হিন্দু আইনের উৎসসমূহ
হিন্দু আইনের উৎস মূলতঃ দুভাগে বিভক্ত- আনুষ্ঠানিক উৎস (Formal Source) ও ব্যবহারিক উৎস (Material Source)।
আনুষ্ঠানিক উৎস (Formal Source)
Shruti (শ্রুতি)
Smrity (স্মৃতি)
Legal digest or commentaries (নিবন্ধ)
Customs (প্রথা)
Factum Valet (ফ্যাক্টাম ভ্যালেট)
Puran (পুরাণ)
ব্যবহারিক উৎস (Material Source)
Legislature (প্রণীত আইন)
Judicial Decisions (বিচারালয়ের সিদ্ধান্ত)
Equity, Justice, and Good Conscience (ন্যায়নীতি, সুবিচার ও সুবিবেচনা)
শ্রুতি (Shruti)
হিন্দু বিশ্বাস মতে, শ্রুতি মূলতঃ মানুষের মুখে মুখে প্রচলিত দেবতাগণের স্বর্গীয় বাণীর সমাহার। প্রাচীনকালে, এই বাণীগুলো লেখার প্রচলন না থাকলেও পরবর্তীতে মুনিবর কৃঞ্চপায়ন তা সংকলন করেন, যাকে বেদ বলা হয়। বেদ মূলতঃ চার খন্ডে বিভক্ত। যথাঃ
ঋক বেদ;
সাম বেদ;
যজু বেদ;ও
অথর্ব বেদ।
স্মৃতি (Smrity)
বেদ স্বর্গীয় বা ঈশ্বরের বাণী হলেও স্মৃতি ঈশ্বরের বাণী নয়; বরং বিভিন্নকালে মুণি-ঋষিগণ, গুরু-শিষ্য পরাম্পরায় যে বাণী মনে রেখে আসছেন তাকে স্মৃতি শাস্ত্র বলে। স্মৃতি শাস্ত্র প্রধানতঃ তিনটি। যথা-
মনু স্মৃতি শাস্ত্র (খীষ্টপূর্ব ৪র্থ শতাব্দীতে সংকলিত)
যাজ্ঞবল্ক স্মৃতি শাস্ত্র (৪র্থ শতাব্দীতে সংকলিত)
নারদ স্মৃতি শাস্ত্র (৫ম বা ৬ষ্ট শতাব্দীতে সংকলিত)
আইনের উৎস হিসেবে শ্রুতির পরেই স্মৃতির স্থান হলেও স্মৃতির কোন নীতি শ্রুতির সহিত সাংঘর্ষিক হলে তা পরিত্যজ্য।
নিবন্ধ (Legal digest or Commentaries)
হিন্দু আইন বিশেজ্ঞগণ বিভিন্ন সময়ে আইনী যে সমস্ত ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ প্রদান করেছেন তাকেই নিবন্ধ বলা হয়। মুণি-ঋষিগণের মুখ নিঃসৃত বাণী সমূহ লিখিত আকারে না থাকায় মুখে মুখে প্রচলিত বাণীর সহিত বিভিন্ন সময় পারস্পারিক বিরোধ নিষ্পত্তির প্রয়োজন হয়। ফলে, হিন্দু আইন বিশারদগণ যে ব্যাখ্যা প্রদান করেন তা আইনের উৎস হিসেবে পরিগণিত। তবে, শ্রুতি বা স্মৃতির মৌলিক কোন নীতির সহিত নিবন্ধ সাংঘর্ষিক হলে তা গ্রহনযোগ্য নয়। হিন্দু আইনে সাধারনতঃ দুই শ্রেণীর নিবন্ধ পরিলক্ষিত হয়। যেমন-
দায়ভাগ (জীবমুতবাহন কর্তৃক সংকলিত
মিতাক্ষরা (বিজ্ঞানেশ্বর কর্তৃক সংকলিত)
দায়ভাগ মতবাদ, বাংলাদেশ, ও পশ্চিম বঙ্গে প্রচলিত আছে। অন্যদিকে, মিতাক্ষরা মতবাদ ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে প্রচলিত আছে।
প্রথা (Customs)
পৃথিবীর প্রতিটি আইনে প্রথার গুরুত্ব অপরিসীম। যেমন মুসলিম আইনেও প্রথা বা উ’রফ স্থান পেয়েছে। তদ্রুপভাবে, হিন্দু ধর্মেও প্রথাকে আইনের উৎস হিসেবে গণ্য করা হয়। প্রথা মূলতঃ এমন কোন নিয়ম বা নীতি যা কোন বিশেষ পরিবারে, বা বিশেষ কোন জনগোষ্ঠীতে, অথবা বিশেষ কোন অঞ্চলে দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত আছে।