আক্বীদা (العقيدة) অর্থ দৃঢ় বিশ্বাস, যা ধারণ করে মানুষের জীবন পরিচালিত হয়। আদম-সন্তানহিসাবে দুনিয়ার সকল মানুষ সমান। কিন্তু আক্বীদা ও বিশ্বাসের পার্থক্যের কারণে তাদের কেউ মুমিন, কেউ কাফির। যারা মুমিন তারা আল্লাহকে তাদের সৃষ্টিকর্তা ও পালনকর্তা হিসাবে দৃঢ় বিশ।বাস পোষণ করেন এবং তাঁর প্রেরিত বিধান সমূহ মেনে চলেন। পক্ষান্তরে যারা কাফির, তারা আল্লাহ ও তাঁর বিধানসমূহ অমান্য করে ও নিজেদের খেয়াল-খুশীমত চলে।
১. একজন মানুষকে মুসলমান হতে গেলে প্রথমে তাকে দু’টি বিষয়ে সাক্ষ্য দিতে হয়। যাকে কালেমায়ে শাহাদাত বলা হয়। اَشْهَدُ اَنْ لآ اِلَهَ اِلاَّ اللهُ وَ اَشْهَدُ اَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ. ‘আশ্হাদু আল লা-ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়া আশ্হাদু আন্না মুহাম্মাদান ‘আবদুহূ ওয়া রাসূলুহু’।
অনুবাদ : আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, মুহাম্মাদ আল্লাহর বান্দা ও তাঁর রাসূল।
২. ইসলামের ভিত্তি হ’ল পাঁচটি। যা তাকে মেনে চলতে হয়। যেমন (১) এই মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করা যে, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ (ছাঃ) তাঁর বান্দা ও রাসূল। (২) দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত ছালাত আদায় করা (৩) মালের যাকাত আদায় করা (৪) রামাযানের ছিয়াম পালন করা (৫) হজ্জ করা।
১. একজন মুসলমানকে নিম্নোক্ত ৬টি বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করতে হয়। যাকে ঈমানে মুফাচ্ছাল বা বিস্তারিত ঈমান বলা হয়। যেমন, آمَنْتُ بِاللهِ وَمَلاَئِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ مِنَ اللهِ تَعَالَى. ‘আ-মানতু বিল্লা-হি ওয়া মালা-ইয়াকাতিহি ওয়া কুতুবিহি ওয়া রুসুলিহি ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি ওয়াল ক্বাদরি খায়রিহি ওয়া শার্রিহি মিনাল্লা-হি তা‘আলা’।
অনুবাদ : আমি ঈমান আনলাম (১) আল্লাহর উপরে (২) তাঁর ফেরেশতাগণের উপরে (৩) তাঁর প্রেরিত কিতাব সমূহের উপরে (৪) তাঁর রাসূলগণের উপরে (৫) ক্বিয়ামত দিবসের উপরে এবং (৬) আল্লাহর পক্ষ হতে নির্ধারিত তাক্বদীরের ভালমন্দের উপরে’।
অর্থাৎ একজন মুসলমানের ধর্মবিশ্বাসের ভিত্তি হ’ল ৬টি : (১) আল্লাহর উপরে বিশ্বাস (২) তাঁর ফেরেশতাগণের উপরে বিশ্বাস (৩) তাঁর প্রেরিত কিতাব সমূহের উপরে বিশ্বাস (৪) তাঁর প্রেরিত রাসূলগণের উপরে বিশ্বাস (৫) ক্বিয়ামত দিবসের উপরে বিশ্বাস এবং (৬) তাক্বদীরের ভাল-মন্দের উপরে বিশ্বাস।
২. ব্যাখ্যা : (১) আল্লাহর উপরে বিশ্বাস এই মর্মে যে, তিনি এক। তার কোন শরীক নেই। তিনি কারু পিতা বা সন্তান নন। তিনি মুখাপেক্ষীহীন। তার সমকক্ষ কেউ নেই। তিনি জগতসমূহের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা, রূযীদাতা, রোগ ও আরোগ্যদাতা, বিপদহন্তা, জীবন ও মরণদাতা। তিনি আদি, তিনি অন্ত, তিনি প্রকাশ্য, তিনি গোপন, তিনি সকল বিষয়ে অবহিত। তিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক। তাঁর তন্দ্রা নেই, নিদ্রা নেই, দৃশ্যমান ও অদৃশ্য জগতের সকল চাবিকাঠি তাঁর হাতে। তিনি সৃষ্টিজগতের ব্যবস্থাপক ও পরিচালক, তিনি আসমান ও যমীনকে অনস্তিত্ব থেকে অস্তিত্বে আনয়ন করেছেন। তিনি যা খুশী তাই করেন। তিনি যখনই বলেন, হও, তখনি তা হয়ে যায়। তিনি সর্বোচচ ক্ষমতার অধিকারী। তিনি রাজাধিরাজ, তিনি যাকে ইচ্ছা রাজ্য দেন, যার কাছ থেকে ইচ্ছা তা ছিনিয়ে নেন। তিনি যাকে ইচ্ছা সম্মানিত করেন, যাকে ইচ্ছা অসম্মানিত করেন। তাঁর হাতেই রয়েছে সকল ক্ষমতা।
আল্লাহর নির্ভেজাল একত্ববাদকে ‘তাওহীদ’ বলা হয়। যাকে তিন ভাবে ব্যাখ্যা করা যায়। ১. তাওহীদে রবূবিয়াত ২. তাওহীদে ইবাদত ও ৩. তাওহীদে আসমা ওয়া ছিফাত। ১. আল্লাহকে রব হিসাবে অর্থাৎ সৃষ্টি ও পালনকর্তা, রূযীদাতা, জীবন ও মরণদাতা, রোগ ও আরোগ্যদাতা প্রভৃতি হিসাবে বিশ্বাস করা। কিছু সংখ্যক নাস্তিক ছাড়া দুনিয়ার প্রায় সকল মানুষ এই তাওহীদে বিশ্বাস করে। আরবের মুশরিকরাও এ বিশ্বাস করত। কিন্তু স্রেফ তাওহীদে রবূবিয়াতের উপর ঈমান আনলেই কেউ মুমিন হতে পারেনা, যতক্ষণ না সে তাওহীদে ইবাদতের উপর বিশ্বাস স্থাপন করে। ২. তাওহীদে ইবাদতের অর্থ হ’ল, সর্ব প্রকার ইবাদতের জন্য আল্লাহকে একক গণ্য করা। আল্লাহর জন্য সর্বাধিক ভালোবাসা সহ চরম প্রণতি পেশ করাকে ‘ইবাদত’ বলা হয়। বিশ্বাস ও কর্মজগতের সর্বত্র এককভাবে আল্লাহর দাসত্ব করাকে তাওহীদে ইবাদত বলা হয়। ৩. তাওহীদে আসমা ওয়া ছিফাত অর্থ আল্লাহর নাম ও গুণাবলীর একত্ব। অর্থাৎ আল্লাহর সত্তাগত ও কর্মগত গুণাবলী আল্লাহর সত্তার সাথে অবিচ্ছিন্ন ও ক্বাদীম। তা বান্দার সত্তা ও গুণাবলীর সাথে তুলনীয় নয়। এ বিষয়ে কোন রূপক ও কল্পিত ব্যাখ্যা ছাড়াই পবিত্র কুরআন ও ছহীহ হাদীছ সমূহে যেভাবে বর্ণিত হয়েছে, সেভাবেই প্রকাশ্য অর্থে বিশ্বাস স্থাপন করা।
২. তাঁর ফেরেশতাগণের উপর বিশ্বাস :
ফেরেশতাগণ নূরের তৈরী আল্লাহর এক অনন্য সৃষ্টি। যারা আমাদের অলক্ষ্যে থেকে আমাদের সেবায় নিয়োজিত আছে। যারা সর্বদা আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকে এবং তাঁর হুকুম পালনে সদা তৎপর থাকে। যারা আল্লাহর কন্যা নয় বা তাঁর শরীক নয়। আল্লাহর হুকুম ব্যতীত তারা কারু কোন মঙ্গল বা অমঙ্গল করার ক্ষমতা রাখেনা। আল্লাহ তাদেরকে মানুষের দৃষ্টির অগোচরে রেখেছেন। কিন্তু কখনো কখনো তিনি উক্ত পর্দা উঠিয়ে নেন বিশেষ কোন বান্দার ক্ষেত্রে। যেমন শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ) ফেরেশতাগণের সর্দার জিব্রীলকে তার ছয়শত ডানা সহ স্বরূপে দেখেছিলেন, যা দিগন্ত ঢেকে ফেলেছিল।
তারা আল্লাহর হুকুমে বিভিন্ন কাজের দায়িত্ব পালন করেন। যেমন (১) ফেরেশতাগণের সর্দার জিব্রীল (আঃ) আল্লাহর নিকট থেকে অহি নিয়ে বিভিন্ন নবী ও রাসূলের নিকট আগমন করেন। এতদ্ব্যতীত বিভিন্ন জনপদ ধ্বংস করার কাজও আল্লাহ তাঁকে দিয়ে করান। যেমন হূদ, ছালেহ, লূত্ব, শো‘আয়েব প্রমুখ নবীগণের অবাধ্য কওমকে তিনি ধ্বংস করে দেন। এছাড়াও রয়েছে তাঁর অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যা আল্লাহ তাকে দিয়ে থাকেন। (২) মীকাঈল ফেরেশতা বৃষ্টিপাত ও শস্য উৎপাদনের দায়িত্বে আছেন। (৩) ইস্রাফীল ক্বিয়ামতের দিন শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়ার অপেক্ষায় নিয়োজিত আছেন। (৪) ‘মালাকুল মউত’ সর্বদা প্রাণীর রূহ কবয করার কাজে নিযুক্ত আছেন। (৫) ‘মালাকুল জিবাল’ পাহাড় সমূহের নিয়ন্ত্রণ করেন। (৬) ‘মালেক’ ফেরেশতা জাহান্নামের দারোগা হিসাবে নিয়োজিত আছেন। (৭) একদল ফেরেশতা মায়ের গর্ভে সন্তানের অবয়ব গঠনে নিযুক্ত আছেন। (৮) একদল ফেরেশতা মায়ের গর্ভে ১২০ দিনের মাথায় সন্তানের দেহে রূহ সঞ্চার ও তার কপালে ৪টি বিষয়ে তাক্বদীর লিপিবদ্ধ করণে নিযুক্ত আছেন। উক্ত চারটি বিষয় হ’ল বান্দার আয়ুষ্কাল, তার কর্মকান্ড, তার রিযিক এবং সে সৌভাগ্যবান না হতভাগা (জান্নাতী না জাহান্নামী)।
৩. আল্লাহর কিতাবসমূহের উপরে বিশ্বাস :
আমরা বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ তাঁর রাসূলগণের উপর কিতাব সমূহ নাযিল করেছিলেন জগদ্বাসীর জন্য পথপ্রদর্শক হিসাবে এবং আমলকারীদের জন্য প্রমাণ হিসাবে। যার মাধ্যমে তারা জীবন পরিচালনা এবং নিজেদের আত্মাকে পরিচ্ছন্ন করে। বড় বা ছোট কিতাব বা ছহীফা তিনি সকল নবী-রাসূলের উপর নাযিল করেছেন। যেমন আল্লাহ বলেন, لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنْزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيْزَانَ لِيَقُوْمَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ … ‘নিশ্চয়ই আমরা আমাদের রাসূলগণকে প্রেরণ করেছি স্পষ্ট প্রমাণাদিসহ এবং তাদের সঙ্গে দিয়েছি কিতাব ও তূলাদন্ড যাতে মানুষ সুবিচার প্রতিষ্ঠা করে’ … (হাদীদ ৫৭/২৫)।
সকল কিতাব ও ছহীফার নাম আল্লাহ আমাদের জানাননি। যেগুলির নাম তিনি আমাদের জানিয়েছেন, সেগুলি নিম্নরূপ :
(১) ইবরাহীম (আঃ)-এর ছহীফা সমূহ। যা তাঁর উপর ছোট পুস্তিকা আকারে নাযিল হয়।
(২) তাওরাত : নবী মূসা (আঃ)-এর উপর এই কিতাব নাযিল হয়। এটাই হ’ল বনু ইস্রাঈলগণের শ্রেষ্ঠ কিতাব। এর মধ্যে ব্যবহারিক জীবন পরিচালনার বিভিন্ন আইন ও বিধান সমূহ নাযিল হয়।
(৩) যবূর : এটি দাঊদ (আঃ)-এর উপর নাযিল হয়। যা তাওরাতেরই পরিপূরক।
(৪) ইনজীল : এটি বনু ইস্রাঈলের শেষ নবী ঈসা (আঃ)-এর উপর নাযিল হয়। এতে তাওরাতের অনেক হারামকে হালাল করা হয় ও নতুন বিধান সমূহ জারি করা হয়। যবূর ও ইনজীল প্রত্যেক কিতাবই তাওরাতের সত্যায়নকারী ও পূর্ণতাদানকারী ছিল। তবে প্রত্যেক কিতাবই স্ব স্ব অনুসারীদের হাতে বিকৃত ও বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
(৫) কুরআন : এটি হ’ল শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর উপর নাযিলকৃত আল্লাহর সর্বশেষ ও পূর্ণাঙ্গ কিতাব। যা বিগত সকল ইলাহী কিতাবের সত্যায়নকারী। মানবজাতির জন্য সুপথ প্রদর্শনকারী এবং সত্য ও মিথ্যার পার্থক্যকারী। এই কিতাব প্রেরণের মাধ্যমে আল্লাহ বিগত সকল কিতাবের হুকুম রহিত করেছেন এবং এই কিতাবের হেফাযতের দায়িত্ব আল্লাহ স্বয়ং নিয়েছেন। ফলে তা বিকৃতকারীদের বিকৃতি হ’তে নিরাপদ রয়েছে এবং ক্বিয়ামত পর্যন্ত সৃষ্টিজগতের উপর ইলাহী দলীল হিসাবে মওজূদ থাকবে। বিগত সকল কিতাবের হুকুম ছিল সাময়িক ও পরিবর্তনীয়। কিন্তু কুরআনের হুকুম ও বিধানসমূহ হ’ল চিরন্তন ও অপরিবর্তনীয়। আল্লাহ বলেন, وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ صِدْقًا وَعَدْلًا لَا مُبَدِّلَ لِكَلِمَاتِهِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ‘তোমার প্রতিপালকের বাণী সত্য ও ন্যায় দ্বারা পূর্ণ। তাঁর বাণীর পরিবর্তনকারী কেউ নেই। তিনি সবকিছু শোনেন ও জানেন’ (আন‘আম ৬/১১৫)।
৪. তাঁর রাসূলগণের উপর বিশ্বাস :
প্রত্যেক মুসলমানকে এই অপরিহার্য বিশ্বাস পোষণ করা যে, আল্লাহ তাঁর নির্বাচিত কিছু মানুষের মাধ্যমেই মানবজাতির নিকটে তাঁর বাণী পাঠিয়েছেন। যাদেরকে নবী ও রাসূল বলা হয়। যার অর্থ দূত বা সংবাদ বাহক। নবীগণ আল্লাহর নিকট থেকে ‘অহি’ প্রাপ্ত হন। যা ফেরেশতা জিব্রীল মারফত তাদের অন্তরে প্রক্ষিপ্ত হয়। কখনো কখনো জিব্রীল সরাসরি আসেন ও কথা বলেন। কখনো স্বপ্নাদেশ হয়। কোন কোন নবীর সাথে আল্লাহ দুনিয়াতেই সরাসরি কথা বলেছেন। যেমন মূসা (আঃ)। কোন কোন নবীকে আল্লাহ নিজের কাছে ডেকে নিয়ে কথা বলেছেন। যেমন শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)।
নবীগণ মাটির তৈরী মানুষ ছিলেন। তাঁরা নিষ্পাপ ও মা‘ছূম ছিলেন। তাঁরা মানুষকে আল্লাহর বাণী শুনাতেন এবং সর্বদা জাহান্নামের ভয় ও জান্নাতের সুসংবাদ শুনাতেন। তাঁরা নূরের নবী ছিলেন না। তাঁরা গায়েব জানতেন না। কেবল অতটুকুই জানতেন, যতটুকু আল্লাহ তাদের জানাতেন। মানুষকে সর্বদা আল্লাহর পথে ডাকার কারণে শয়তানের তাবেদার একদল নেতৃস্থানীয় মানুষ সর্বদা তাদের কষ্ট দিয়েছে। এমনকি তাদেরকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করেছে। তবুও তাঁরাই সর্বদা জগদ্বাসীর অনুসরণীয়, বরণীয় ও শ্রদ্ধার পাত্র। ৩১৫ জন রাসূলসহ পৃথিবীতে সর্বমোট ১ লক্ষ ২৪ হাযার নবী এসেছেন। আদি পিতা আদম (আঃ) ছিলেন প্রথম নবী। নূহ (আঃ) ছিলেন প্রথম রাসূল। নূহের প্লাবনের পরবর্তী মানবজাতির সবাই নূহ (আঃ)-এর বংশধর। ইবরাহীম (আঃ) ছিলেন আবুল আম্বিয়া বা নবীগণের পিতা। তাঁর কনিষ্ঠ পুত্র ইসহাক (আঃ)-এর বংশধর হ’লেন ইয়াকূব, ইউসুফ, মূসা, দাঊদ, সুলায়মান, ঈসা প্রমুখ নবী ও রাসূলগণ। তন্মধ্যে মূসা, দাঊদ ও ঈসা (আঃ) হ’লেন কিতাবধারী রাসূল। ইহুদী-খ্রিষ্টানরা তাঁদের উম্মত হবার দাবীদার। ইবরাহীম (আঃ)-এর জ্যেষ্ঠ পুত্র ইসমাঈল (আঃ)-এর বংশধর হ’লেন শেষনবী ও শ্রেষ্ঠনবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
সকল নবী ছিলেন স্ব স্ব গোত্রের নবী। কিন্তু শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ছিলেন বিশ্বনবী। তাঁর আগমনবার্তা বিগত কিতাব সমূহে লিপিবদ্ধ ছিল। বিগত সকল নবীর কাছ থেকেই শেষনবীর প্রতি ঈমান ও আনুগত্যের প্রতিশ্রুতি নেওয়া হয়েছিল। শেষনবীর আগমনের পর বর্তমান বিশ্বের সকল মানুষ কেবল তাঁরই উম্মত। তাঁর ও তাঁর আনীত দ্বীনের উপর ঈমান না আনলে সবাই জাহান্নামী হবে। আখেরী যামানায় ৩০ জন ভন্ডনবীর আবির্ভাব ঘটবে বলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আমাদেরকে সাবধান করে গেছেন। ইতিমধ্যে তাদের কয়েকজনের আবির্ভাব ঘটে গেছে ও বহু মানুষকে তারা পথভ্রষ্ট করেছে। যেমন ভারতের গোলাম আহমাদ ক্বাদিয়ানী (আল্লাহ তাকে লা‘নত করুন!)। নবীগণকে আল্লাহ বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য দান করেছেন এবং একে অপরের উপর মর্যাদা দান করেছেন। কিন্তু আল্লাহর নবী হিসাবে সকলকে আমরা সমান ভাবে বিশ্বাস করি, মান্য করি ও শ্রদ্ধা করি। আমরা কাউকে পার্থক্য করি না।
শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আনীত ‘ইসলাম’ বর্তমানে মানবজাতির জন্য আল্লাহর মনোনীত একমাত্র দ্বীন, যা পূর্ণাঙ্গ। এর বাইরে যে ব্যক্তি অন্য দ্বীন তালাশ করবে, সে ব্যক্তি আখেরাতে ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর মৃত্যুর পরে তাঁর রেখে যাওয়া কুরআন ও সুন্নাহ মানবজাতির জন্য একমাত্র অনুসরণীয় ও পালনীয়। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দিন। আমীন!
৫. ক্বিয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাস :
৬. আল্লাহ নির্ধারিত তাক্বদীরের ভাল-মন্দের উপর বিশ্বাস। অর্থাৎ আমরা বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ বান্দার ভাল-মন্দ সবকিছু পূর্ব থেকে জানেন। তিনি তার সবকিছু নির্দিষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। তিনি যা চান তাই হয়। তিনি ভাল-মন্দ সবকিছুর সৃষ্টিকর্তা। ‘আসমান ও যমীন সৃষ্টির পঞ্চাশ হাযার বছর পূর্বে আল্লাহ বান্দার তাক্বদীর লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৭৯ ‘তাক্বদীরে বিশ্বাস’ অনুচ্ছেদ)। আল্লাহ বলেন, وَكُلَّ شَيْءٍ أَحْصَيْنَاهُ فِي إِمَامٍ مُبِينٍ ‘আর প্রত্যেক বস্ত্ত আমরা স্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ করে রেখেছি’ (ইয়াসীন ৩৬/১২)।
-লেখক : মুহাম্মাদ আসাদুল্লাহ আল-গালিব