ভারত উপমহাদেশ তথা বাংলার রজনৈতিক ইতিহাসে স্বরাজদল গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। মহাত্মা গান্ধী ১৯২২ সালে অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করে নিলে কংগ্রেসের একদল ত্যাগী ও বিপ্লবী নেতা ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সেই সংকটময় মূহুর্তে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচিকে সামনে রেখে একটি বিকল্প প্লাটফর্ম হিসেবে স্বরাজ দল গঠন করে।১৯২২-১৯২৫ সাল পর্যন্ত এ দলটি ভারতের রাজনীতিতে বেশ কিছু নতুন ধারা চালু করে।
স্বরাজ দল গঠনের পটভূমি সম্পাদনা
১.অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার পরবর্তী রাজনৈতিক শূন্যতা:১৯২২ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি গান্ধীজী অসগযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করলে সারা দেশে একটি রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। গান্ধীজী, চিত্তরঞ্জন দাশসহ অনেক নেতাই কারারুদ্ধ থাকায় রাজনীতিতে ঘোরতর অনিশ্চয়তার দেখা দেয়। মানুষ এ সময় ছিল আন্দোলনমুখী। গান্ধীর সঙ্গে চিত্তরঞ্জন,মতিলাল নেহেরু প্রমুখ নেতাদের মতবিরোধ তখন থেকেই চরম রুপ নেয়। কংগ্রেসের বিভিন্ন অধিবেশনে স্বরাজ প্রতিষ্ঠার মত ও পথ নিয়ে দ্বিধাবিভক্তি লক্ষ্য করা যায়।
২.কংগ্রেসের বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলন:কলকাতায় ১৯২০ সালে কংগ্রেসের অধিবেশনে মহাত্মা গান্ধী পরিষদে প্রবেশের বিপক্ষে অবস্থান নেন। অন্যদিকে আলীপুর জেলে বন্দি থাকাকালেই চিত্তরঞ্জন দাশ ব্যবস্থাপক পরিষদে যোগদান করে সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগের কর্মসূচির রুপরেখা প্রণয়ন করেন। এ পরিকল্পনায় আইনসভা, স্বশাসিত সংস্থার নির্বাচন বয়কট না করে অংশগ্রহণের মাধ্যমে সরকারের কার্যক্রম অচল করে দেয়ার মাধ্যমে স্বরাজ আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব ছিল। ১৯২২ সালের মে মাসে চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত কংগ্রেসের বঙ্গীয় প্রাদেশিক সম্মেলনে সভানেত্রী রুপে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জনের স্ত্রী বাসন্তী দেবী তার স্বমীর দেয়া প্রস্তাবের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। চিত্তরঞ্জন ও মতিরাল নেহেরু জুন মাসে কারামুক্ত হয়ে এ প্রস্তাবের পক্ষে জনমত গঠনে আত্মনিয়োগ করেন। কংগ্রেসের নেতাদের মধ্যে হাকিম আজমল খান, বিটল ভাই,প্যাটেল,জয়াকার প্রমুখ এ মতের সমর্থক ছিলেন।
৩.লক্ষ্মৌ অধিবেশন:কংগ্রেসের লক্ষ্মৌ অধিবেশনে কংগ্রেসের নেতুবৃন্দ মতভেদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। রাজাগোপালচারী,ডা. আনসারি ও কস্তুরীঙ্গ আয়েঙ্গার বর্জনের ওপর জোড় দেন। অন্যদিকে চিত্তরঞ্জন, মতিলাল,আজমল আন্দোলন চারিয়ে যাওয়ার পক্ষে মত দেন।
৪.গয়া অদিবেশন:এ বিরোধের নিষ্পত্তি হয় ১৯২২ সালের ডিসেম্বর মাসে গয়ায় কংগ্রেসের অধিবেশনে। এর সভাপতি ছিলেন স্বয়ং চিত্তরঞ্জন।
হিন্দস্বরাজ:ইহা গান্ধিজীর নিজ স্বরাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে রচিত একটি বই। যা তিনি নিজেই গুজরাটি ভাষায় লিখেছিলেন। যা পরবর্তীকালে অন্যান্য ভাষায়ও অনুবাদ করা হয়।