বর্তমানে মুম্বই ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী
মুম্বই ভারতের সর্বাধিক জনবহুল শহর এবং বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল শহরগুলিরও অন্যতম। এই শহরের জনসংখ্যা প্রায় এক কোটি চল্লিশ লক্ষ। নবি মুম্বই ও থানে সহ মুম্বাই মহানগরীয় অঞ্চল বিশ্বের সর্বাধিক জনবহুল মহানগরীয় অঞ্চলগুলির অন্যতমও বটে। ভারতের পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত মুম্বই একটি স্বাভাবিক সমুদ্রবন্দর। ২০০৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, এই শহর আলফা বিশ্ব নগরী হিসেবে ঘোষিত।
যে সাতটি দ্বীপকে কেন্দ্র করে আধুনিক মুম্বই মহানগরী গড়ে উঠেছে, সুদূর অতীতে সেই সাতটি দ্বীপ ছিল মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের বসতি। ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে এই দ্বীপগুলি নানান দেশীয় রাজ্য ও সাম্রাজ্যের অধীনস্থ ছিল। অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে মুম্বাই একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য নগরী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ঊনবিংশ শতাব্দীতে এই শহরের গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও শিক্ষাসংক্রান্ত প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। বিংশ শতাব্দীর প্রথম পাদে বোম্বাই ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের এক উল্লেখযোগ্য ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল। ১৯৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পর বোম্বাই শহর তদনীন্তন বোম্বাই রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়। ১৯৬০ সালে সংযুক্ত মহারাষ্ট্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে নতুন রাজ্য মহারাষ্ট্র গঠিত হলে বোম্বাই উক্ত রাজ্যের রাজধানীতে পরিণত হয়। ১৯৯৫ সালে শহরের নাম পরিবর্তিত করে মুম্বই রাখা হয়।
মুম্বাই ভারতের বাণিজ্য ও বিনোদনের অন্যতম কেন্দ্র। দেশের ৫ শতাংশ জিডিপি এই শহর থেকেই উৎপাদিত হয়। এছাড়া ভারতীয় অর্থনীতির ২৫ শতাংশ শিল্প উৎপাদন, ৪০ শতাংশ সমুদ্রবাণিজ্য ও ৭০ শতাংশ পুঁজি লেনদেন মুম্বাইতেই সাধিত হয়। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক, বোম্বাই স্টক এক্সচেঞ্জ, ভারতের জাতীয় স্টক এক্সচেঞ্জ ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক সংস্থা এবং বিভিন্ন ভারতীয় কোম্পানি ও বহুজাতিক সংস্থার প্রধান কার্যালয় এই শহরেই অবস্থিত। বলিউড নামে পরিচিত ভারতের হিন্দি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন শিল্পকেন্দ্রটিও এই শহরে অবস্থিত। মুম্বইয়ের ব্যবসাগত সুযোগসুবিধা এবং এখানকার জীবনযাত্রার উচ্চ মান সমগ্র দেশের মানুষকে আকৃষ্ট করে। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মানুষ এসে এই শহরে বসবাস শুরু করেন। ফলে মুম্বই বর্তমানে ভারতের নানা সম্প্রদায় ও ভারতীয় সংস্কৃতির মহামিলনভূমিতে পরিণত হয়েছে।
মুম্বই শব্দটির প্রচলন হয় স্থানীয় অশিক্ষিত মারাঠিদের উচ্চারণবিকৃতি থেকে। তারা মারাঠি ভাষায় বোম্বাই শব্দটি উচ্চারণ করতে পারতেন না।[৭] বোম্বাই কথাটির উদ্ভব হয় খ্রিষ্টীয় ষোড়শ শতাব্দীতে এই অঞ্চলে পর্তুগিজদের আগমনের পর। তারা এই অঞ্চলকে বিভিন্ন নামে অভিহিত করতেন। এই নামগুলির মধ্য থেকে বোম্বাইম (Bombaim) কথাটি লেখ্য আকারে প্রচলন লাভ করে। পর্তুগিজ ভাষায় শব্দটি আজও প্রচলিত। সপ্তদশ শতাব্দীতে ব্রিটিশরা এই অঞ্চলের অধিকার অর্জন করে। মনে করা হয়, শহরের বোম্বাই নামটি পর্তুগিজ বোম্বাইম শব্দটির ইংরেজিকৃত রূপ। এই শহর মারাঠি ও গুজরাতিভাষীদের নিকট মুম্বাই বা মম্বাই এবং হিন্দি, পারসি ও উর্দুভাষীদের নিকট বম্বই নামে পরিচিত। কখনও কখনও এই শহরকে আরও পুরনো ককমুচী বা গলজুঙ্কজা নামেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে শিবসেনা মারাঠি উচ্চারণ অনুসারে শহরের নাম পরিবর্তন করে রাখে মুম্বই। হিন্দু জাতীয়তাবাদী দল শিবসেনা এই নাম পরিবর্তন নিয়ে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করে মহারাষ্ট্রের বিধানসভা নির্বাচনে জয়লাভ করেছিল। এরপর মুম্বইয়ের দেখাদেখি দেশের অনেক শহরেরই ইংরেজি নাম পরিবর্তন করে স্থানীয় উচ্চারণ অনুযায়ী নামকরণ করা হয়। যদিও শহরে বসবাসকারী অনেকেই এখনও এই শহরকে বোম্বাই নামে অভিহিত করে থাকেন। তাছাড়া ভারতের অন্যান্য অনেক অঞ্চলেও বোম্বাই নামটির চল রয়েছে।