সেন বংশের শেষ রাজা ছিলেন- কেশব সেন।
দক্ষিণ ভারতের কর্ণাটক অঞলে সেন শাসকদের আদি বাসস্থান ছিল। উমাপতি ধরের “দেওপাড়া লিপি” থেকে জানা যায় যে, সামন্ত সেন দক্ষিণ ভারত থেকে গঙ্গাতীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করতে আসেন। তিনি সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা বলে অনুমান করা হয়। তবে এই বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা হলেন হেমন্ত সেনের পুত্র বিজয় সেন।
বিজয় সেন (1095 খ্রিস্টাব্দ – 1158 খ্রিস্টাব্দ )
তিনি ছিলেন সেন বংশের প্রকৃত প্রতিষ্ঠাতা। তিনি কলিঙ্গরাজ চোড়গঙ্গের সঙ্গে মিত্রতা স্থাপন করেন (তথ্যসূত্র : আনন্দ ভট্টের “বল্লালচরিত”)। তিনি সমগ্র রাঢ় অঞলে স্বাধীন সেন বংশের প্রতিষ্ঠা করেন ও “মহারাজাধিরাজ” উপাধি গ্রহণ করেন।
তিনি মদন পালকে (পাল বংশের শেষ রাজা) পরাজিত করে গৌড় বা উত্তরবঙ্গে সেন শাসন প্রতিষ্ঠা করেন ( দেওপাড়া লিপি )। পশ্চিমবঙ্গে বিজয়পুরে তিনি একটি নতুন রাজধানী স্থাপন করেন। তার অপর একটি রাজধানী ছিল পূর্ববঙ্গের বিক্রমপুরে। তাঁর সভাকবি ছিলেন উমাপতি ধর ও শ্রীহর্ষ।
পরমেশ্বর পরমভট্টারক, মহারাজাধিরাজ প্রভৃতি উপাধি গ্রহণ করেন।
শ্রীহর্ষভট্ট রচিত ‘ বিজয় প্রশস্তি ’ ও ‘ গৌড়ধীশ কুল প্রশস্তি ’ বিক্রমপুরের তাপট , উমাপতি ধরের “দেওপাড়া লিপি” প্রভৃতি থেকে তার রাজত্বকাল সম্পর্কে জানা যায়।
আরও পড়ুন-
পাল বংশ ও বাংলায় পাল বংশের ইতিহাস | পাল সাম্রাজ্য
বল্লাল সেন (1158 – 1179 খ্রিস্টাব্দ)
পিতা বিজয় সেনের মৃত্যুর পর বল্লাল সেন সিংহাসনারােহণ করেন। তিনি গৌড়েন্দ্র-কুঞ্জরালাল-স্তম্ভবাহুর্মহীপতি, অরিরাজ-নিঃশক-শংকর প্রভৃতি উপাধি গ্রহণ করেন। এই সময় বাংলাদেশ বঙ্গ, বরেন্দ্র, রাঢ়, বাগদী ও মিথিলা — এই 5 টি অংশে বিভক্ত ছিল।
অনিরুদ্ধ ছিলেন বল্লাল সেনের গুরু। তাঁর রচিত উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ ছিল “দানসাগর ও অদ্ভুতসাগর” (যদিও অদ্ভুতসাগরের শেষাংশ পুত্র লক্ষ্মণ সেন রচনা করেন)।
তিনি বাংলার প্রথম সমাজসংস্কারক রাজা হিসেবে পরিচিত ছিল। বল্লাল সেন ছিলেন কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তক । ব্রাহ্মণ, বৈদ্য ও কায়স্থ —এই তিন শ্রেণির মধ্যে তিনি কৌলিন্য প্রথার প্রবর্তন করেন। তিনি শৈব ধর্মে বিশ্বাসী ছিলেন এবং বৈষ্ণব ধর্মেরও অনুরাগী ছিলেন।
লক্ষ্মণ সেন (1179 খ্রিস্টাব্দ – 1205 খ্রিস্টাব্দ)
পিতা বল্লাল সেনের মৃত্যুর পর 60 বছর বয়সে তিনি সিংহাসনারােহণ করেন (তথ্যসূত্র : মিনহাজউদ্দিন)। তার উপাধি ছিল গৌড়েশ্বর, অরিরাজ মর্দনশংকর, পরমবৈষ্ণব।
গহড়বালরাজ জয়চন্দ্রকে তিনি পরাজিত করেছিলেন। 1199 খ্রিস্টাব্দে বকতিয়ার খলজি ওদন্তপুরী বিহার ধ্বংস করেন।
1204 খ্রিস্টাব্দে (মতান্তরে 1203 খ্রি) বখতিয়ার খলজি নদিয়া জয় করলে লক্ষ্মণ সেন পালিয়ে যান। তার মৃত্যুর পর লক্ষণ সেন পূর্ববঙ্গে রাজত্ব করেন।
বল্লাল সেনের অসমাপ্ত ‘অদ্ভুতসাগর’ গ্রন্থটি তিনি সমাপ্ত করেন। তাঁর সময়ে সাহিত্যক্ষেত্রে প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। তাঁর রাজসভায় ‘পঞরত্ন’ ছিলেন-
উমাপতি ধর
ধােয়ী
জয়দেব
শরণ
গােবর্ধন।
হলায়ুধ ছিলেন তাঁর প্রধানমন্ত্রী। তিনি (লক্ষণ সেন) “লক্ষণসম্বৎ” প্রবর্তন করেন।
লক্ষণ সেনের পরবর্তীতে বিশ্বরূপ সেন রাজত্ব করেছিলেন, যিনি লক্ষণাবতীর সুলতান গিয়াসউদ্দিন আয়াজকে পরাজিত করেন। তার পরবর্তীতে কেশব সেন – এর সময়ে সেন রাজবংশ পূর্ববঙ্গেই সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। এর পরবর্তী শাসকগণের কথা জানা যায়নি।
সেন বংশ সম্পর্কিত বিভিন্ন প্রশ্ন ও উত্তর।
সেন বংশের প্রথম রাজা কে ছিলেন?- সামন্ত সেন।
সেন বংশের শেষ রাজা কে ছিলেন?- কেশব সেন।
সেন বংশের প্রতিষ্ঠাতা কে?- সামন্ত সেন।
সেন বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা কে ছিলেন?- বিজয় সেন।
কোন সেন রাজা “পরমেশ্বর পরমভট্টারক” উপাধি ধারণ করেন?- বিজয় সেন।
“দানসাগর ও অদ্ভুতসাগর” কোন সেন বংশের রাজা রচনা করেন?- বল্লাল সেন।
বখতিয়ার খলজি কোন সেন বংশের রাজার আমলে নদিয়া আক্রমণ করেন?- লক্ষণ সেন।
কোন সেন বংশীয় রাজা “কৌলিন্য প্রথার” প্রবর্তন করেন?- বল্লাল সেন।