নমরুদ শব্দের অর্থ খোদাদ্রোহী। এর আর একটি অর্থ হলো বাঘিনী। আরব কিংবদন্তী অনুযায়ী নমরুদকে ছোটবেলায় এক বাঘিনী স্তন্যপান করিয়েছিল। কথিত আছে ইডিপাসের মতো নমরুদ তার পিতাকে হত্যা করে নিজ মাতাকে বিয়ে করে। কুরআনের বর্ণনামতে, একটি মশা তার মস্তিষ্কে প্রবেশ করলে তার মৃত্যু হয়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ইব্রাহিম এর জীবনীতে নমরুদ বাদশাহর উল্লেখ পাওয়া যায়। নমরুদ ষড়যন্ত্র করে নবীকে হত্যার উদ্দেশ্যে আগুনে নিক্ষেপ করেছিল। পবিত্র কুরআনে নমরুদের নাম উল্লেখ নেই। তবে সুরা বাকারার ২৫৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে
তুমি কি সেই ব্যক্তির কথা ভেবে দেখনি যে ইব্রাহীমের সঙ্গে তর্ক করেছিল, যেহেতু আল্লাহ তাকে রাজ্য দিয়েছিলেন? ‘তখন সে বলল, আমার প্রতিপালক তিনি যিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান, সে বলল, আমিও তো জীবন দান করি এবং ও মৃত্যু ঘটাই।[২]
পবিত্র বাইবেলে আব্রাহাম (নবী ইব্রাহীম) ও নমরুদের সাথে সাক্ষাতের ঘটনার বর্ণনা নেই। যদিও কিছু ইহুদী ও মুসলিম ঐতিহ্য অনুসারে তাদের মধ্যে বিরোধ সংগঠিত হয়েছিল বলে বলা হয়েছে। কিছু গল্পে দুইজন চরম সংঘাতে রত হয়েছিল বলে বর্ণনা করা হয়েছে। এসব কাহিনিতে ইব্রাহীম একাত্মবাদের মহিমা বর্ণনাকারী এবং নমরুদ তার বিরোধীতাকারী এবং নিজেকে স্বয়ং ঈশ্বর বলে দাবী করে।[১] একই রকম বর্ণনা মধ্যযুগের ইহুদী ধর্মগুরুদের লেখা কাহিনিতে পাওয়া যায়।[৩] ইবরাহীম (আ.) এর সময়ে নমরুদ ছিল স্বেচ্ছাচারী এক শাসক। সে ইবরাহীমকে প্রতিমা ভেঙ্গে ফেলার অপরাধে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করেছিল। কিন্তু আল্লাহর কৃপায় ইবরাহীম নিরাপদে অগ্নিকুন্ড থেকে বের হয়ে আসতে সক্ষম হন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ইবরাহীম নিরাপদে অগ্নিকুন্ড থেকে বের হয়ে আসাতে নমরুদ প্রচন্ডভাবে ক্ষিপ্ত হয়। সে ইবরাহীমকে বলে,
তোমার ঈশ্বরের (আল্লাহ) যদি যথার্থই অস্তিত্ব থাকে, তবে তাকে আমার সাথে যুদ্ধ করার জন্য ডেকে আনো। আমি তোমার আল্লাহর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করছি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
আল্লাহর সাথে লড়াই করার জন্য নমরুদ এক বিশাল বাহিনী গঠন করলো। এই বাহিনী নিয়ে সে ইবরাহীমের কাছে গিয়ে আল্লাহকে তার সাথে লড়াই করার জন্য আহবান জানায়। সে আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করে এবং বলতে থাকে,
কোথায় তুমি হে ইবরাহীমের ঈশ্বর? এসো আমার সাথে যুদ্ধ করো।
আল্লাহ নমরুদের সাথে মোকাবেলা করার জন্য এক ঝাঁক "মশা" প্রেরণ করলেন। ক্ষুদ্র এই মশা বাহিনীর আক্রমণে নমরুদের বিশাল বাহিনী ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। নমরুদও এই মশাবাহিনীর আক্রমণে ভয়ে যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালায়। কিন্তু ঘটনাক্রমে একটি মশা তার নাক দিয়ে ঢুকে তার মস্তিষ্কতে গিয়ে অবস্থান নেয়। আল্লাহ তার মস্তিষ্কের অভ্যন্তরে মশাটিকে জীবিত রাখেন।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
মস্তিষ্কের ভিতরে অবস্থান নিয়ে মশাটি নমরুদকে সবসময় কামড়াতে থাকে। মস্তিষ্কে মশার কামড়ে অতিষ্ঠ হয়ে নমরুদ নিজের মাথায় নিজেই আঘাত করতে থাকে। কিন্তু যতই সে আঘাত করুক, মশা ততই তাকে কামড়াতে থাকে। নিজেকে নিজে আঘাত করতে করতে নমরুদ ক্লান্ত হয়ে পড়লো।
তাই সে তার একজন সৈনিককে ডেকে তাকে তার মাথায় আঘাত করতে বললো। কিন্তু মশার কামড় তাতে কোনো ক্রমেই কমে না। শেষে সৈনিকটি নমরুরদের মাথায় মুগুর দিয়ে আঘাত করলে মশা কিছু সময়ের জন্য কামড়ানো বন্ধ করলো।
মশা পরে আবার কামড়ানো শুরু করলে সৈনিকটি নমরুদের মাথায় আবার মুগুর দ্বারা আঘাত করলে মশা কিছু সময়ের জন্য কামড়ানো বন্ধ করে। এভাবে বারবার মশা কামড়ায় আর নমরুদকে মাথায় মুগুর দ্বারা আঘাত করতে হয়।
একদিন নমরুদের মাথায় মুগুর দ্বারা আঘাত করতে করতে সৈনিকটি নমরুদকে এত প্রচন্ডভাবে আঘাত করলো যে, তাতে নমরুদের মাথা ফেটে যায়। মাথা ফেটে গিয়ে নমরুদ মৃত্যুমুখে পতিত হয়।