এক গবেষণায় দেখা গেছে যে, শতকরা ৯৫ জন পুরুষ এবং শতকরা ৮৯ জন নারী হস্তমৈথুন বা স্বমেহনে অভ্যস্ত। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় নারী এবং পুরুষ প্রথম যৌনমিলনের স্বাদ গ্রহণ করে স্বমেহনের মাধ্যমে। নিয়মিত যৌনসঙ্গীর অভাবে বহু পুরুষ এবং বহু নারী স্বমেহনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। এটি খুবই সাধারণ যৌনতার আচরণ অনেক পুরুষ ও নারী ছোটবেলাতেই স্বমেহনে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। হয়তো তাদের মনের অজান্তেই তারা এই আনন্দটি উপভোগ করতে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে।
হস্তমৈথুন কাকে বলে:
ছেলেদের হস্তমৈথুনের সাধারন পদ্ধতি হল - লিঙ্গ হাতের মুঠোয় নিয়ে সামনে ও পিছনে সজোরে সঞ্চালন করা । ফলে হাতের আঙ্গুলের সাহায্যে লিঙ্গের মুন্ডে চাপ কমে ও বাড়ে । সেই সঙ্গে লিঙ্গকে মাঝখানে রেখে উরূদুটি সামনে ও পিছনে রগরানো । কখনো বালিশে, গোটানো বেডশিটে, তোশকে বা এ জাতীয় কোন বস্তুতে, তীব্র জলের ধারা দিয়েও হস্তমৈথুনকরে থাকে অনেকেই ।
হস্তমৈথুন শুধু কম বয়ষ্কদের জন্য নয়, এটি বিবাহ-পূর্ব জীবন পর্যন্ত সকল অবিবাহিত নারী পুরুষের জন্য একটি স্বাভাবিক যৌনাচার। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ৭০ থেকে ৯০ ভাগ নারী পুরুষ হস্তমৈথুন করে থকেন।
হস্তমৈথুন এমন একটি অভ্যাস যা একবার কাউকে পেয়ে বসলে ত্যাগ করা খুবই কষ্টকর হয়ে দাড়ায়। শুধু তাই না অভ্যাসটিই এক সময় অনেকের যৌন জীবন বিপর্যস্ত করে তুলে। যারা নিদারুন হস্তমৈথুন অভ্যাসে আসক্ত হয়ে পড়েছেন এবং ত্যাগ করার জন্য আপ্রান চেষ্টা করা সত্তেও ছাড়তে পারছেন না তাদের জন্য আজকের এই লেখা।
অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের পরিণাম:
অনেকেই অতিরিক্ত হস্তমৈথুনের ফলে শক্তি হ্রাস সহ নানাবিদ শারীরিক সমস্যায় ভোগেন। তার মধ্যে উল্ল্যেখযোগ্য হলোঃ
১. শারীরিক ব্যথা এবং মাথা ঘোরা।
২. যৌন ক্রিয়ার সাথে জড়িত স্নায়ুতন্ত্র দুর্বল হওয়া অথবা ঠিক মত কাজ না করার পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়া।
৩. শরীরের অন্যান্য অঙ্গ যেমন: হজম প্রক্রিয়া এবং প্রসাব প্রক্রিয়ায় সমস্যা সৃষ্টি করে। দ্রুত বীর্যস্থলনের প্রধান কারণ অতিরিক্ত হস্তমৈথুন।
৪. হস্তমৈথুনের ফলে অনেকেই কানে কম শুনতে পারেন এবং চোঁখে ঘোলা দেখতে পারেন।
তবে, যারা হস্তমৈথুনেঅভ্যস্ত, তাদের পক্ষে হঠাত্ করে হস্তমৈথুন ত্যাগকরা সম্ভব নয়। তাই ধীরে ধীরে হস্তমৈথুন ত্যাগ করুন এবং অকাল বীর্যপাত রোধ করুন।
হস্তমৈথুন ছাড়ার টিপস:
1) কোন কোন সময় হস্তমৈথুন বেশি করেন, সেই সময়গুলো চিহ্নিত করুন। বাথরুম বা ঘুমাতে যাওয়ার আগে যদি উত্তেজিত থাকেন, বা হঠাত কোন সময়ে যদি এমন ইচ্ছে হয়, তাহলে সাথে সাথে কোন শারীরিক পরিশ্রমের কাজে লাগে যান। যেমন বুকডন বা অন্য কোন ব্যায়াম করতে পারেন। যতক্ষণ না শরীর ক্লান্ত হয়ে যায়, অর্থাত্ হস্তমৈথুন করার মত আর শক্তি না থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত সেই কাজ বা ব্যায়াম করুন। গোসল করার সময় এমন ইচ্ছে জাগলে শুধু ঠাণ্ডা পানি ব্যবহার করুন এবং দ্রুত গোসল ছেড়ে বাথরুম থেকে বের হয়ে আসুন।
2) মেয়েদের দিকে কুনজরে তাকাবেন না। তাদের ব্যাপারে বা দেখলে মন আর দৃষ্টি পবিত্র করে তাকাবেন।
3) যতটা সম্ভব নিজেকে কাজে ব্যস্ত রাখুন।
4) ধৈর্য ধরতে হবে। একদিনেই নেশা থেকে মুক্তি পাবেন, এমন হবে না। একাগ্রতা থাকলে ধীরে ধীরে যে কোন নেশা থেকেই বের হয়ে আসা যায়। মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যাবে। তখন হতাশ হয়ে সব ছেড়ে দেবেন না। চেষ্টা করে যান। করতেই থাকুন।
5) যে কোন উপায়ে পর্ণমুভি আর চটি এড়িয়ে চলুন।
6) কম্পিউটারে পর্ণ দেখতে দেখতে হস্তমৈথুন করলে কম্পিউটার লিভিং রুমে নিয়ে নিন যাতে অন্যরাও দেখতে পায় আপনি কী করছেন। এতে পর্ণ সাইটে ঢোকার ইচ্ছে কমে যাবে।
7) যেসব ব্যাপার আপনাকে হস্তমৈথুনের দিকে ধাবিত করে, সেগুলো ছুড়ে ফেলুন, সেগুলো থেকে দূরে থাকুন। যদি মাত্রাতিরিক্ত হস্তমৈথুন থেকে সত্যি সত্য মুক্তি পেতে চান তাহলে পর্ণ মুভি বা চটির কালেকশন থাকলে সেগুলো এক্ষুনি নষ্ট করে ফেলুন। ইন্টারনেট ব্যবহারের আগে ব্রাউজারে্র প্যারেন্টাল কন্ট্রোল-এ গিয়ে এডাল্ট কন্টেন্ট ব্লক করে দিন। কোন সেক্স টয় থাকলে এক্ষুনি গার্বেজ করে দিন।
8) হস্তমৈথুন একেবারেই ছেড়ে দিতে হবে না। নিজেকে বোঝাবেন যে মাঝে মাঝে করবেন। ঘনঘন নয়।
9) যারা বাজে বিষয় নিয়ে বা মেয়েদের নিয়ে বা পর্ণ মুভি বা চটি নিয়ে বেশি আলোচনা করে, তাদেরকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
10) হস্তমৈথুনে চরম ভাবে এডিক্টেড হলে কখনোই একা থাকবেন না, ঘরে সময় কম কাটাবেন, বাইরে বেশি সময় কাটাবেন। জগিং করতে পারেন, সাইকেল নিয়ে ঘুরে আসতে পারেন। ছাত্র হলে ক্লাসমেটদের সাথে একসাথে পড়াশুনা করতে পারেন। লাইব্রেরি বা কফি শপে গিয়ে সময় কাটাতে পারেন।
11) সন্ধ্যার সময়ই ঘুমিয়ে পড়বেন না। কিছু করার না থাকলে মুভি দেখুন বা বই পড়ুন।
12) ভিডিও গেম খেলতে পারেন। এটাও হস্তমৈথুনের কথা ভুলিয়ে দেবে।
13) সেক্সুয়াল ব্যাপারগুলো একেবারেই এড়িয়ে চলবেন। এধরনের কোন শব্দ বা মন্তব্য শুনবেন না।
14) ছোট ছোট টার্গেট সেট করুন। ধরুন প্রথম টার্গেট টানা দুইদিন হস্তমৈথুন করবেন না। দুইদিন না করে পারলে ধীরে ধীরে সময় বাড়াবেন।
15) যখন তখন বিছানায় যাবেন না। কোথাও বসলে অন্যদের সঙ্গ নিয়ে বসুন।
16) বাথরুম শাওয়ার নেয়ার সময় হস্তমৈথুনের অভ্যাস থাকলে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাথরুম থেকে বের হয়ে আসতে চেষ্টা করুন।
17) যখনি মনে সেক্সুয়াল চিন্তার উদয় হবে, তখনই অন্য কিছু নিয়ে চিন্তা করবেন।
18) বন্ধুবান্ধব ও পরিবারের সবার সাথে বেশি সময় কাটান।
19) ধ্যান বা মেডিটেশন করতে পারেন। যোগ ব্যায়াম করতে পারেন।
20) নিজের পরিবারের কথা চিন্তা করবেন, আপনার সাথে যারা আছে তাদের কথা ভাববেন।
21) রাতের বেলা হস্তমৈথুন করলে কারো সাথে রুম শেয়ার করুন। বা দরজা জানালা খোলা রেখে আলো জ্বালিয়ে ঘুমান। যখন দেখবেন যে সব চেষ্টা করেও একা একা সফল হতে পারছেন না, তখন বন্ধুবান্ধব, পরিবার, ডাক্তার- এদের সাহায্য নেয়া যায়। এখানে লজ্জার কিছু নাই।
22) কোনদিন করেন নাই, এমন নতুন কিছু ভাল কাজ করার চেষ্টা করুন।
23) উপুর হয়ে শুয়ে ঘুমাবেন না।
24) বিকেলের পরে উত্তেজক ও গুরুপাক খাবার খাবেন না।
25) গার্লফ্রেণ্ড বা প্রেমিকাদের সাথে শুয়ে শুয়ে, নির্জনে বসে প্রেমালাপ করবেন না।
26) ফোনসেক্স এড়িয়ে চলার চেষ্টা করুন।
মনে রাখবেন, সামান্য কষ্টের মাধ্যমে নিজেকে একটু কন্ট্রোল করতে পারলেই আপনি এর থেকে খুব সহজই মুক্তি পাবেন।