আয়নিক যৌগ পানিতে দ্রবীভূত হয়। তবে সব যৌগের দ্রবীভূত হবার ক্ষমতা কিন্তু এক নয়। কোনো লবণ পানিতে কত পরিমাণে দ্রবীভূত হতে পারে এ থেকেই দ্রাব্যতা (Solubility) এর উৎপত্তি। এটি একটি ভৌত রাশি যা পরিমাপযোগ্য এবং রাশিটির ইংরেজি নামের আদ্যক্ষর অনুসারে একে S দ্বারা সূচিত করা হয়।
পানিতে কোনো আয়নিক লবণের দ্রাব্যতা হল সে 1 litre পানিতে কত পরিমাণে (এই পরিমাণের প্রকাশ হতে পারে মোলসংখ্যায় অথবা নেহাত ভরে) দ্রবীভূত হয়ে সম্পৃক্ত দ্রবণ তৈরি করে। তার মানে, ঐ পরিমাণের বেশি লবণ 1 litre পানিতে দিলে তা আর দ্রবীভূত হবে না। এই পরিমাণ উষ্ণতার সাথে পরিবর্তনশীল কারণ তাপমাত্রা বাড়ালে পানি বেশি বেশি পরিমাণে দ্রবীভূত করতে পারে ঐ পদার্থ।
যেমন AgCl এর 25°C দ্রাব্যতা 0.002 g/L যার অর্থ ঐ তাপমাত্রায় 1 litre পানিতে সর্বোচ্চ 0.002 g AgCl দ্রবীভূত করে তা সিলভার ও ক্লোরাইড আয়নে পরিণত করতে পারবে। এর চেয়ে বেশি আর এক চিমটি লবণও ঐ পানিতে আয়নিত হতে চাবে না।
দ্রাব্যতার উপর নির্ভর করে আমরা আয়নিক যৌগসমূহকে নানা ক্যাটাগরিতে ভাগ করতে পারি। এই যেমন দেখ, NaCl হল পানিতে অতিদ্রবণীয়, LiF কে বলতে পারি দ্রবণীয়, Ca(OH)2 হল অল্প দ্রবণীয়, Cu(OH)2 হল প্রায় অদ্রবণীয়। সরাসরি অদ্রবণীয় কাউকেই বলা যায় না কারণ অত্যল্প হলেও কিছু পরিমাণে সকলেই দ্রবীভূত হবার সক্ষমতা রাখে। এটাও বুঝতে সমস্যা হয় না যে, যার দ্রাব্যতা যত কম, তার জন্য S এর মানও তত কম হয়।
দ্রাব্যতা গুণফল এর যে সংজ্ঞা : “নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো আয়নিক যৌগের সম্পৃক্ত দ্রবণে ঐ যৌগের সংগঠক আয়নসমূহের যথোপযুক্ত ঘাতসহ মোলার ঘনমাত্রার গুণফলকে ঐ তাপমাত্রায় যৌগটির দ্রাব্যতা গুণফল বলে”।
ধরে যাক, M A একটা আয়নিক লবণ (M হল ক্যাটায়নের প্রতীক, A অ্যানায়নের) যার পানিতে দ্রাব্যতা S mol/L.
1 litre পানিতে লবণটির কেবল S mol দ্রবীভূত হওয়াই সম্ভব। যেহেতু প্রতি অণু থেকে m mol ক্যাটায়ন উৎপন্ন হয় তাই ঐ দ্রবণে ক্যাটায়নের মোলসংখ্যা হবে mS, একইভাবে অ্যানায়নের মোলসংখ্যাও হবে aS. ক্যাট্যায়ন ও অ্যানায়নের চার্জ এরকম হল কেন তা বুঝতে হলে ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড বা ক্যালসিয়াম ফসফেটের পানিতে বিয়োজনের সাথে এটার তুলনা কর।
কিন্তু লবণটি পানিতে সম্পৃক্ত দ্রবণ তৈরি করার পর কিছু অতিরিক্ত লবণ পাত্রের তলায় পড়ে আছে এবং এটার সাথে দ্রবণের কিছু একটা যেন ঘটছে!! এই কিছু একটা কী? আমরা আবিষ্কার করলাম, এমতাবস্থায় দ্রবণ থেকে কিছু পরিমাণ আয়ন আবার সলিড অবস্থায় ব্যাক করে নিচে জমছে আর একইসময়ে কিছু কঠিন লবণ বিয়োজিত হয়ে দ্রবণে ক্যাটায়ন অ্যানায়ন দান করছে! এ যেন ঠিক উভমুখী বিক্রিয়ার মত। আর এই দুই বিপরীত ক্রিয়ার সংঘটনের গতিবেগও এক! তারমানে আমরা উভমুখী বিক্রিয়াটাকে সাম্যাবস্থায় উপনীত হয়েছে বলে দেখতে পাচ্ছি!!