জলাতঙ্ক যে খুবই ভয়াবহ একটি অসুখ এতে সন্দেহ নেই। কুকুর, বিড়াল কামড় বা আঁচড় দিলেই তাই আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ি, টিকা লাগবে কি না? এই আতঙ্ক মোটেও অমূলক নয়। তাই কয়েকটি দরকারি ব্যাপার জেনে রাখা ভালো।
জলাতঙ্কের ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয় এবং রোগী আলো, শব্দ, হাওয়ার প্রতি ভীতি অনুভব করে। খিঁচুনি হতে পারে এবং খাদ্য গেলার পেশী শক্ত হয়ে যায়। পানি পান করাও অসম্ভব হয়ে পড়ে। দুই থেকে সাত দিনের মধ্যে (সংখ্যাটির খুবই তারতম্য হতে পারে) মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
ভাইরাসটি ছড়ানোর জন্য কিছু পশু আর পাখি হিসেবের মধ্যে রাখা হয়। কুকুর, বিড়াল, শেয়াল, ইঁদুর, খরগোশ, বানর, বাদুড়সহ প্রায় সকল মাংসাশী প্রাণী জলাতঙ্ক ভাইরাস ছড়াতে পারে। এজন্য তাকে নিচের যে কোনো একটি কাজ করতে হবে।
১। কামড় দিতে হবে
২। আঁচড় দিতে হবে
৩। ক্ষত চামড়ায় লেহন (চাটা) করতে হবে
৪। যে কোনোভাবে মিউকাস আবরণী (অর্থাৎ দেহের যে কোনো ছিদ্রের ভেতরের চারপাশের নরম অংশ) স্পর্শ করতে হবে
৫। বাদুড়ের বিষ্ঠা শ্বাসের মাধ্যমে প্রবেশ করে।
এইবার আসা যাক টিকা প্রসঙ্গে। যদি আপনার গৃহপালিত পশু দিয়ে আক্রান্ত হন, পশুটি সুস্থ থাকে, আর আপনি নিশ্চিতভাবে পরবর্তী দশ দিন পশুটিকে পর্যবেক্ষণ করতে পারবেন, তবে তাৎক্ষণিক টিকা নেয়া লাগবে না। কিন্তু দশ দিনের ভেতরে পশুটির রোগের কোনো লক্ষণ দেখামাত্র আপনার টিকা নিতে হবে, পশুটিকে ব্যথামুক্ত নিধন করতে হবে (সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী) এবং মৃত পশুটিকে পরীক্ষা করাতে হবে। অন্যান্য যে কোনো ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিক টিকা নিতে হবে। যে কোনো সন্দেহ, প্রশ্নের জন্য জনস্বাস্থ্য বিভাগে পরামর্শ নিতে পারেন।
আগে ঘঞঠ-অজঠ টিকাটি নাভীর চারদিকে চামড়ার নিচে চৌদ্দদিন দেয়া হতো। তবে বর্তমানে ঐউঈঠ, চঠজঠ, চঈঊঈ প্রভৃতি টিকা বেশি জনপ্রিয়। পূর্বে টিকা নেননি এমন রোগীর জন্য বাহুর পেশিতে ০, ৩, ৭, ১৪ এবং ২৮ (ঐচ্ছিক) তম দিন টিকা নিতে হবে। শিশুদেরও একই ডোজ (জধনরঢ়ঁৎ ১সষ), একই নিয়ম। এক বছরের মধ্যে আবার আক্রান্ত হলে ১টি টিকা, ৫ বছরের মধ্যে আক্রান্ত হলে ২টি টিকা (০,৩য় দিন) এবং এর পরে আক্রান্ত হলে আবার সবগুলো টিকা নিতে হবে।
এছাড়া ইমিউনো গেøাবিন দিয়ে আক্রান্ত হওয়ার সাথে সাথে আরেক ধরনের টিকা নিয়ে পরোক্ষ উপকার পাওয়া যায়।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, যাদের পশু দিয়ে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি আছে, তারা আক্রান্ত হওয়ার আগেই সতর্কতামূলক টিকা নিয়ে রাখতে পারেন। গৃহপালিত পশুদেরও নিয়মিত জলাতঙ্কের টিকা দিয়ে রাখা উচিত।