গিরিশচন্দ্র ঘোষ, হিন্দু প্যাট্রিয়ট প্রথম সম্পাদক।
১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দে মধুসূদন রায় নামের এক ব্যাঙ্কব্যবসায়ী 'বেঙ্গল রেকর্ডার' -এর প্রতিষ্ঠাতা শ্রীনাথ ঘোষ ও তাঁর ভাই গিরিশচন্দ্র ঘোষকে একটি ইংরাজী সংবাদ পত্র প্রকাশের জন্য প্রস্তাব দেন। স্থির হয় 'বেঙ্গল রেকর্ডার' বন্ধ করা হবে এবং নতুন সংবাদপত্রটির নাম হবে "হিন্দু প্যাট্রিয়ট"। নামটি সম্ভবত গিরিশচন্দ্র ঘোষের দেওয়া। কিন্তু "রেইস ও রায়য়েট" নামক পত্রিকা সূত্রে জানা যায় যে, নামটি ঘোষেদের সর্বকনিষ্ঠ ভ্রাতা ক্ষেত্রচন্দ্র ঘোষই দিয়েছিলেন। তদানীন্তন প্রখ্যাত সাংবাদিক কৃষ্ণদাস পালের মতে যিনি পত্রিকার ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে এর সম্পাদক হয়েছিলেন, নামটি হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের দেওয়া। কিন্তু গিরিশচন্দ্র ঘোষের জীবনীকার ও পৌত্র মন্মথনাথ ঘোষ কৃষ্ণদাস পালের মত খন্ডন করেন, মধুসূদন রায়ের সিদ্ধান্ত অনুসারে "হিন্দু প্যাট্রিয়ট" নামটি গিরিশচন্দ্র ঘোষের নিজের দেওয়া এবং এও উল্লেখ করেন যে, হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় অনেক পরে এবং প্রথমদিকে এক অধীনস্থ কর্মী হিসাবে যোগ দেন। [২]
হিন্দু প্যাট্রিয়ট ১৮৫৩ খ্রিস্টাব্দের ৬ ই জানুয়ারি গিরিশচন্দ্র ঘোষের সম্পাদনায় মধুসূদন রায় প্রকাশ করেন এবং এটি প্রতি বৃহস্পতিবার তাঁর কলাকার স্ট্রিটস্থিত প্রেস হতে প্রকাশ হতে থাকে। [৩] ১৮৫৪ খ্রিস্টাব্দে কিছুদিন কাশীতলা হতে মুদ্রিত হয়। সেসময়ের 'বেঙ্গল রেকর্ডার' -এর সংবাদদাতা হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় হিন্দু প্যাট্রিয়টে যোগদেন এবং ক্রমে সম্পাদকীয় বোর্ডে উন্নীত হন। ১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দে তিনি হিন্দু প্যাট্রিয়টের মুখ্য সম্পাদক হন। এক বছর পর তিনি তাঁর দাদা হারাণচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের নামে স্বত্ব কেনেন ও সংবাদপত্রটির পূর্ণ মালিকানা গিরিশচন্দ্র ঘোষের থেকে তাঁর জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা হারানচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের নামে পরিবর্তিত হয়। কিন্তু গিরিশচন্দ্র ঘোষ ১৮৫৮ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত লিখতে থাকেন। তারপর হিন্দু প্যাট্রিয়ট ছেড়ে "দি বেঙ্গলি" নামে ইংরাজী সংবাদপত্র শুরু করেন।
১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের ১৬ই জুন হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের অকাল মৃত্যুতে হিন্দু প্যাট্রিয়ট পত্রিকা আর্থিক দুরবস্থায় পড়ে। কালীপ্রসন্ন সিংহের আর্থিক সহায়তায় রক্ষা পায়। [৫] গিরিশচন্দ্র ঘোষ তিন বৎসর আগে হিন্দু প্যাট্রিয়টের সাথে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করলেও, তিনি হরিশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের শোকাহত মা ও অসহায় বিধবা পত্নীর জন্য পুনরায় সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। পুনরায় ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দের নভেম্বর মাসে তিনি হিন্দু প্যাট্রিয়ট ত্যাগ করলে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর সংবাদপত্রের মালিকানা নেন এবং কৃষ্ণদাস পাল (১৮৩৮ - ১৮৮৪) সম্পাদক হন। [৬]
১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে কিশোরীচাঁদ মিত্র প্রতিষ্ঠিত "ইন্ডিয়ান ফিল্ড" নামের ইংরাজী সংবাদ সাপ্তাহিকটি ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে "হিন্দু প্যাট্রিয়ট" এর সাথে মিশে যায় [৭] ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে কৃষ্ণদাস পালের মৃত্যুর পর লখনউ-এর দক্ষিণারঞ্জন মুখোপাধ্যায় প্রতিষ্ঠিত লখনউ টাইমস্-এর সম্পাদক রায়বাহাদুর রাজকুমার সর্বাধিকারী (১৮৩৯-১৯১১) এর সম্পাদক হন। পত্রিকাটি ৭১ বৎসর চলেছিল। ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে এর প্রকাশনা বন্ধ হয়।
হিন্দু প্যাট্রিয়ট (ইংরেজি: Hindoo Patriot) পত্রিকা ছিল ঊনবিংশ শতকের শেষার্ধে অবিভক্ত বাংলায় কলকাতা হতে ইংরাজী ভাষায় প্রকাশিত সংবাদ সাপ্তাহিক। সমকালীন বাংলার সমাজিক, রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রকৃত চিত্র জাতীয়তাবাদী ব্যক্তিত্বের সম্পাদনায় নির্ভীক ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে জনসমক্ষে পরিবেশিত হত।