কোষের প্রোটোপ্লাজমের মধ্যে পর্দা দিয়ে ঘেরা কেন্দ্রীয় গঠনটিকে নিউক্লিয়াস বলা হয়। নিউক্লিয়াসকে কোষের প্রাণকেন্দ্র। কোন কোষের নিউক্লিয়াস বাদ দিলে কোষ বিভাজিত হতে পারে না। যেমন মানুষের পরিণত লোহিত কণিকায় নিউক্লিয়াস না থাকায় ওই কোষ বিভাজিত হয় না। সাইটোপ্লাজমীয় বস্তু থেকে পর্দা দিয়ে পৃথক থাকবার কারণেই নিউক্লিয়াসের একটি নিজস্ব জগৎ থাকে। যে সকল জীব দেহের কোষে পর্দাঘেরা নিউক্লিয়াস থাকে তাদের ইউক্যারিওট বলা হয়। আবার যাদের পর্দাঘেরা নিউক্লিয়াস নেই তাদের বলা হয় প্রোক্যারিওট। কোষ বিভাজনের বিভিন্ন অবস্থায় নিউক্লিয়াসের পরিবর্তন ঘটে। এখানে একটি আদর্শ ইন্টারফেজ নিউক্লিয়াস এর বিবরণ দেওয়া হলো।
নিউক্লিয়াসের গঠন
একটি আদর্শ নিউক্লিয়াসের গঠন মোটামুটি চারটি ভাগে বিভক্ত।
১. নিউক্লিয় আবরণী বা নিউক্লিয় পর্দা
২. নিউক্লিয় রস বা নিউক্লিয় প্লাজম
৩. ক্রোমাটিন জালিকা
৪. নিউক্লিওলাস
নিচে নিউক্লিয়াসের গঠন বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
নিউক্লিয় পর্দা বা নিউক্লিয় আবরণী
নিউক্লিয়াসের চতুর্দিকে যে দ্বিপর্দাযুক্ত আবরণ থাকে তাকে নিউক্লিয় পর্দা বা নিউক্লিয়ার মেমব্রেন বলে। নিউক্লিয় পর্দা নিউক্লিওপ্লাজমকে সাইটোপ্লাজম থেকে পৃথক রাখে।
নিউক্লিয়াসের গঠননিউক্লিয়াসের গঠন
ইলেকট্রন অণুবীক্ষণ যন্ত্রে নিউক্লিয় পর্দাতে দুটি একক পর্দা দেখা যায়। প্রত্যেক পর্দা প্রায় ৭৫Å থেকে ৯০Å পুরু হয়। দুটি পর্দার মাঝখানে ব্যবধান প্রায় ১০০Å থেকে ৭০০Å হয়। দুটি পর্দার মাঝখানে সরু নালিকা নাম পেরিনিউক্লিয়ার সিস্টার্নি। বহিঃপর্দার বাইরের দিকে রাইবোজোম দানা আবদ্ধ থাকা একে দানাযুক্ত দেখায়। বহিঃপর্দা এন্ডোপ্লাজমিক জালিকার সঙ্গে যুক্ত থাকে। ভিতরের পর্দার ভিতর থেকে নিউক্লিয় রসে একটি ঘন হেটারোক্রোমাটিন স্তর থাকে। একে ল্যামিনাডেনসা বা তন্তুময় ল্যামিনা বলে।
নিউক্লিয় পর্দার ছিদ্র
নিউক্লিয় পর্দা অসংখ্য ছিদ্র যুক্ত হয়। এই ছিদ্রের ব্যাস ৩০০Å থেকে 7৭৫০Å পর্যন্ত হয়। দুটি ছিদ্রের ব্যবধান ১২০০Å পর্যন্ত হয়। ছিদ্রপথ অঞ্চলগুলিতে বহি এবং অন্ত পর্দা পরস্পর যুক্ত থাকে। এই ছিদ্রপথ পর্দা বলয় প্রভৃতি দ্বারা সুরক্ষিত থাকে। এই ছিদ্রপথে RNA উৎসেচক ATP রাইবোজোম প্রভৃতি বস্তু নিউক্লিয়াসের ভেতর থেকে সাইটোপ্লাজমে বেরিয়ে আসে।