বনী-ইসরাঈল বা সূরা ইসরা (আরবি ভাষায়: سورة الإسراء) মুসলমানদের ধর্মীয় গ্রন্থ কুরআনের ১৭ তম সূরা, এর আয়াত সংখ্যা ১১১ টি এবং এর রূকুর সংখ্যা ১২ টি।
বনী-ইসরাঈল সূরাটি মক্কায় অবতীর্ণ হয়েছে। এই সূরা মুহাম্মাদ এর মেরাজের কথা, পিতা-মাতার ও আত্মীয়-স্বজনের হক, এতীমদের সম্পর্কে, ওয়াদা করার সম্পর্কে, নামায সম্পর্কে, রূহু সম্পর্কে কুরাইশদের প্রশ্ন, বলা হয়েছে।
মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসা পর্যন্ত সফরকে 'ইসরা' বলা হয় এবং সেখান থেকে আসমান পর্যন্ত যে সফর হয়েছে, তার নাম মে'রাজ। ইসরা অকাট্য আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। আর মে'রাজ সূরা নাজমে উল্লেখিত রয়েছে এবং অনেক মুতাওয়াতির হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। মে'রাজে গিয়ে মুহাম্মাদ তার উম্মতের জন্য প্রথমে পঞ্চাশ ওয়াক্তের নামাজ ফরয হওয়ার নির্দেশ হয়। অতঃপর তা হ্রাস করে পাঁচ ওয়াক্ত করে দেয়া হয়। এ দ্বারা সব এবাদতের মধ্যে নামাজের বিশেষ গুরুত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়। হরবী বলেনঃ ইসরা ও মে'রাজের ঘটনা রবিউস সানি মাসের ২৭ তম রাত্রিতে হিজরতের এক বছর পূর্বে ঘটেছে। ইবনে কাসেম সাহাবী বলেনঃ নবুওয়ত প্রাপ্তির আঠারো মাস পর এ ঘটনা ঘটেছে। মুহাদ্দেসগণ বিভিন্ন রেওয়ায়েত উল্লেখ করার পরে কোন সিদ্ধান্ত লিপিবদ্ধ করেননি। কিন্তু সাধারণভাবে খ্যাত এই যে, রজব মাসের ২৭ তম রাত্রি মে'রাজের রাত্রি।
মসজিদে-হারাম ও মসজিদে-আকসা
হযরত আবু যর গেফারী বলেনঃ আমি রসূলুল্লাহ্ -কে জিজ্ঞেস করলামঃ বিশ্বের সর্বপ্রথম মসজিদ কোনটি? তিনি বললেনঃ মসজিদে হারাম। অতঃপর আমি আরয করলামঃ এরপর কোনটি? তিনি বললেনঃ মসজিদে আকসা। আমি জিজ্ঞেস করলামঃ এতদুভয়ের নির্মাণের মধ্যে কতদিনের ব্যবধান রয়েছে? তিনি বললেনঃ চল্লিশ বছর। তিনি আরও বললেনঃ এ তো হচ্ছে মসজিদদ্বয়ের নির্মাণক্রম। কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা আমাদের জন্যে সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠকেই মসজিদ করে দিয়েছেন। যেখানে নামাযের সময় হয়, সেখানেই নামায পড়ে নাও।[২] তফসীরবিদ মুজাহিদ বলেনঃ আল্লাহ্ তাআলা বায়তুল্লাহ্র স্থানকে সমগ্র ভূ-পৃষ্ঠ থেকে দু'হাজার বছর পূর্বে সৃষ্টি করেছেন এবং এর ভিত্তিস্তর সপ্তম যমীনের অভ্যন্তর পর্যন্ত পৌছেছে। মসজিদে আকসা হযরত সোলায়মন নির্মাণ করেছেন।[৩] বায়তুল্লাহ্র চারপাশে নির্মিত মসজিদকে-হারাম বলা হয়।
কুরাইশদের প্রশ্ন
মুসনাদে আহমদের রেওয়াতে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস বর্ণনা করেনঃ কোরাইশরা রসূলুল্লাহ্ -কে সঙ্গত অসঙ্গত প্রশ্ন করত। একবার তারা মনে করল যে, ইহুদীরা বিদ্বান লোক। তারা পূর্ববর্তী গ্রন্থসমূহেরও জ্ঞান রাখে। কাজেই তাদের কাছ থেকে কিছু প্রশ্ন জেনে নেয়া দরকার; যেগুলো দ্বারা মুহাম্মদের পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। তদনুসারে কোরাইশরা কয়েকজন লোক ইহুদীদের কাছে প্রেরণ করল। তারা শিখিয়ে দিল যে, তোমরা তাকে রূহু সম্পর্কে প্রশ্ন করো।[৪] তখন ইহুদীরা রসূলুল্লাহ্ -কে রূহু সম্পর্কে প্রশ্ন করে এবং তাতে এ কথাও ছিল যে, রূহুকে কিভাবে আযাব দেয়া হয়। তখন পর্যন্ত এ সম্পর্কে কোন আয়াত নাযিল হয়নি বিধায় রসূলুল্লাহ্ তাৎহ্মণিক উত্তরদানে বিরত থাকেন। এরপর জিবরাইল আয়াত নিয়ে অবতরণ করেন।
“ قُلِ الرُّوحُ مِنْ أَمْرِ رَبِّي ”
“ অর্থাৎ বলে দিনঃ রূহ আমার পালনকর্তার আদেশ ঘটিত। --- (সূরা বনী-ইসরাঈল, আয়াতঃ ৮৫) ”
এ জওয়াবে যতুটুকু বিষয় বলা জরুরী ছিল এবং যতটুকু বিষয় সাধারণ লোকের বোধ্যগম্য ছিল, ততটুকুই বলে দেয়া হয়েছে। রসূলুল্লাহ্ -কে আদেশ করা হয়েছে যে, আপনি তাদেরকে উত্তরে বলে দিনঃ রূহ আমার পালনকর্তার আদেশ ঘটিত। অর্থাৎ রূহু সাধারণ সৃষ্টজীবের মত উপাদানের সমন্বয়ে এবং জন্ম ও বংশবিস্তারের মাধ্যমে অস্তিত্ব লাভ করেনি; বরং তা সরাসরি আল্লাহ্ তাআলার আদেশ (হও) দ্বারা সৃজিত।[৫]
তথ্যসূত্র
মারেফুল কোরআন, ৭৬৪ পৃষ্ঠা।
মুসলিম শরীফ।
নাসায়ী, তফসীর কুরতুবী, ১২৭ পৃষ্ঠা, ৪র্থ খন্ড।
ইবনে কাসীর।
মারেফুল কোরআন, ৭৯০ থেকে ৭৯১ পৃষ্ঠা।