পৃথিবীতে এমন প্রাণীও আছে, যা স্তন্যপায়ী হয়েও বাচ্চা প্রসব করে না (স্তন্যপায়ী প্রাণীরা সাধারণত বাচ্চা প্রসব করে); বরং ডিম পাড়ে এবং ওই ডিম ফুটে বাচ্চা হয়। এ রকমই একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী হলো প্লাটিপাস। এর বাংলা নাম হংসচঞ্চু।
বৈজ্ঞানিক নাম : Ornithorhynchus anatinus। এটি একটি নিশাচর প্রাণী। তাসমানিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব অস্ট্রেলিয়ার নদী ও নদীতীরবর্তী অঞ্চলে বসবাস করে। এদের লোমশ দেহ এবং প্রশস্ত লেজ আছে। দেহের রং বাদামি। পায়ের আঙুলের মাঝখানে চামড়া বিদ্যমান, যা এদের সাঁতার কাটতে সাহায্য করে। সাঁতারের সময় চোখ বন্ধ রাখে প্লাটিপাস। তখন শ্রবণ, স্পর্শ ও বিদ্যুতায়িত তরঙ্গ ব্যবহার করে চলাচল করে। এদের ঠোঁট দেখতে হাঁসের মতো। নাক বেশ বড়। প্রধান খাদ্য—কেঁচো, পোকা-মাকড়ের ডিম, স্বাদু পানির চিংড়ি ইত্যাদি। প্লাটিপাস বড় কিংবা ছোট উভয় ধরনের হতে পারে। বড় আকৃতির প্লাটিপাস তাসমানিয়া এবং ছোটটি কুইন্সল্যান্ডে দেখা যায়। প্রাপ্তবয়স্ক একটি প্লাটিপাস ১ থেকে ৩ কেজি ওজনের হতে পারে। লম্বায় দেহ হয় ১২ থেকে ১৬ ইঞ্চি আর লেজ ৪ থেকে ৬ ইঞ্চি। প্রায় সাত বছর বেঁচে থাকে। পুরুষ প্লাটিপাস স্ত্রী প্লাটিপাসের তুলনায় বড়। পুরুষ প্লাটিপাসের পায়ে ধারাল নখে এক ধরনের বিষাক্ত পদার্থ থাকে। এ বিষে আক্রান্ত হয়ে কুকুরের মতো ছোট প্রাণী মৃত্যুবরণ করতে পারে। প্লাটিপাস খরগোশের গর্তের মতো ছোট, সোজা, ডিম্বাকৃতি গর্তে থাকে। গর্তগুলো হয় ৩ থেকে ৮ মিটার। পানি থেকে অল্প উঁচুতে গর্তগুলো গাছের শিকড়ের আড়ালে তৈরি করে। ডিম পাড়ার আগে স্ত্রী প্লাটিপাস গর্তটিকে আরো বড় করে। প্রায় দশ দিন পর ডিম ফুটে বাচ্চা জন্মায়। বাচ্চাকে এরা স্তন্য পান করায়। ছয় সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চাগুলোর লোম জন্মে এবং চলাফেরা করতে শুরু করে।