You can also earn money by answering questions on this site Find out the details

Categories

Sister Links: -- Nishiddho--BDLove24--Cerapatabd ....
140 views
in ধর্ম ও আধ্যাত্মিক বিশ্বাস by (-14 points)

1 Answer

0 like 0 dislike
হাসাদ শব্দটি আরবি। এর অর্থ হিংসা করা। হাসাদ বা হিংসা একটি মারাত্মক বদগুণ। এটি এতই নিকৃষ্ট যে, এর কারণে সবাই কষ্ট পায়। যার প্রতি হিংসা করা হয় সে তো কষ্ট পায়ই, এমনকি খোদ হিংসুক নিজেও এর কারণে কষ্ট পায়। এছাড়াও হিংসার আগুন যখন জ্বলে উঠে তখন আশপাশের লোকও এ থেকে রেহাই পায় না। হাসাদ থেকে আশ্রয় চাওয়ার জন্য আল কোরআনে এরশাদ হচ্ছে, ‘আর (আশ্রয় চাচ্ছি) হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে।’ (সূরা ফালাক : ৫)।
কোরআনে হাসাদ
আল কোরআনের অনেক স্থানে হাসাদ বা হিংসার নিন্দাবাদ করা হয়েছে। বিশেষ করে হিংসুক জাতি ইহুদিদের আচরণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলা হয়েছে, তাদের অবাধ্যতার জন্য হাসাদ বা হিংসা নামের বদচরিত্রই দায়ী। যেমন— এক আয়াতে বলা হয়েছে, ‘নাকি তারা মানুষের প্রতি এজন্য হিংসা করে যে, আল্লাহ তায়ালা তাদের স্বীয় করুণা দান করেছেন।’ (সূরা নিসা : ৫৪)। হাসাদ একটি চরম ঘৃণিত বদখাসিলত। তাই তো কোরআনে হাসাদ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনা করতে বলা হয়েছে। সূরা ফালাকে বলা হয়েছে, ‘আর (আমি আশ্রয় চাই) হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে।’ হাসাদ বা হিংসা থেকে বারণ করে আল্লাহ তায়ালা অপর স্থানে বলেন, ‘আর তোমরা কামনা করো না ওই জিনিস, যা দিয়ে আল্লাহ তায়ালা তোমাদের কাউকে অপর কারো ওপর প্রাধান্য দিয়েছেন।’
ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, ‘হাসাদ বা হিংসা করা নিন্দনীয় এবং হিংসুক নিজে সর্বদা চিন্তাযুক্ত থাকে। হিংসা নেক আমলকে সেভাবে খেয়ে ফেলে, যেভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে। বলা হয়, হাসাদ বা হিংসা হলো পৃথিবীর প্রথম পাপ, যা আসমানে করা হয়েছিল আর তা দুনিয়ারও প্রথম পাপ। আসমানে আদম (আ.) এর প্রতি হিংসা করেছিল ইবলিশ। আর জমিনে কাবিল হিংসা করেছিল তার ভাই হাবিলের প্রতি।’
হাদিসে হাসাদ
হাসাদ বা হিংসা একটি মারাত্মক বদগুণ বা হারাম স্বভাব। অসংখ্য হাদিসে এ ব্যাপারে উম্মতকে সতর্ক করা হয়েছে। যেমন— আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা পরস্পরের প্রতি হাসাদ করো না, একে অন্যের পেছনে পড় না। আর তোমরা পরস্পর ভাই হিসেবে আল্লাহর বান্দা হয়ে যাও।’ আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা হিংসা করা থেকে বেঁচে থাকো। কেননা হিংসা নেক আমলকে সেভাবে খেয়ে ফেলে, যেভাবে আগুন কাঠকে খেয়ে ফেলে।’
সালাফদের দৃষ্টিতে হাসাদ
* মোয়াবিয়া (রা.) বলেন, কোনো নেয়ামতের প্রতি হিংসাকারীকে ব্যতীত প্রত্যেক মানুষকে খুশি করা যায়। কারণ হিংসুক নেয়ামত ধ্বংস না হওয়া পর্যন্ত খুশি হয় না।
* মুহাম্মদ ইবনে সিরিন (রহ.) বলেন, আমি দুনিয়াবি ব্যাপারে কখনও কোনো মানুষের প্রতি হিংসা করি না। কারণ, যদি সে জান্নাতি হয় তবে কীভাবে আমি দুনিয়া নিয়ে তার সঙ্গে হিংসা করতে পারি। অথচ জান্নাতের তুলনায় খুবই নগণ্য। আর যদি সে জাহান্নামি হয়, তবুও কীভাবে আমি তার প্রতি হিংসা করতে পারি। কেননা, সে তো জাহান্নামি।
* হাসান বসরি (রহ.) বলেন, আমি হিংসুকের মতো এমন জালেমকে দেখিনি, যে জালেম হয়েও মজলুমের সঙ্গে সাদৃশ্য রাখে। সে সর্বদা আফসোস করে, সার্বক্ষণিক টেনশনে ভোগে এবং বিরামহীন দুশ্চিন্তায় আক্রান্ত থাকে।
* আবু হাতেম (রহ.) বলেন, কোনো জ্ঞানী ব্যক্তির জন্য কখনও কোনো হিংসুকের সোহবতে যাওয়া সমীচীন নয়। কারণ, হিংসুকের সবচেয়ে নিকৃষ্ট খাসিলত হলো সে আল্লাহর ফয়সালায় অসন্তুষ্ট। বরং সে আল্লাহর হুকুমের বিপরীত ইচ্ছা করে। আর অন্তরে মুসলিম ভাইয়ের নেয়ামত ধ্বংসের জন্য চিন্তা ফিকির করে।
* খাত্তাব ইবনে নুমাইর বলেন, হিংসুক এক ধরনের পাগল। কারণ সে ভালো ও মন্দ সবকিছুর প্রতিই হিংসা করে থাকে।
* আবুল লাইছ সমরখন্দি (রহ.) বলেন, হিংসাকৃতের প্রতি হিংসুকের হিংসা পৌঁছার আগে তার কাছে ৫টি শাস্তি এসে পৌঁছে থাকে। যথা— (১) নিরবচ্ছিন্ন চিন্তা, (২) বিনা সওয়াবের মুসিবত, (৩) লাঞ্ছনা, (৪) আল্লাহর ক্রোধ এবং (৫) তৌফিকের দরজা বন্ধ হওয়া।
হাসাদের ক্ষতি
হাসাদের অনেক ক্ষতি আছে। যেমন—
* হাসাদ শারীরিক রোগের জন্ম দেয়।
* মানুষের কাছে হিংসুকের সামাজিক মর্যাদা কমে যায়।
* মানুষ তাকে ঘৃণা করে।
* সে আল্লাহর নাখোশি অর্জন করে।
* আত্মীয়-বন্ধুদের সঙ্গে তার সম্পর্ক নষ্ট করে।
* হাসাদ থেকে গিবত ও চোগলখোরি নাম দুইটি বদখাসিলত সৃষ্টি হয়।
* হাসাদের কারণেই জুলুম, শত্রুতা, চুরি, হত্যাকা- ইত্যাদি ঘটনা ঘটার পথ তৈরি হয়।
হাসাদে নিপতিত হওয়ার কারণ
হাসাদ বা হিংসায় নিপতিত হওয়ার বিভিন্ন কারণ রয়েছে। ইমাম গাজালি (রহ.) হিংসায় নিপতিত হওয়ার সাতটি কারণ বর্ণনা করেছেন। যেমন—
* শত্রুতা : শত্রুতা হিংসা সৃষ্টি করে। মানুষ শত্রুর প্রতি হিংসা করে থাকে। কারণ কোনো মানুষ কখনও তার শত্রুর ভালো দেখতে পারে না। তাই সর্বদা সে তার অকল্যাণ কামনা করে এবং তার নেয়ামতের ধ্বংস কামনা করে।
* নিজেকে অধিক সম্মানিত মনে করা : এ স্বভাবটি মানুষকে হিংসুক বানায়। বিশেষ করে সে যখন এমন কাউকে দেখে যে জ্ঞান ও সম্মানে তাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছে। তখন সে জ্ঞানে বা মর্যাদায় তাল মেলাতে না পেরে তার প্রতি হিংসা করা শুরু করে। এটি এক ধরনের অহমিকাও বটে।
* অহঙ্কার : অহঙ্কার মানুষকে হিংসুক বানায়। কারণ অহঙ্কারী সর্বদা নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করে থাকে। তাই যখনই সে কাউকে তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে দেখে অহঙ্কারবশত সে তখন তার ওপরে উঠতে চায়। কিন্তু অপারগ হয়ে অবশেষে সে হিংসার আগুনে জ্বলতে থাকে।
* তাআজ্জুব বা উজবধারী হওয়া : উজব হলো নিজের সিদ্ধান্তকে ভালো ও একমাত্র সঠিক মনে করা। এ অভ্যাস মানুষকে হিংসুক বানায়। কারণ, উজবধারী যখন দেখে তার সমকক্ষ কেউ তার ওপরে চলে যাচ্ছে, এটা সে সহ্য করতে পারে না। ফলে সে হিংসা করা শুরু করে।
* উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যর্থ হওয়া : কেউ যদি অন্যের কারণে নিজের উদ্দেশ্য হাসিলে ব্যর্থ হয়, তখন সে ওই ব্যক্তির প্রতি হিংসা করতে শুরু করে।
* নেতৃত্বের লোভ : নেতৃত্বের লোভ মানুষকে হিংসুক বানায়। তাকে মাড়িয়ে যদি কেউ নেতা হতে চায়, তবে সে ওই ব্যক্তির প্রতি হিংসা করে থাকে।
* মনের কুটিলতা : অনেক সময় কোনো কারণ ছাড়াই শুধু নফসের অপবিত্রতার কারণেও মানুষ অন্যের প্রতি হিংসা করে থাকে।
হাসাদ পরিত্যাগে সহায়ক গুণাবলি
হাসাদ বা হিংসা করা মারাত্মক গোনাহের কাজ। তাই তা তরক করা জরুরি। কিছু অভ্যাস আছে যা চর্চা করলে হাসাদ পরিত্যাগ করা সহজ হয়। যেমন—
* মানুষের মুআমেলা থেকে অন্তরকে বিচ্ছিন্ন করে আল্লাহর প্রতি মনকে ঝুঁকিয়ে রাখা এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য কামনা করা।
* দুনিয়ার বিষয় নয়, বরং আখেরাতের বিষয়ে প্রতিযোগিতা করা।
* মানুষের জন্য কল্যাণ কামনা করার ব্যাপারে ছোটকাল থেকে অভ্যাস গড়ে তোলা।
* অন্যের কল্যাণ দেখলে মাশাআল্লাহ বলার বা বরকতের দোয়া করার অভ্যাস গড়ে তোলা।
* অন্যের জন্য দোয়া করা। বিশেষ করে কারও মাঝে কোনো নেয়ামত দেখলে তার জন্য বেশি বেশি দোয়া করা।
* আল্লাহর ফয়সালায় সন্তুষ্ট থাকা।
* হিংসার পরিণতি সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করা। এমন ভাবা যে, হিংসা নেক আমলকে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয়।
* মানুষের ঘৃণার ভয় করা। কারণ হিংসুককে সবাই ঘৃণা করে।
* হিংসার বিপরীত কাজ করা। যেমন— হিংসা অনেক সমালোচনা করতে উৎসাহিত করে। তা না করে অন্যের প্রশংসা করা।
* শাহওয়াতকে দমন করে তাকে আল্লাহর সন্তুষ্টিমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করা।
হাসাদ বা হিংসার ক্ষতি থেকে বাঁচার উপায়
হিংসুকের ক্ষতি থেকে বাঁচার কয়েকটি উপায় রয়েছে। যথা—
* আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় চাওয়া। কারণ তিনিই বাঁচানোর একমাত্র মালিক। তাই তো তিনি সূরা ফালাকে এ কথা বলতে শিক্ষা দিয়েছেন, ‘আর (আশ্রয় চাচ্ছি) হিংসুকের অনিষ্ট থেকে, যখন সে হিংসা করে।’
* তাকওয়া ও সবর এখতিয়ার করা। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যদি তোমরা সবর করো এবং আল্লাহকে ভয় করো তবে তাদের চক্রান্ত তোমাদের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’
* শত্রুর শত্রুতার ওপর ধৈর্যধারণ করা। কেননা সবুরে মেওয়া ফলে।
* আল্লাহর ওপর ভরসা করা। কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে আল্লাহ তায়ালাই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।’
* অন্যের হিংসার প্রতি মনোনিবেশ না করা এবং তা নিয়ে চিন্তাফিকির না করা।
* আল্লাহ তায়ালার প্রতি মনোনিবেশ করা এবং সবাইকে মহব্বত করা।
* গোনাহ থেকে তওবা করা। কারণ গোনাহর কারণেই মুসিবত আসে।
* সদকা করা। কারণ সদকার দ্বারা মুসিবত দূর হয়।
* হিংসুকের প্রতি এহসান করে তার অন্তর্জ্বালা দূর করা।
* এ বিশ্বাস করা যে, আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কেউ কোনো ক্ষতি করতে পারে না।
by Earnings: 2.48 Usd (2,428 points)

Related questions

-- Payment Method & Thresholds--Referral Program--Help--
-- FAQ --- Terms --DMCA ---Contact Us --
Language Version--English --Bengali ---Hindi ---
...