ব্যাকটেরিয়া হলো এক ধরনের ক্ষুদ্র আণুবীক্ষণিক জীব। গ্রিক শব্দ Bakterion থেকে ব্যাকটেরিয়া শব্দটির উৎপত্তি। ওলন্দাজ বিজ্ঞানী অ্যান্টনি ফন লিউয়েন হুক ১৬৭৫ সালে সর্বপ্রথম ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেন। তিনি এর নাম দেন ক্ষুদ্র প্রাণী। তাঁকে ব্যাকটেরিওলজির জনক বলা হয়। ১৮২৯ সালে জার্মান বিজ্ঞানী এরেনবার্গ ব্যাকটেরিয়া নামকরণ করেন। ফরাসি বিজ্ঞানী লুই পাস্তুর ব্যাকটেরিয়ার ওপর ব্যাপক গবেষণা এবং ব্যাকটেরিয়া তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেন। জার্মান চিকিৎসক রবার্ট কচ অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা দ্বারা প্রমাণ করেন যে, প্রাণীর বহু রোগের কারণ হলো ব্যাকটেরিয়া। তিনি যক্ষ্মা রোগের জন্য দায়ী ব্যাকটেরিয়া আবিষ্কার করেন এবং এ জন্য তাঁকে ১৯০৫ সালে নোবেল পুরস্কার প্রদান করা হয়।
ব্যাকটেরিয়া আদিকোষী জীব। এর বৈশিষ্ট্য হলো এদের কোষে কোনো ঝিল্লিবদ্ধ অঙ্গাণু থাকে না, যেমন—নিউক্লিয়াস, মাইটোকন্ড্রিয়া, ক্লোরোপ্লাস্ট, এন্ডোপ্লাজমিক রেটিকুলাম, গলজি কমপ্লেক্স, লাইসোজোম, সাইটোস্কেলেটন নেই। শুধু রাইবোসোম থাকে। কোষে একটি দ্বিসূত্রক অখণ্ড, কার্যত বৃত্তাকার ডিএনএ অণু থাকে, যা ক্রোমোজোম হিসেবে পরিচিত।
ব্যাকটেরিয়া অত্যন্ত ক্ষুদ্রকায়, অণুবীক্ষণ যন্ত্র ছাড়া দেখা যায় না। সাধারণত ০.২ থেকে ৫০ মাইক্রোমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এদের কোষে জড় কোষপ্রাচীর থাকে। তাই এরা উদ্ভিদের সঙ্গে মিল সম্পন্ন।
ব্যাকটেরিয়া মাটিতে, পানিতে, বাতাসে, জীবদেহের বাইরে ও ভেতরে অর্থাৎ প্রায় সর্বত্রই বিরাজমান। মানুষের অন্ত্রেও ব্যাকটেরিয়া বাস করে।
মানুষের অনেক মারাত্মক রোগ, যেমন—প্লেগ, যক্ষ্মা, গনোরিয়া, কলেরা, আমাশয়, টাইফয়েড, নিউমোনিয়া ইত্যাদি ব্যাকটেরিয়াজনিত কারণে হয়ে থাকে। ব্যাকটেরিয়া যেমন মানুষের জন্য ক্ষতিকর, তেমনি উপকারীও। জীবজগতের ভারসাম্য রক্ষায় ব্যাকটেরিয়ার গুরুত্ব অনেক। ব্যাকটেরিয়া অ্যান্টিবায়োটিক এবং শিল্পের রাসায়নিক উপকরণেরও উৎস। গাঁজনকৃত খাদ্যশিল্পের জন্য ব্যাকটেরিয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীতে অসংখ্য ব্যাকটেরিয়া রয়েছে। এর মধ্যে অল্পসংখ্যক ব্যাকটেরিয়া রোগজীবাণু বহন করে।