মশাবাহিত কিছু রোগ হলো-ডেঙ্গিজ্বর, ম্যালেরিয়া, ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ রোগ, চিকুনগুনিয়া, জিকা ভাইরাস জ্বর, ইয়োলো ফিভার বা পীতজ্বর, জাপানিজ এনকেফালাইটিজ, ওয়েস্ট-নীল ফেভার ইত্যাদি।
মশার একটিমাত্র কামড় একজন মানুষের জন্য মরণঘাতি হয়ে উঠতে পারে। রোগসৃষ্টিকারী বিভিন্ন ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া ও পরজীবী বহন করায় মশার কামড়ে সারা বিশ্বে প্রতি বছর প্রায় ১০ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটে।
ডেঙ্গিজ্বর
বিশ্বজুডে মশাবাহিত সংক্রমণের প্রধানতম কারণ হলো ডেঙ্গি জ্বর। ডেঙ্গি ভাইরাস দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। এডিস ইজিপ্টাই এবং এডিস অ্যালবোপিকটাস মশার মাধ্যমে ডেঙ্গির ভাইরাস মানুষের দেহে প্রবেশ করে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, দক্ষিণ আমেরিকাসহ পৃথিবীর প্রায় ১৪১টি দেশে এ ভাইরাসের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। প্রতি বছর প্রায় ৪০ হাজার মানুষ ডেঙ্গি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতেও ডেঙ্গি রোগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ২০০০ সালে ঢাকায় প্রথম ডেঙ্গি রোগী শনাক্ত হয়। এই রোগের প্রবণতা এখনো ঢাকা শহরেই বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। ২০১৯ সালে সারা দেশে ভয়াবহ ডেঙ্গির প্রাদুর্ভাবে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন আক্রান্ত এবং ১৭৯ জন মানুষ মৃত্যুবরণ করে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের রেকর্ডপরিমাণ মৃত্যু ও সংক্রমণের মাঝে এখন মারাত্মক রূপ নিতে শুরু করেছে ডেঙ্গি জ্বর। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শুরুর পর থেকে ডেঙ্গির সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি দেখা গেছে ২০২১ সালের জুলাই মাসে। সেইসঙ্গে হাসপাতালগুলোতেও শিশুসহ ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত ডেঙ্গি জ্বরের মৌসুম। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালে ১ হাজার ৪০৫ জন ডেঙ্গি জ্বরে আক্রান্ত হয়েছিল কিন্তু চলতি বছরের শুধু জুলাই মাসেই রোগীর সংখ্যা ২ হাজার ২৮৬ জন। করোনার সময় ডেঙ্গি প্রতিরোধে অত্যন্ত সচেতন থাকতে হবে কেননা দুটি রোগের লক্ষণে কিছু মিল রয়েছে। ডেঙ্গি ভাইরাসের ৪টি সেরোটাইপ আছে। এর যে কোনোটি দিয়েই ডেঙ্গি জ্বর হতে পারে। আগে কোনো একটি সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হওয়ার পরে আবার অন্য একটি সেরোটাইপ দিয়ে আক্রান্ত হলে সাধারণত তা মারাত্মক ধরনের হয় এবং এতে মৃত্যুর আশঙ্কা অনেকগুণ বেড়ে যায়।
লক্ষণ
ডেঙ্গি জ্বর হলে লক্ষণগুলো দুই থেকে সাত দিনের মতো স্থায়ী হয়।
* উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর (১০৪-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট)
* অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশির ব্যথা
* মাথাব্যথা
* চোখের পিছনে ব্যথা
* বমি হওয়া বা বমি বমি ভাব
* র্যাশ বা শরীরে লাল চাকা চাকা হওয়া
ডেঙ্গি ও করোনার পার্থক্য
ডেঙ্গি ও করোনা উভয় অসুখেই জ্বর, মাথাব্যথা, শরীর ব্যথা এবং খাবারে অরুচি হয়ে থাকে। তবে ডেঙ্গি হলে করোনা রোগীর মতো শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও ঘ্রাণ না পাওয়ার মতো লক্ষণগুলো থাকে না। বরং জ্বর শুরুর চার-পাঁচ দিন পরে শরীরে লাল অ্যালার্জির মতো র্যাশ হতে পারে।
শনাক্তকরণ
ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছে কিনা তা জানার জন্য রক্তের এন্টিজেন টেস্ট (NH1 Antigen) করা হয়। রক্তে ডেঙ্গি এন্টিবডি শনাক্ত করেও বোঝা যায় যে আগে ডেঙ্গি হয়েছিল কিনা। এ ছাড়াও পিসিআর পরীক্ষা করেও ডেঙ্গি নিশ্চিত রূপে শনাক্ত করা সম্ভব।
চিকিৎসা
ডেঙ্গি জ্বরের কোনো সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা এখন পর্যন্ত নেই। মৃদু ডেঙ্গি জ্বরে সাধারণ লক্ষণগুলোর জন্য রেজিস্ট্রার্ড ডাক্তারের পরামর্শমতো ওষুধ খেতে হবে। এ ছাড়াও প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাবার, ভিটামিন সি-সমৃদ্ধ ফল, উচ্চ প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন ডিম, দুধ, কলিজা, মাছ ইত্যাদি খেতে হবে। সাধারণ ডেঙ্গি অনেকটা ইনফ্লুয়েঞ্জার মতো হলেও ডেঙ্গি হেমোরেজিক ফিভার বা গুরুতর ডেঙ্গি জ্বরে রক্তের অনুচক্রিকা কমে গিয়ে রক্তপাত হয়। ডেঙ্গি আক্রান্ত হওয়ার পরে চামড়ার নিচে লাল বিন্দুর মতো অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দাগ, লাল রঙের প্রস্রাব হওয়া, পায়খানার সঙ্গে রক্ত যাওয়া, নাক বা কান থেকে রক্ত বের হওয়া ইত্যাদির যে কোনো একটি হলেই বুঝে নিতে হবে ডেঙ্গি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে এবং দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করতে হবে কারণ মারাত্মক ডেঙ্গি জ্বরেই বেশিরভাগ মৃত্যু হয়ে থাকে। তবে উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস, লিভার কিংবা কিডনি সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তি এবং বয়স্ক ও গর্ভবতী নারীদের সাধারণ ডেঙ্গি জ্বর হলেও হাসপাতালে ভর্তি করা ভালো। ডেঙ্গি রোগীর রক্তে অনুচক্রিকা কমে গেলে রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে অনুচক্রিকা দিতে হতে পারে।
ডেঙ্গি সংক্রমণ রোধে করণীয়
ডেঙ্গির বাহক এডিস মশা মানুষের আবাসস্থলে ৩ দিন জমে থাকা স্বচ্ছ পানিতে ডিম পাড়ে। তাই বালতি, ফুলদানি, গাছের টব, অব্যবহৃত খালি কৌটা, যে কোনো পাত্র বা জায়গায় জমে থাকা পানি ৩-৫ দিন পরপর ফেলে দিতে হবে যেন মশার লার্ভা মারা যায়। পাত্রের গায়ে লেগে থাকা মশার ডিম অপসারণের জন্য পাত্রটি ভালোভাবে ঘষে পরিষ্কার করতে হবে। এ ছাড়াও ঘরের অ্যাকুয়ারিয়াম, ফ্রিজ বা এয়ার কন্ডিশনারের নিচে এবং নির্মাণাধীন বাড়ির মুখ খোলা পানির ট্যাংক-এসব জায়গায় পানি জমতে না দেওয়ার ব্যাপারে সতর্ক হওয়া জরুরি। এডিস মশা মূলত দিনের বেলা (সূর্যোদয়ের পরপর ও সূর্যাস্তের পূর্বে) কামড়ায়। রাতে উজ্জ্বল বৈদ্যুতিক আলোতেও এ জাতীয় মশা কামড়াতে পারে। মশার কামড় থেকে বাঁচতে দিনেরবেলা ঘুমানোর সময়ও মশারি ব্যবহার করা উচিত। সেইসঙ্গে ঘরের দরজা ও জানালায় নেট লাগাতে হবে। প্রতিরোধক হিসাবে মশারোধক Odomosque cream-সহ স্প্রে, লোশন, ক্রিম, কয়েল ম্যাট ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। ছোট-বড় সবাইকে যথাসম্ভব শরীর ঢাকা পোশাক পরতে হবে।
ম্যালেরিয়া
মশাবাহিত রোগগুলোর মধ্যে ম্যালেরিয়া সবচেয়ে পুরোনো রোগ। খ্রিষ্টের জন্মেরও আগে গ্রিস ও চীনে এ রোগের অস্তিত্ব ছিল। প্রতি বছর বিশ্বে প্রায় ২০০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ ম্যালেরিয়া আক্রান্ত হয়ে থাকে। ম্যালেরিয়া রোগটি স্ত্রী এনোফিলিস মশার কামড়ের মাধ্যমে হয়। এ রোগটির জন্য দায়ী প্লাজমোডিয়াম গোত্রভুক্ত কিছু পরজীবী। সারা বিশ্বে ৪টি প্রজাতির মাধ্যমেই মূলত এটি ছড়িয়ে থাকে। এর মধ্যে প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপারাম প্রজাতির কারণে সবচেয়ে মারাত্মক ধরনের ম্যালেরিয়া হয়ে থাকে। বাংলাদেশের সিলেট, পার্বত্য চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর, কুড়িগ্রাম, কক্সবাজার এবং ঢাকা বিভাগের বিভিন্ন গ্রাম অঞ্চলে ম্যালেরিয়ার প্রাদুর্ভাব দেখা যায়। ঢাকা শহর সম্পূর্ণভাবে ম্যালেরিয়া মুক্ত। কারণ মূলত আর্দ্র গরম ও ক্রান্তীয় আবহাওয়াযুক্ত বনাঞ্চল বা তার আশপাশেই এর বিস্তার ঘটে।
লক্ষণ
সাধারণত এনোফিলিস মশা কামড়ানোর ১০-১৫ দিন পরে ম্যালেরিয়ার লক্ষণগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। প্রথম ১-২ দিন উচ্চ তাপমাত্রার জ্বর (১০২ ডিগ্রি ফারেনহাইট বা তার বেশি), সঙ্গে প্রচণ্ড কাঁপুনি ও মাথাব্যথা থাকে। প্রচুর ঘাম দিয়ে জ্বর ছাড়ে এবং পরে আবার একইভাবে ফিরে আসে। দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করা হলে রোগ ৫-১০ দিনের মধ্যেই জটিল আকার ধারণ করে। প্লাজমোডিয়াম ফ্যালসিপারাম প্রজাতির ক্ষেত্রে ২-৩ দিনের মধ্যেই রোগ জটিল হয়ে যায়। এ সময় লিভার, কিডনি প্রভৃতি প্রত্যঙ্গ কার্যকারিতা হারায়। ফলে রোগীর খিঁচুনিসহ বিভিন্ন স্নায়বিক দুর্বলতা দেখা দেয় এবং পরিশেষে মৃত্যুবরণ করে। গর্ভাবস্থায় ম্যালেরিয়া হলে গর্ভপাত কিংবা গর্ভের শিশুর ওজন কম, এমনকি মৃত্যু হতে পারে।
শনাক্তকরণ
শারীরিক লক্ষণ ও ১০-২০ দিনের মধ্যে ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চলে ভ্রমণ করার ইতিহাস থাকলে প্রাথমিকভাবে ধরে নিতে হবে যে এটা ম্যালেরিয়া। র্যাপিড ডায়াগনস্টিক টেস্ট (ICT Test)-এর মাধ্যমে সহজেই রক্তে ম্যালেরিয়ার এন্টিজেন শনাক্ত করা যায়। এ ছাড়াও অনুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে রক্তে ম্যালেরিয়া পরজীবীর উপস্থিতি ও প্রজাতি নিশ্চিত করা হয়।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চলে মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষার মাধ্যমে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এর প্রতিরোধ সম্ভব। এজন্য রাতে মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে। এ ছাড়া মশারোধী স্প্রে ও কয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমানে ম্যালেরিয়া চিকিৎসায় অনেক আধুনিক ও কার্যকরী ওষুধ রয়েছে। যেমন-মেফ্লোকুইন, প্রোগুয়ানিল, আর্টিসনেট ইত্যাদি। তবে সব ওষুধ শুধু রেজিস্ট্রার্ড চিকিৎসকের পরামর্শ মতো খেতে হবে। ম্যালেরিয়াপ্রবণ অঞ্চলে যাওয়ার ২/১ সপ্তাহ আগে ওষুধ সেবন শুরু করে ফিরে আসার পরেও কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত চালিয়ে যেতে হবে।
ফাইলেরিয়াসিস বা গোদ রোগ
মশাবাহিত আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ রোগ হলো ফাইলেরিয়াসিস বা গোদরোগ। বাংলাদেশে Wuchereria bancrofti, Brugia malayi, and Brugia timori-এই তিন ধরনের পরজীবী কৃমির মাধ্যমে এটি হয়ে থাকে। আর কিউলেক্স মশা হলো এই পরজীবীর বাহক। এই পরজীবী কৃমিগুলো মানুষের লসিকাতন্ত্রে বংশবৃদ্ধি করে। এশিয়া, আফ্রিকা, দক্ষিণ আমেরিকা, পশ্চিম প্রশান্ত মহাসাগরীয় ও ক্যারিবীয় অঞ্চলের ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় জলবায়ুতে গোদরোগের প্রবণতা বেশি। গোদরোগ নির্মূলে বাংলাদেশ অনেক সাফল্য অর্জন করলেও উত্তরাঞ্চলের ১৩টি জেলায় এখনো প্রায় ৪৪ হাজার মানুষ গোদরোগে আক্রান্ত।
লক্ষণ
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাহ্যিক কোনো লক্ষণ প্রকাশ না পেলেও কিডনি, লসিকাতন্ত্র ও রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। শরীরে রোগের বিস্তার লাভের কয়েক বছর পর মূল সমস্যাগুলো প্রকাশ পেতে থাকে। যেমন-পা ফুলে যাওয়া (এলিফ্যান্টিয়াসিস বা হাতির মতো পা), ছেলেদের অণ্ডকোষ, মেয়েদের স্তন ও যৌনাঙ্গের ভালভা ইত্যাদি ফুলে যায়। এ রকম অঙ্গবিকৃতির চিকিৎসা ব্যয়বহুল, উপরন্তু কর্ম ও সমাজ জীবনেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।
শনাক্তকরণ
সাধারণত অণুবীক্ষণ যন্ত্রে ফাইলেরিয়া পরজীবী সরাসরি পর্যবেক্ষণ করে তা শনাক্ত করতে হয়। এই পরজীবী রাতের বেলাতেই রোগীর রক্তে বেশি পাওয়া যায়, এজন্য রোগীর দেহ থেকে রাতের বেলা নমুনা সংগ্রহ করা আবশ্যক। এ ছাড়াও রক্তে এন্টিবডি শনাক্তের মাধ্যমেও ফাইলেরিয়াসিস নির্ণয় করা সম্ভব।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
গোদরোগের চিকিৎসায় ডাইইথাইলকার্বামাজিন, আলবেনডাজোল, আইভারমেকটিন ইত্যাদি কৃমিরোধী ওষুধ রয়েছে। এগুলোর মাত্রা ও সময়সীমা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেনে চলতে হবে। শরীরের কোনো স্থান অত্যন্ত বেশি ফুলে গেলে তার জন্য বিভিন্ন ফিজিওথেরাপি বা সার্জারির দরকার হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিভিন্ন এনজিও ও প্রোগ্রামের মাধ্যমে সারা বিশ্বেই প্রতি বছর ফাইলেরিয়া কৃমিরোধী ওষুধ প্রদান করে এবং সরাসরি সবাইকে ওষুধ সেবন অংশগ্রহণ করায়। গোদরোগপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে প্রতি বছর এসব ওষুধ নির্দিষ্ট মাত্রায় সেবনের মাধ্যমে এ রোগের প্রতিকার সম্ভব। এ ছাড়া মশার কামড় থেকে রক্ষার জন্যও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
চিকুনগুনিয়া
চিকুনগুনিয়া একটি ভাইরাস এবং এডিস ইজিপ্টাই মশার মাধ্যমে এই রোগটি ছড়িয়ে থাকে। ১৯৫২ সালে তানজানিয়ায় এ ভাইরাসটি প্রথম পাওয়া যায়। এ রোগটি মূলত আফ্রিকা, ক্যারিবিয়ান অঞ্চল, দক্ষিণ আমেরিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশে বেশি হয়। ডেঙ্গি জ্বরের সঙ্গে বেশ কিছু সাদৃশ্যপূর্ণ লক্ষণ থাকায় এটি শুরুর দিকে শনাক্ত করা যায় না। বাংলাদেশে ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বরের দিকে চিকুনগুনিয়া ছড়িয়ে পড়েছিল।
লক্ষণ
এডিস মশা কামড়ানোর ৭ দিনের মধ্যেই লক্ষণগুলো প্রকাশ পায়।
* জ্বর
* মাথাব্যথা
* অস্থিসন্ধি ও মাংসপেশির প্রচণ্ড ব্যথা
* শরীরে চাকা চাকা হওয়া বা র্যাশ
* অবসাদ অনুভব করা ও দুর্বলতা
শনাক্তকরণ
ভাইরাল এন্টিবডি টেস্ট এবং পিসিআর পরীক্ষাসহ বিভিন্ন উপায়ে চিকুনগুনিয়া শনাক্ত করা যায়।
চিকিৎসা ও প্রতিকার
চিকুনগুনিয়ার বিশেষ কোনো চিকিৎসা নেই। সাধারণত রোগের লক্ষণ উপশমের জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। আক্রান্ত হলে পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে এবং প্রচুর পরিমাণে পানি ও তরল খাবার খেতে হবে। অ্যান্টিবায়োটিক সেবনে এ ধরনের ভাইরাসজনিত অসুখে কোনো উপকার নেই। বরং অ্যান্টিবায়োটিকের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা তৈরি করতে পারে। মশার কামড় থেকে নিজেকে রক্ষার জন্য মশারি টাঙিয়ে ঘুমাতে হবে ও মশারোধী কয়েল বা স্প্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। আর এডিস মশার আবাসস্থল ও লার্ভা ডেঙ্গি সংক্রমণ রোধের পদ্ধতিতেই নষ্ট করে ফেলতে হবে ও পরিষ্কার রাখতে হবে।
বিশ্ব মশা দিবস
১৮৯৭ সালের ২০ আগস্ট রোনাল্ড রস অ্যানোফিলিস মশাবাহিত ম্যালেরিয়া রোগের কারণ আবিষ্কার করেছিলেন। চিকিৎসক রোনাল্ড রসের আবিষ্কারকে সম্মান জানানোর জন্য ২০ আগস্ট বিশ্ব মশা দিবস পালন করা হয়। মশাবাহিত রোগ থেকে সাবধান হওয়ার জন্য, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য এবং মশাবাহিত রোগের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে জনসাধারণকে সচেতন করার জন্য এ দিবসটি পালন করা হয়।