যিকির অর্থ: স্বরণ করা, মনে করা, উল্লেখ করা, বর্ণনা করা। শরীয়তের আলোকে জিকির বলা হয়, মুখে বা অন্তরে আল্লাহর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা এবং প্রশংসা করা।
জিকিরের ফজিলত বা উপকারিতা:
১- ইহকাল ও পরকালে অন্তরে প্রশান্তি ও স্থিরতা লাভ : আল্লাহ তাআলা বলেন:
যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের চিত্ত প্রশান্ত হয় ; জেনে রাখ, আল্লাহর স্মরণেই চিত্ত প্রশান্ত হয়। -সূরা রাদ ২৮
২- আল্লাহর জিকির সবচেয়ে বড় ও সর্বোত্তম ইবাদত : কেননা আল্লাহ তাআলাকে স্মরণ করা হচ্ছে ইবাদতের আসল লক্ষ্য। আল্লাহ তাআলা বলেন: আর আল্লাহর স্মরণই তো সর্বশ্রেষ্ঠ। তোমরা যা কর আল্লাহ তা জানেন। -সূরা আনকাবুত ৪৫
আল্লাহ তাআলা আরো বলেন: এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণকারী পুরুষ ও অধিক স্মরণকারী নারী – এদের জন্য আল্লাহ রেখেছেন ক্ষমা ও মহা প্রতিদান। -সূরা আহযাব ৩৫
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন:
আমি কি তোমাদেরকে এমন এক আমল সম্পর্কে অবহিত করব না, যা তোমাদের অধিপতির নিকট সবচেয়ে উত্তম ও পবিত্র, এবং তোমাদের মর্যাদা অধিক বৃদ্ধিকারী, এবং তোমাদের জন্য স্বর্ণ-রূপা দান করা ও দুশমনের মুখোমুখি হয়ে তোমরা তাদের গর্দানে বা তারা তোমাদের গর্দানে আঘাত করার চেয়ে উত্তম ? তারা বলল :হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ ! তিনি বললেন :-জিকরুল্লাহ (আল্লাহর জিকির বা স্মরণ)। -জামে তিরমিজি ৩২৯৯
৩- আল্লাহর জিকিরকারী, তাঁর নিদর্শনাবলী থেকে শিক্ষা লাভকারী:
তারাই বিবেক-বুদ্ধিসম্পন্ন। আল্লাহ তাআলা বলেন: আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর সৃষ্টিতে, দিবস ও রাত্রির পরিবর্তনে নিদর্শনাবলী রয়েছে বোধশক্তি সম্পন্ন লোকের জন্য, যারা দাঁড়িয়ে, বসে ও শুয়ে আল্লাহর স্মরণ করে …। -সূরা আলে -ইমরান ১৯০-১৯১
৪- আল্লাহর জিকির সুরক্ষিত দুর্গ: বান্দা এ-দ্বারা শয়তান থেকে রক্ষা পায়।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: ইয়াহইয়া বিন জাকারিয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইসরাঈল-তনয়দেরকে বলেছেন:
এবং আমি তোমাদেরকে আল্লাহর জিকিরের আদেশ দিচ্ছি, কারণ এর তুলনা এমন এক ব্যক্তির ন্যায় যার পিছনে দুশমন দৌড়ে তাড়া করে ফিরছে, সে সুরক্ষিত দুর্গে প্রবেশ করে নিজকে রক্ষা করেছে। অনুরূপ, বান্দা আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে শয়তান থেকে সুরক্ষা পায়। -মুসনাদে আহমদ ২৭৯০
৫- জিকির মানুষের ইহকাল ও পরকালের মর্যাদা বৃদ্ধি করে:
আবু হুরাইরা রা: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন:
মক্কার একটি রাস্তায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাঁটছিলেন। জুমদান নামক পাহাড় অতিক্রম করার সময় বললেন: তোমরা চল,-এটা জুমদান-মুফাররাদুন অর্থাৎ একক গুণে গুণান্বিতরা এগিয়ে গেছে তিনি জিজ্ঞেস করলেন :ইয়া রাসূলুল্লাহ মুফাররদূন অর্থাৎ একক গুণে গুণান্বিত কারা ? জওয়াবে তিনি বললেন :-আল্লাহকে বেশি করে স্মরণকারী নারী-পুরুষ। -সহীহ মুসলিম ৪৮৩৪
৬- জিকিরের কারণে ইহকাল ও পরকালে জীবিকা বৃদ্ধি পায়: আল্লাহ তাআলা নূহ আ. এর কথা বিবৃত করে বলেন:
বলেছি, তোমাদের প্রতিপালকের ক্ষমা প্রার্থনা কর, তিনি তো মহা ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের জন্য প্রচুর বৃষ্টিপাত করবেন। তিনি তোমাদেরকে সমৃদ্ধ করবেন ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে এবং তোমাদের জন্য স্থাপন করবেন উদ্যান ও প্রবাহিত করবেন নদী-নালা। -সূরা নূহ ১০-১২