আমাদের বাড়িতে আস না, বুধা ভাই।” বুধা বলে তার অনেক কাজ। কুন্তি শক্ত কণ্ঠে বলে, তার অনেক কাজের কথা সে জানে। সেও বুধার সঙ্গে যুদ্ধ করতে চায়। তারপর কুন্তিকে সঙ্গে করে বুধা মৃত বাবা-মা, ভাই-বােনের কবর দেখতে যায়। দেখে যে, কুন্তি প্রতিটি কবর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে রেখেছে। আর আকন্দ, ভাঁটফুল, ধুতরা এসব গাছ লাগিয়েছে কবরের মাথায়। কবর জিয়ারতের দোয়া চাইতে গিয়ে বুধা আবেগে দুর্বল হয়ে কেঁদে ফেললে কুন্তি তাকে সাহস জোগায়। বুধার কান্না থামলে কুন্তি চোখ গরম করে বলে, “তুমি যুদ্ধ করতে ভয় পাচ্ছ? […] মরণের কথা মনে করলে যুদ্ধ করা যায় না। যুদ্ধ করলে মরতে তাে হবেই।”
পরদিন মাটি কাটার দলের সঙ্গে ভিড়ে বুধা মিলিটারি ক্যাম্পের চারদিকে বাঙ্কার খোড়ার কাজে লেগে যায়। বাঙ্কার খোড়ার সময় কৌশলে সে তার ভেতর মাইন পুঁতে চলে আসে নদীর ধারে। এখানেই অপেক্ষা করছিলেন শাহাবুদ্দিন এবং তার সহযােদ্ধারা। অতঃপর এলাে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। পাকিস্তানি সেনারা বাঙ্কারে ঢুকতেই পুরাে ক্যাম্পটা মাইন বিস্ফোরণে উড়ে গেল। নদীতে নৌকায় বসে শাহাবুদ্দিন, বুধা শুনতে পেল সেই শব্দ। তাদের অভিযান সফল হলাে। নৌকা সরে গেল নিরাপদ দূরত্বে। বুধা নৌকার পাটাতনে পা ছড়িয়ে শুয়ে পড়ে। দুহাত দুদিকে লম্বা করে মেলে দেয়। কখন যে গায়ের জামাটি খুলে মাথায় বেঁধেছে তা মুক্তিযােদ্ধা কমান্ডার শাহাবুদ্দিন খেয়াল করেননি। ঠিক কাকতাড়ুয়া সেজে থাকার ভঙ্গিতে শুয়ে আছে বুধা। ছেলেটির দিকে তাকিয়ে স্তব্ধ হয়ে যান শিল্পী শাহাবুদ্দিন। চোখের পলক পড়ে না। চারদিকের মাঠ, বাড়ি, ধানখেত, নদী, আকাশ, গাছগাছালিজুড়ে বুধা যেন এক আশ্চর্য বীর কাকতাড়ুয়া।