প্রাণী জগতের মধ্যে মানুষ শ্রেষ্ঠ। শুধু বুদ্ধি, মেধা, জ্ঞানের জন্যই নয়, মানুষের শ্রেষ্ঠত্ব লাভের অন্যতম মাধ্যম হলো ভাষা। আমরা আমাদের মনের কথা অন্যের কাছে প্রকাশ করতে চাই ।এই ভাব প্রকাশের মাধ্যমই হলো ভাষা ।
আমরা প্রত্যেকেই কিছু বলতে চাই। শুধু মানুষ কেন , অন্যান্য প্রাণীরাও তাদের মনের ভাব প্রকাশ করতে চায় । তাই হয়তো গাভী ডাকলে বাছুর দৌড়ে আসে । পাখির ছানা গুলি কিচিরমিচির ডাকলে, মা পাখি খাবার নিয়ে আসে। অর্থাৎ সবার ভাষা আছে । সেই প্রাচীনকাল থেকে মানুষ মনের ভাব প্রকাশ করবার জন্য বিভিন্ন সংকেত ব্যবহার করে আসছে এবং সেই সংকেত থেকেই ধ্বনির সৃষ্টি হয়েছে ।অর্থাৎ মানুষ নিজের নিজের প্রয়োজনে ভাষা রপ্ত করলো ।তাহলে বোঝা যাচ্ছে -
১.ভাব প্রকাশের মাধ্যম হল ভাষা
২.মানুষ নিজের জন্যে অন্যের জন্যে ভাষা ব্যবহার করতে থাকলো
*এক কথায় আমরা বলবো ভাষা হল ভাব প্রকাশের মাধ্যম*
ভাষার সংজ্ঞা
যে ধ্বনি মানুষের বাক যন্ত্রের সাহায্যে উচ্চারিত হয় এবং যার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করা হয় তাকে ভাষা বলে ।
আমরা মনে রাখবো, যে-কোনো রকমের ধ্বনি হলেই ভাষা হবে না যেমন হাততালি দিয়ে ডাকা ইশারায় কথা বলা এগুলি ভাষা নয়, আমরা মনে রাখব ভাষা হল ধ্বনিযুক্ত এবং তা অর্থবহ। আবার উচ্চারণ যোগ্য ধ্বনি হলেই তা ভাষা হবে না। তাকে হতে হবে অর্থবহ ।
অর্থাৎ শুধুমাত্র মনের ভাব প্রকাশের উপযোগী ধ্বনিই হল ভাষা।
ভাষার লক্ষণ কি কি
1 যে কোন ধ্বনি বা শব্দ ভাষা নয়। যা বোধগম্য ধ্বনি, তা হল ভাষা ।
2 একমাত্র অর্থ যুক্ত ধ্বনি হলো ভাষা। তাই পাগলের বকে যাওয়া ভাষা নয় ।
3 ভাষা পরস্পরের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান করে ।
4 বক্তব্যের অন্তরঙ্গ রূপ প্রকাশ করে ।
5 মানুষের স্বভাব ও সংস্কৃতিকে প্রকাশ করে ভাষা।
বাংলা ভাষা কি
প্রত্যেক জাতির নিজস্ব ভাষা আছে । আমাদের দেশে মূলত হিন্দি ভাষা প্রচলিত রয়েছে । বাঙালিরা যে ভাষায় কথা বলে তাকে বাংলা ভাষা বলে । পূর্ববাংলা, পশ্চিমবাংলা , ত্রিপুরা , কাছাড় , বারাক উপত্যকায় বাঙালিরা যে ভাষায় কথা বলে তাকেই বাংলা ভাষা বলে । বাংলা ভাষা মূলত দু রকমের শব্দ নিয়ে তৈরি হয়েছে-
১. দেশি শব্দ
২. বিদেশি শব্দ
কয়েকটি বাংলা দেশী শব্দের উদাহরণ
প্রতিদিনই আমরা ঝুড়ি , ঝিঙে , ঢেঁকি ইত্যাদি শব্দ বলে থাকি এগুলি আর্যরা এ দেশে আসার আগে থেকেই চালু ছিল তাই এদের দেশি শব্দ বলা হয়।
কয়েকটি বাংলা দেশী শব্দের উদাহরণ
আর বিদেশীরা এ দেশে আসার পর অনেক শব্দ তাদের কাছ থেকে আমরা পেয়েছি এদের বিদেশি শব্দ বলে, যেমন- আমরা সব সময়ই চেয়ার-টেবিল , গ্লাস ইত্যাদি শব্দ বলে থাকি এগুলি সব হলো বিদেশি শব্দ ।
প্রাদেশিক ভাষা
ভারতবর্ষের একাধিক প্রদেশের ভিন্ন ভিন্ন ভাষা প্রচলিত । আছে এসব ভাষাকে প্রাদেশিক ভাষা বলে।
প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার স্তর কয়টি ও কি কি
আর্যরা ভারতবর্ষে আসার সময় থেকে আজ পর্যন্ত ধরা হলে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বছর ধরে আর্যদের ভাষার বিস্তৃতি আমাদের ভারতবর্ষে। আনুমানিক ১৫০০ খ্রিস্টপুরবাব্দে আর্য ভাষা ভারতবর্ষে অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। আর্যদের ভাষা দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল । ভাষার একটি ভাগ গিয়েছিল ইরান দেশে ও আরেকটি ভারতবর্ষে । যে ভাষাটি ভারতবর্ষে এসেছিল তাকেই আমরা বলি ভারতীয় আর্য ভাষা। আর্য ভাষাকে তিনটি যুগে ভাগ করা হয়েছে, যথা- (১)প্রাচীন ভারতীয় আর্য(২)মধ্য ভারতীয় আর্য (৩)নব্য ভারতীয় আর্য।