বায়তুল মামুর আরবী শব্দ। বায়তুন অর্থ-ঘর। মামুর অর্থ-বসতি স্থাপনের মাধ্যমে আবাদ করা হয়েছে এরুপ স্হান, বসতিপূর্ণ, বাসস্থান ইত্যাদি। বায়তুল মামুর বলতে আবাদকৃত ঘরকেই বুঝায়।
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
“শপথ তুর পর্বতের, শপথ কিতাবের যা লিখিত আছে উন্মুক্ত পত্রে, শপথ বায়তুল মামুরের, শপথ সমুন্নত আকাশের।” (সূরা-আত্ব ত্বর, আয়াত নং ১ থেকে ৫)।
হাদিসের বর্ণনামতে হযরত রাসূল (সঃ) বলেন, (মেরাজের রাতে) আমাকে বায়তুল মামুর পরিদর্শন করানো হয়েছে। সেখানে ৭০ হাজার ফেরেশতা তাওয়াফ করে থাকে। ঐ ফেরেশতারা পুনরায় ঐখানে আর কখনো তাওয়াফের সুযোগ পায় না।
প্রচলিত ধারণা মতে, বায়তুল মামুর আসমানে অবস্হিত এমন একটি উপাসনালয়, যার প্রতিকৃতিস্বরুপ মক্কার কাবা ঘরকে তৈরি করা হয়েছে। হযরত আদম (আঃ) বেহেশত থেকে বিতাড়িত হওয়ার পর যখন তাঁর গুনাহ মাফ করা হলো, তখন তিনি ইবাদতের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থান নির্মাণ করার আকাংখা প্রকাশ করলেন। আল্লাহ জমিনের বুকে বায়তুল মামুরের ছায়া আদমকে দেখিয়ে সে অনুযায়ী ক্বাবা গৃহ নির্মাণের নির্দেশ দিলেন।
পবিত্র কুরআন ও হাদিসের বর্ণনার পাশাপাশি তাসাউফের সাধনা করে বায়তুল মামুর বলতে আমি যা বুঝেছি, তা হলো -যে ব্যক্তি সাধনার মাধ্যমে নিজের অন্তরের যাবতীয় কলুষতা দুর করে ছুদুরের মাকাম থেকে নশর, শামছি, নূরী, কুর্ব, মকীম অতিক্রম করে হৃদয়ের সপ্তম স্তরে নাফসীর মাকামে পৌঁছে থাকেন, এমতাবস্থায় তিনি আল্লাহর সাথে ফানা বা বিলীন হয়ে একাকার হয়ে যান।
আল্লাহ প্রেরিত মহামানবগণের হৃদয়ও বায়তুল মামুর তুল্য! কারণ, নবুয়তের যুগে নবী ও রাসূলগনের মাধ্যমে আল্লাহ মানব জাতির প্রতি সকল নির্দেশ প্রেরণ করেছেন। অনুরূপভাবে -বেলায়েতের যুগেও যাঁর মাধ্যমে মানব জাতির প্রতি আল্লাহর নির্দেশ প্রকাশ পায়, তাঁর হৃদয়ও বায়তুল মামুর তুল্য। কারণ, আল্লাহ তায়ালা এরুপ মহামানবের অন্তরে অবস্থান করেন এবং আল্লাহর নির্দেশাবলী সাধারণ মানুষের জন্য উক্ত মহামানবের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়।
তাঁদের মধ্যে শীর্ষস্হানীয় একজন মহামানব, যিনি যুগের ইমাম বা মোজাদ্দেদ, তাঁর রুহানি শক্তি বা ফায়েজে অসংখ্য দেশরক্ষক অলী আল্লাহ দেশ রক্ষার কাজে ফেরেশতার মত সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে সৃষ্টি জগৎ পরিচালনা করে থাকেন। মোটকথা- মানুষ যখন সাধনার মাধ্যমে জীবআত্নার কু-রিপুসমূহ দূর করতে সক্ষম হয়, এরুপ ব্যক্তি প্রকৃত মোমেন, আর এরুপ ব্যক্তির হৃদয়কেও এক প্রকার বায়তুল মামুর বলা যায়। কেননা প্রকৃত মোমেনের ক্বালবে আল্লাহ অবস্থান করেন। তাই হাদিস শরীফে বলা হয়েছে,
“মোমেনের দিল আল্লাহর আরশ।”
এ কথা পূর্বেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, উর্ধ্ব জগতে অবস্হিত বায়তুল মামুর এর প্রতিকৃতি অনুসারে জমিনের বুকে ক্বাবা ঘর নির্মিত হয়েছে। তাই বায়তুল মামুরের মর্যাদা কাবা ঘরের চেয়েও অনেক বেশি। যেহেতু মোমেন ব্যক্তির হৃদয় বায়তুল মামুর, তাই মোমেন ব্যক্তির মর্যাদাও কাবা ঘরের চেয়ে বেশি।
রাসূল পাক (সঃ) বলেন,
“মোমেন ব্যক্তি কাবার চেয়েও অধিকতর সম্মানিত।” (ইবনে মাজাহ)।
কারণ, কাবা ঘর হলো বায়তুল্লাহ বা আল্লাহর ঘর। আর মুমিন ব্যক্তির হৃদয় হলো আরশুল্লাহ বা আল্লাহর সিংহাসন, যেখানে আল্লাহ অবস্থান করেন।
পবিত্র কুরআন ও হাদিস শরীফের উপরোক্ত আলোচনা থেকে পরিশেষে বলা যায় যে, বায়তুল মামুর পবিত্র কাবা শরীফের বরাবর উর্ধ্বলোকে অবস্হিত। বায়তুল মামুরের আদলেই পবিত্র কাবা ঘর নির্মাণ করা হয়েছে। সেখান থেকে মহান আল্লাহ তায়ালা মহামানবের কাছে তাঁর যাবতীয় নির্দেশাবলী প্রেরন করে থাকেন। আর উহাই হিজবুল্লাহ বা আল্লাহর সৈনিকগণের মাধ্যমে জততে বাস্তবায়িত হয়ে থাকে।