ওয়ালেস রেখা ইন্দোনেশিয়ার মাঝ বরাবর একটি অদৃশ্য সীমারেখা। এ সীমারেখাটি দুটি সম্পূর্ণ আলাদা প্রাণীভৌগোলিক অঞ্চলকে পৃথক করেছে। ১৮৬৯ সালে ব্রিটিশ প্রকৃতি বিজ্ঞানী আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস সর্বপ্রথম এ রেখার ধারণা দেন। আর রেখাটিকে ১৮৬৪ সালে ওয়ালেস রেখা হিসেবে সর্বপ্রথম উল্লেখ করেন টমাস হেনরি হাক্সলি। রেখাটির মাধ্যমে প্রাণীভূগোলের ভিত্তিতে এশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াকে তিনি এশিয়া ও ওয়ালেসিয়া নামে দু'টি পৃথক ভাগে বিভক্ত করেন। এ রেখার পশ্চিমাংশের প্রাণীগুলো এশীয় প্রাণীদের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কযুক্ত আর পূর্বাংশের প্রাণীগুলো এশীয় ও অস্ট্রেলীয় প্রাণীদের একটি মিশ্র রূপ। আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস ঊনবিংশ শতাব্দীতে তার পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ ভ্রমণকালে এই স্পষ্ট বিভাজনটি বুঝতে পারেন, সেকারণে তার নামেই রেখাটির নামকরণ করা হয়।
ওয়ালেস রেখাটি ভারত মহাসাগরের লম্বক প্রণালীর (বালি ও লম্বক দ্বীপের মধ্যবর্তী প্রণালী) মধ্যে দিয়ে উত্তরে মাকাসার প্রণালীর (বোর্নিও ও সেলিবিসের মাঝের প্রণালী) মধ্যে দিয়ে অগ্রসর হয়ে পূর্বে বাঁক নিয়ে ফিলিপাইন সাগরের মিন্দানাও দ্বীপের দক্ষিণ দিয়ে চলে গেছে। বালি আর লম্বক দ্বীপের মধ্যবর্তী দূরত্ব খুবই কম, প্রায় ২২ মাইল (৩৫ কিলোমিটার)। কয়েক প্রজাতির বাদুড়, ইঁদুরজাতীয় প্রাণী আর কাঁকড়াভোজী বানর ছাড়া এই দুই দ্বীপের স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে কোন মিল লক্ষ করা যায় না। পাখিরা এই রেখার উপর দিয়ে চলাফেরা করলেও তারা সাধারণত এক দ্বীপ থেকে অন্য দ্বীপে যায় না; একটি নির্দিষ্ট সীমারেখা মেনে চলে এবং এ সীমারেখা প্রায় স্থায়ী। দ্বীপ দুইটির মধ্যে দূরত্ব কম হলেও তাদের জীবসম্ভার সম্পূর্ণ ভিন্ন। ওয়ালেস রেখার দুই পাশে প্রাণীদের মধ্যে বিভিন্নতা দেখা গেলেও উদ্ভিদসমূহের মধ্যে কোন বিভিন্নতা লক্ষ করা যায় না।