নাযিল হওয়ার সময় ও স্থান
ঠিক কখন এ সূরাটি নাযিল হয়েছিল সে সম্পর্কে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায়। হযরত ইবনে ওমর বলেনঃ সূরা নছর বিদায় হজ্বে অবতীর্ণ হয়েছে।[৩] এরপর "আলইয়াওমা আকমালতু লাকুম দিনাকুম" আয়াত অবতীর্ণ হয়। এর পর রসূলুল্লাহ্ মাত্র আশি দিন জীবিত ছিলেন। রসূলুল্লাহ্ -এর জ়ীবনের যখন মাত্র পঞ্চাশ দিন বাকী ছিল, তখন কামালার আয়াত নাযিল হয়। অতপরঃ মৃত্যুর পঁয়ত্রিশ দিন বাকী থাকার সময় "লাকাদ যা-আকুম রাসূলুম মিন আনফুছিকুম আযীযুন আলাইহি ..." আয়াতটি অবতীর্ণ হয় এবং একুশ দিন বাকী থাকার সময় ইত্তাক্বু ইয়াওমান তুরযাউনা ফিহী ..." আয়াতটি অবতীর্ণ হয়।[৪]
শানে নুযূল
এই সূরার আয়াতসমূহ নবী মুহাম্মদ কে উদ্দেশ্য করে বর্ণিত। মক্কা বিজয়ের লক্ষণসমূহ পরিস্ফুট হয়ে ওঠা এবং এ বিজয়ের মাধ্যমে দুনিয়াতে ইসলামের রাসুল মুহাম্মদ -এর আগমন ও অবস্থানের উদ্দেশ্য পূর্ণ হয়ে যাওয়ার সমাসন্নতার পরিপ্রেক্ষিতে এই সূরাটি নাযিল হয়ে থাকবে। এ সূরার অন্যতম তাৎপর্য এই যে মৃত্যু নিকটবর্তী প্রতীয়মান হলে মুসলমান ব্যক্তিকে তাসবীহ ও ইস্তেগফার করতে হবে।[৫] আয়িশা (রা:) থেকে বর্ণিত যে, সূরা আন নাসর নাযিল হওয়ার পর রাসুল প্রত্যেক নামাযের পর ‘সুবহানাকা রাব্বানা ওয়া বেহামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলি’ দুয়াটি পাঠ করতেন। উম্মে সালমা থেকে বর্ণিত যে, সূরা আন নছর নাযিল হওয়ার পর থেকে রাসুল (সা:) সর্বাবস্থায় ‘সুবহানাল্লাহে ওয়া বেহামদিহি আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়া আ তুউবু ইলাইহি’ দুয়াটি পাঠ করতেন এবং, অতঃপর, এই দুয়া পাঠের যুক্তিস্বরূপ সূরাটি তিলাওয়াত করতেন। [৬]
বিষয়বস্তুর বিবরণ
৬৩০ খ্রিষ্টাব্দে মক্কা বিজয়ের পরের বছর অর্থাৎ ৯ম ও ১০ম হিজরীকে ইতিহাসে ‘প্রতিনিধি দলসমূহের আগমনের বছর’ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। প্রতিনিধি দলসমূহের সংখ্যা ৭০ এর চেয়ে বেশি। ওই সময়ে মক্কার কাফিররা দলে দলে ইসলাম গ্রহণ করে। সূরা নাসরে মানুষের বিজয়ের বা সাফল্যের জন্য সৃষ্টিকর্তার সাহায্যের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। বিজয় মানুষের শক্তিমত্তার ওপর নির্ভর করে না: বিপুল শক্তিশালী দলও যুদ্ধে পরাজিত হয়; অন্যদিকে, দুর্বল দলও আল্লাহ’র সাহায্যক্রমে জয়ী হতে পারে বদরের যুদ্ধ যার প্রমাণ। শক্তিমত্তা নয়, আল্লাহ’র সাহায্যই বিজয়ের একমাত্র নিয়ামক, এ কথাই সূরা নাসরের প্রথমিক তাৎপর্য। বিজয়ের মুহূর্তে আল্লাহ তার রাসুল -কে দুটি নির্দেশ দিয়েছেন এবং নিজের একটি গুণের কথা পুনরুক্ত করেছেন। প্রথমটি হলো আল্লাহ’র গুণকীর্তন করা যে তিনি সবরকম দুর্বলতা বা দোষ থেকে মুক্ত (অর্থাৎ তিনি কারো সাহায্যের মুখাপেক্ষী নন)। দ্বিতীয়ত আল্লাহ’র কাছে ক্ষমা চাইতে বলা হয়েছে তথা তাওবা করতে বলা হয়েছে। পুনরুক্ত করে বলা হয়েছে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবা কবুলকারী। লক্ষণীয় যে, বিজয়ের জন্য উৎসব করতে বলা হয় নি।
আয়াতসমূহ
কুরআন
ধারাবাহিক নিবন্ধশ্রেণীর অংশ
কোরআন ক্যালিগ্রাফি
সহিফা
বিষয়বস্তু
কুরআন পড়া
অনুবাদ
ইতিহাস
তাফসীর
বিষয়শ্রেণী ইসলাম প্রবেশদ্বার
দেস
এ সূরার তিনটি আয়াতের আরবি উচ্চারণ নিম্নরূপ:
১. إِذَا جَاء نَصْرُ اللَّهِ وَالْفَتْحُ - ইযা জা- আনাসুরুল্লহি ওয়াল ফাতহু।
২. وَرَأَيْتَ النَّاسَ يَدْخُلُونَ فِي دِينِ اللَّهِ أَفْوَاجًا - ওয়ারা আইতান্না-সা ইয়াদখুলুউনা, ফি দ্বীনিল্লাহি আফওয়া-জা।
৩. فَسَبِّحْ بِحَمْدِ رَبِّكَ وَاسْتَغْفِرْهُ إِنَّهُ كَانَ تَوَّابًا - ফাসাব্বিহ বিহামদি রাব্বিকা ওয়াস্তাগ ফিরহ্; ইন্নাহু কা-না তাও-ওয়া-বা।
বাংলা অনুবাদ
১. যখন আসবে আল্লাহর সাহায্য ও বিজয়
২. এবং আপনি মানুষকে দলে দলে আল্লাহর দ্বীনে প্রবেশ করতে দেখবেন
৩. তখন আপনি আপনার পালনকর্তার পবিত্রতা বর্ণনা করুন এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করুন; নিশ্চয় তিনি তাওবা কবুলকারী।