শিল্প বিরোধ আইনের কথা বলা যায়, যা ১৯৪৭ সালে ভারত ও পাকিস্তানের স্বাধীনতার আগে থেকেই বহাল ছিল এবং ব্যয়স্বল্পতা (ইকোনমিজ অব স্কেল) কাজে লাগাতে সমর্থ বিপুল শিল্প-কারখানার উত্থান ব্যাহত করেছিল। পাকিস্তান ১৯৫৮ সালে আইনটি সংশোধন করেছিল, কিন্তু তা করা হয়েছিল ভুল কারণে। মূলত কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে বড় করপোরেশনগুলোকে সাহায্য করার জন্য। উপরন্তু, এটি এমন অদক্ষভাবে করা হয়েছে, যা শ্রম শোষণ ও স্বজনতোষী পুঁজিবাদে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল।
অন্যদিকে একসময় পাকিস্তানের অংশ থাকলেও বাংলাদেশ অবশ্য আইনটির উত্তরাধিকার ছাড়াই জন্মলাভ করেছিল। তবে পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশও তার নিজস্ব শ্রম বিধিমালা প্রণয়ন করে, যা বেশ নমনীয় ছিল এবং তাতে করপোরেশনগুলোকে অবাধ ক্ষমতা দেয়া হয়নি। প্রধানত এটিই বাংলাদেশকে একটি সফল বৈশ্বিক ম্যানুফ্যাকচারিং হাব হতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
বাংলাদেশকে একটি শিল্প সম্ভাবনাময় দেশ বলা হয় ।